ঢাবিতে গাঁজাকাণ্ড নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ ছাত্রদল নেতার, প্রতিবেদকের বক্তব্য
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৫, ০৩:৪০ PM , আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৫, ০২:৪৪ PM
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসে 'ঢাবিতে গাঁজা কান্ডে ছাত্রদল কর্মী আটক, ছাড়াতে প্রক্টর অফিসে নেতা!' শিরোনাম প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. মাহদীজ্জামান জ্যোতি। প্রতিবাদলিপিতে তিনি বলেন, ‘১৭ই আগস্ট, ২০২৫, ১টা ৩৭ প্রকাশিত সংবাদে ফটাকার্ডে আমার ছবি যুক্ত করে বিভ্রান্তি ছাড়ানো হয়েছে। নিউজে উল্লেখ করা হয়, স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাহদীজ্জামান জ্যোতি আটক এই শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে আনতেই প্রক্টর অফিসে গিয়েছিল। তখন তিনি মুখে মাক্স পরা ছিলেন। এ সময় তিনি সহকারী প্রক্টরের রুমে ১০ মিনিটের মতো অবস্থান করেছিলেন। তবে মাহদীজ্জামান জ্যোতি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘এ ঘটনায় প্রশাসনের সাথে আমার কোনো কথা হয়নি’। এদিকে, প্রশাসনও বলছে তাদের সাথে কোন রাজনৈতিক দলের নেতার কথা হয়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘১৬ই আগস্ট, ২০২৫। বিকালের দিকে আমি সেন্ট্রাল লাইব্রেরী থেকে হলের দিকে যাচ্ছিলাম। আমার কাধে তখন ব্যাগ ছিলো। কয়েকদিন ধরে ঠান্ডা-জ্বরে ভুগতেছি বিধায় মাস্ক পড়ে চলাচল করতেছিলাম। আমি যখন প্রক্টর অফিসের সামনে আসলাম তখন আমার পরিচিত কয়েকজন জুনিয়রকে দেখে আমি দাঁড়ায়। ওদের সাথে কথা বলে, আমি যখন বিষয়টা জানতে পারি তখন আমি স্থান ত্যাগ করে হলে চলে আসি। প্রসাশনের সাথে আমি একটি বাক্য বিনিময় পর্যন্ত হয় নাই। প্রসাশনও বিষয়টি নিশ্চিত করার পরও উক্ত নিউজে আমার ছবি যুক্ত করে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদের প্রতিবাদ জানাই।’
প্রতিবেদকের বক্তব্য: মাহদীজ্জামান জ্যোতি প্রক্টর অফিসে প্রবেশ করেছিল এবং প্রশাসনের রুমে কিছুক্ষণ অবস্থান করেছিলেন। এই বিষয়টি প্রতক্ষ্যদর্শী অন্তত ৩ জন প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন। শুধু তাই নয়, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের এক স্টাফ রিপোর্টারও জ্যেতিকে সেখানে দেখেছেন। প্রতিবাদলিপিতে তিনি যে সেন্ট্রাল লাইব্রেরি থেকে হলের দিকে যাচ্ছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন, তা সত্য নয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে আসা বেশ কয়েক মিনিটের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করেও এর সত্যতা পাওয়া গেছে; যা অন্যান্য সাংবাদিকরাও পেয়েছেন বলে জানা যায়।
ফুটেজ চেক করে দেখা গেছে, জ্যোতি সন্ধ্যা ৬টা ৮ মিনিটের দিকে বাইকে করে প্রক্টর অফিসের সামনে আসেন এবং ৬টা ৯ মিনিটে ভেতরে প্রবেশ করেন। পরবর্তী ৬টা ২৪ মিনিটে বের হয়ে সেন্ট্রাল লাইব্রেরির দিকে যান। অর্থাৎ তিনি ১৫ মিনিটের বেশি প্রক্টর অফিসের ভেতরে অবস্থান করেছেন। যদিও তিনি সামাজিকমাধ্যমে দাবি করেছেন, তিনি সেন্ট্রাল লাইব্রেরি থেকে হলের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন প্রক্টর অফিসের দিকে ছোটভাইদের দেখে সেখানে দাড়ান এবং বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পেরে সেই স্থান ত্যাগ করেন। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, জ্যোতি সেন্ট্রাল লাইব্রেরি থেকে নয় বরং ডাকসু ভবন ও কলা ভবনের মাঝামাঝি রাস্তা দিয়ে বাইকে করে প্রক্টর অফিসের উদ্দেশ্যেই আসেন, থামেন এবং ভেতরে ঢোকেন। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে ৬ টা ৩৮ মিনিটে আরেক দফায় প্রক্টর অফিসের সামনে আসেন জ্যোতি। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর চলে যান তিনি।
সংবাদ প্রকাশের আগে-পরে প্রক্টর অফিসে না ঢোকার বিষয়টি অস্বীকার করলেও এক পর্যায়ে তিনি তার কথা থেকে সরে এসে স্বীকার করেন, তিনি প্রক্টর অফিসের ভেতরে-বাইরে মিলে ৫ মিনিটের মতো অবস্থান করছিলেন। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিবেদককে, জ্যোতি এ-ও জানান, 'নিউজ নিয়ে তার তেমন অভিযোগ নেই, তবে ফটোকার্ডে তার ছবি ব্যবহার করাই হচ্ছে মূল সমস্যা।' অর্থ্যাৎ তার নামে প্রকাশিত সংবাদে সমস্যা নেই, কিন্তু ফটোকার্ডে (ছবি থাকায়) সমস্যা; কেন তিনি এমনটা বলছেন, এটা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিবেদকের কাছে বোধগম্য নয়।
তাছাড়া প্রতিবাদলিপিতে উল্লেখ করেন তিনি লিখেন, 'স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাহদীজ্জামান জ্যোতি আটক এই শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে আনতেই প্রক্টর অফিসে গিয়েছিল।' যদিও এ ধরনের কথা সংবাদে নেই; বরং লেখা, 'স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের নতুন কমিটির সদস্য সচিব মো. মাহদীজ্জামান জ্যোতি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকা কর্মীকে ছাড়াতে প্রক্টর অফিসে গিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।' এখানে অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে সিসিটিভি ফুটেজের বাইরেও ব্ষিয়টি আরও কয়েকদফায় তথ্য যাচাই করে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস অফিস। তাতেও উঠে আসে জ্যোতির প্রক্টর অফিসে যাওয়ার তথ্য। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুরো ঘটনা অবজার্ভ করা এক হাউজ টিউটর (শিক্ষক) জানান, গাজাকাণ্ডে ধরা পরার পর ওই ছাত্র (ছাত্রদল কর্মী) অনেক নেতাকেই কল দিয়েছিলেন; কিন্তু কেউ তাকে ছাড়াতে আসতে রাজি হননি। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, ছাত্রদল নেতা জ্যোতি এসেছেন।