জালালকে নিয়ে পোস্ট করে হামলার শিকার ডাকসুর আরেক ভিপি প্রার্থী
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১১:৩৩ AM , আপডেট: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০৪:২৮ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভিপি প্রার্থী ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের শিক্ষার্থী জালাল আহমদ ওরফে জ্বালাময়ী জালাল তার রুমমেট মো. রবিউল হককে জখম করেছেন। এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাকে কক্ষে অবরোধ করেন। এসময় আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে মারধর না করে জালালকে পুলিশে দেওয়ার আহ্বান জানানো এবং মারধরের ভিডিও ফেসবুক পোস্ট করায় ডাকসুর আরেক ভিপি প্রার্থীর ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে একদল শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। তবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দিবাগত রাতে রাত আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী হলেন- ডাকসু নির্বাচনের ভিপি প্রার্থী ও বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের এবং মাস্টার দা সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা যায়, মঙ্গলবার সাড়ে ১২টার দিকে জালাল ও রবিউলের কথা কাটাকাটি শুরু হলে এক পর্যায়ে জালালের আঘাতে রবিউল রক্তাক্ত হলে তাকে মেডিকেলে নেওয়া হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদের (জালাল-রবিউল) কক্ষের সামনে অবস্থান করলে জালাল দরজা আটকে নিজেকে আবদ্ধ রাখেন। এসময় জালালের আত্মহত্যার আশঙ্কা করে আবদুল ওয়াহেদ একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে মব না করে জালালকে উদ্ধার করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানান। এই পোস্ট তিনিই দিয়েছেন এমনটি টের পেয়ে এবং জালালকে রুম থেকে বের করে মারধরের সময় নিষেধ করা ও ভিডিও করে ফেসবুকে দেওয়ায় কিছু শিক্ষার্থী তার ওপর হামলা চালান। এছাড়া, তার মোবাইল কেড়ে নিয়ে তা থেকে ছবি-ভিডিও ডিলিট করেন।
সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসে আবদুল ওয়াহেদ বলেন, জালাল যদি সুইসাইড করে এর দায়ভার শিক্ষার্থীরা নেবেন কিনা? তারা রুমের বাইরে অবস্থান করছেন। প্রক্টর স্যার রুমের বাইরে আছেন। শাহবাগ থানা প্রশাসনের লোকও আছেন হল গেইটে। উনাকে রুম থেকে উদ্ধার করে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে আবদুল ওয়াহেদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ঘটনার পর আবদ্ধ রুমে আমি জালালের আত্মহত্যার আশঙ্কা করছিলাম, যার কারণে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলি যে, এরকম ঘটনা ঘটলে রুমের সামনে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের দায় নিতে হবে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও পুলিশের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা কথা দেয়, তার গায়ে হাত তোলা হবেনা। কিন্তু রুম থেকে বের হওয়ার পর তাকে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সামনেই তাকে প্রচণ্ড মারধর করা হয় এবং রক্তাক্ত করে ফেলে। সেসময় আমি তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করি যে, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হচ্ছে না। জালাল দোষী হলেও আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হোক, কিন্তু হামলা ও মারধর সমাধান নয়। তখন একদল শিক্ষার্থী আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় এবং জালালের ওপর হামলার ভিডিও ফেসবুক থেকে ডিলিট করতে বাধ্য করে। এসময় তারা আমার গায়েও হাত তুলে। এছাড়া, আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া মোবাইলটি থানা থেকে ১ ঘণ্টা পরে উদ্ধার করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমি জালালের উপর হামলাকারী ও আমার উপর হামলাকারীদের ঢাবি থেকে বহিষ্কারের এবং গ্রেফতারের দাবি জানাই। ঢাবিতে মব কালচার আর ফিরে না আসার জন্য ঢাবি প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। আমরা এর আগে দেখেছি, কীভাবে তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিলে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে।
