ঢাবিতে রুমমেটকে রক্তাক্ত করার ঘটনায় জালালের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

অভিযুক্ত জালাল আহমদ ও ভুক্তভোগী রবিউল হক
অভিযুক্ত জালাল আহমদ ও ভুক্তভোগী রবিউল হক  © সংগৃহীত ও সম্পাদিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভিপি প্রার্থী ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের টেলিভিশন এন্ড ফিল্ম বিভাগের শিক্ষার্থী জালাল আহমদ ওরফে জ্বালাময়ী জালাল তার রুমমেট মো. রবিউল হককে জখম করেছেন। আহত রবিউল হক ২০১৮-১৯ সেশনের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। বুধবার (২৭ আগস্ট) রাত পৌঁনে ১টার দিকে মুহসীন হলের ৪৬২ নাম্বার রুমে এই ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় রাতেই শাহবাগ থানায় একটি মামলার আবেদন করেছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোঃ সিরাজুল ইসলাম।

মামলার এজাহারে বলা হয়, জালাল আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-২০১৪ সেশনের শিক্ষার্থী। জালাল আহমদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-২০১৯ সেশনের শিক্ষার্থী মোঃ রবিউল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ৪৬২ নং রুমে থেকে লেখাপড়া করে আসছে। জালাল সিনিয়র শিক্ষার্থী হওয়ায় বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে শিক্ষার্থী মোঃ রবিউল হককে হলের রুমের ভিতর নানাভাবে হয়রানী করত এবং লেখাপড়া ও ঘুমের বিঘ্ন সৃষ্টি করত। রবিউল হক প্রতিবাদ করলে জালাল আহমদ তাকে মারপিট করতো এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করিতো। বিষয়টি শিক্ষার্থী রবিউল হক আমাদেরকে অবহিত করলে আমরা জালাল আহমদকে শাসন করেছি এবং তাকে হল ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেছি। ২৬ আগস্ট রাতে রবিউল হক ৪৬২ নং রুমের ভিতর ঘুমিয়ে পড়ে। সাড়ে ১২টার দিকে জালাল রুমের ভিতরে প্রবেশ করে বৈদ্যুতিক লাইট জ্বালায় এবং চেয়ার টানা হেচড়া করে বিকট শব্দ করতে শুরু করে। যার ফলে রবিউল হকের ঘুম ভেঙ্গে যায়।

আরও পড়ুন: আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ডাকসুর এক প্রার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

মামলা এজাহারে আরও বলা হয়, রবিউল জালালকে বলেন, ভাই সকালে আমি লাইব্রেরিতে যাবো আপনি একটু আস্তে শব্দ করেন। এতে আসামী জালাল আহমদ ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষার্থী রবিউল হকের সাথে তর্কবির্তক শুরু করে। তর্কবির্তকের একপর্যায়ে জালাল আহমদ রবিউল হককে কাঠের চেয়ার দিয়ে মাথা লক্ষ্য করে বারি মারে। রবিউল হক তার হাত দিয়ে কাঠের চেয়ারের বারি প্রতিহত করলেও কাঠের চেয়ারের আঘাত রবিউল হকের কপালে ফুলা জখম প্রাপ্ত হয়। পরবর্তীতে জালাল আহমদ পুরাতন টিউব লাইট দিয়ে রবিউল হককে পুনরায় মাথা লক্ষ্য করে আঘাত করে। রবিউল হক মাথা সরিয়ে নিলে উক্ত টিউব লাইটের আঘাত তার বুকের বাম পাশে লেগে টিউব লাইট ভেঙ্গে গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম হয়। পরবর্তীতে আসামী জালাল আহমদ পুনরায় ভাঙ্গা ও ধারালো টিউব লাইট দিয়ে রবিউল হককে আঘাত করলে রবিউল হক তার বাম হাত দিয়ে প্রতিহত করলে বাম হাতে কাটা রক্তাক্ত জখম হয়।

প্রসঙ্গত, রুমমেটকে রক্তাক্ত করার পর নিজেকে রুমে আবদ্ধ করে রাখেন ডাকসু নির্বাচনে ভিপি প্রার্থী জালাল আহমদ। এসময় হলের অন্য শিক্ষার্থীরা তার রুমের সামনে এসে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকে। এরপর দীর্ঘ সময় চেষ্টার পর রাত আড়াইটার দিকে জালারকে রুম বের করে পুলিশে সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে জালালকে হল থেকে বহিষ্কার করার ঘোষণা দেন প্রাধ্যক্ষ ড. মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ ধরনের নৃশংস কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে হল থেকে বহিষ্কার করা হল। তার ছাত্রত্ব বাতিলেরও ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া আজ রাতেই রমনা থানা পুলিশকে জানিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।

জালালের আঘাতে আহত রবিউল হক বলেন, জালাল রাত ১২টার পরে রুমে এসে লাইট অন করে এবং শব্দ করতে থাকে। ফলে আমার ঘুম ভেঙে যায়। তখন আমি বলি, সকালে আমাকে লাইব্রেরিতে যেতে হবে অযথা শব্দ করলে ঘুমে সমস্যা হচ্ছে। এতে সে রেগে গিয়ে আমাকে অবৈধ, বহিরাগত বলে। আমি প্রতিবাদ করলে আমাকে আঘাত করে জখম। পরে কোনোক্রমে আমি নিজেকে আত্মরক্ষা করি।

অন্যদিকে, জালাল আহমেদ তার ফেসবুকে নিজের আহত হ‌ওয়া ক্ষতচিহ্নের ছবি পোস্ট করে জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল থেকে অবৈধ ও বহিরাগত শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার দাবিতে উকিল নোটিশ পাঠানোর প্রাক্কালে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ৪৬২ নম্বর কক্ষে আজ রাত সাড়ে বারোটার দিকে আমাকে মেরেছে আমার রুমমেট রবিউল ইসলাম। সে গত কয়েক মাস ধরে অবৈধভাবে হলে অবস্থান করছে।

 


সর্বশেষ সংবাদ