এদিকে, এ ঘটনায় রাতেই শাহবাগ থানায় একটি মামলার আবেদন করেছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোঃ সিরাজুল ইসলাম। মামলার এজাহারে বলা হয়, জালাল আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-২০১৪ সেশনের শিক্ষার্থী। জালাল আহমদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-২০১৯ সেশনের শিক্ষার্থী মোঃ রবিউল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ৪৬২ নং রুমে থেকে লেখাপড়া করে আসছে। জালাল সিনিয়র শিক্ষার্থী হওয়ায় বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে শিক্ষার্থী মোঃ রবিউল হককে হলের রুমের ভেতর নানাভাবে হয়রানি করত এবং লেখাপড়া ও ঘুমের বিঘ্ন সৃষ্টি করত। রবিউল হক প্রতিবাদ করলে জালাল আহমদ তাকে মারপিট করতো এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করত। বিষয়টি শিক্ষার্থী রবিউল হক আমাদেরকে অবহিত করলে আমরা জালাল আহমদকে শাসন করেছি এবং তাকে হল ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেছি। ২৬ আগস্ট রাতে রবিউল হক ৪৬২ নং রুমের ভেতর ঘুমিয়ে পড়ে। সাড়ে ১২টার দিকে জালাল রুমের ভিতরে প্রবেশ করে বৈদ্যুতিক লাইট জ্বালায় এবং চেয়ার টানা হেঁচড়া করে বিকট শব্দ করতে শুরু করে। যার ফলে রবিউল হকের ঘুম ভেঙ্গে যায়।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে রুমমেটকে রক্তাক্ত করার ঘটনায় জালালের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
মামলা এজাহারে আরও বলা হয়, রবিউল জালালকে বলেন, ভাই সকালে আমি লাইব্রেরিতে যাবো আপনি একটু আস্তে শব্দ করেন। এতে আসামি জালাল আহমদ ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষার্থী রবিউল হকের সাথে তর্কবির্তক শুরু করে। তর্কবির্তকের একপর্যায়ে জালাল আহমদ রবিউল হককে কাঠের চেয়ার দিয়ে মাথা লক্ষ্য করে বারি মারে। রবিউল হক তার হাত দিয়ে কাঠের চেয়ারের বারি প্রতিহত করলেও কাঠের চেয়ারের আঘাত রবিউল হকের কপালে ফুলা জখম প্রাপ্ত হয়। পরবর্তীতে জালাল আহমদ পুরাতন টিউব লাইট দিয়ে রবিউল হককে পুনরায় মাথা লক্ষ্য করে আঘাত করে। রবিউল হক মাথা সরিয়ে নিলে উক্ত টিউব লাইটের আঘাত তার বুকের বাম পাশে লেগে টিউব লাইট ভেঙ্গে গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম হয়। পরবর্তীতে আসামি জালাল আহমদ পুনরায় ভাঙ্গা ও ধারালো টিউব লাইট দিয়ে রবিউল হককে আঘাত করলে রবিউল হক তার বাম হাত দিয়ে প্রতিহত করলে বাম হাতে কাটা রক্তাক্ত জখম হয়।
প্রসঙ্গত, রুমমেটকে রক্তাক্ত করার পর নিজেকে রুমে আবদ্ধ করে রাখেন ডাকসু নির্বাচনে ভিপি প্রার্থী জালাল আহমদ। এসময় হলের অন্য শিক্ষার্থীরা তার রুমের সামনে এসে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকে। এরপর দীর্ঘ সময় চেষ্টার পর রাত আড়াইটার দিকে জালারকে রুম বের করে পুলিশে সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে জালালকে হল থেকে বহিষ্কার করার ঘোষণা দেন প্রাধ্যক্ষ ড. মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ ধরনের নৃশংস কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে হল থেকে বহিষ্কার করা হল। তার ছাত্রত্ব বাতিলেরও ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া আজ রাতেই রমনা থানা পুলিশকে জানিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।
জালালের আঘাতে আহত রবিউল হক বলেন, জালাল রাত ১২টার পরে রুমে এসে লাইট অন করে এবং শব্দ করতে থাকে। ফলে আমার ঘুম ভেঙে যায়। তখন আমি বলি, সকালে আমাকে লাইব্রেরিতে যেতে হবে অযথা শব্দ করলে ঘুমে সমস্যা হচ্ছে। এতে সে রেগে গিয়ে আমাকে অবৈধ, বহিরাগত বলে। আমি প্রতিবাদ করলে আমাকে আঘাত করে জখম। পরে কোনোক্রমে আমি নিজেকে আত্মরক্ষা করি।
অন্যদিকে, জালাল আহমেদ তার ফেসবুকে নিজের আহত হওয়া ক্ষতচিহ্নের ছবি পোস্ট করে জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল থেকে অবৈধ ও বহিরাগত শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার দাবিতে উকিল নোটিশ পাঠানোর প্রাক্কালে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ৪৬২ নম্বর কক্ষে আজ রাত সাড়ে বারোটার দিকে আমাকে মেরেছে আমার রুমমেট রবিউল ইসলাম। সে গত কয়েক মাস ধরে অবৈধভাবে হলে অবস্থান করছে।