চবিতে চাচাকে বাবা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি

মাহমুদুল হাসান চৌধুরী (শিমুল)
মাহমুদুল হাসান চৌধুরী (শিমুল)  © সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) চাচাকে বাবা আর চাচিকে মা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আইন বিভাগে (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) ভর্তি হয়েছেন মাহমুদুল হাসান চৌধুরী (শিমুল)। বিষয়টি জানাজানি হলেও এখনো করছেন ক্লাস, অবৈধভাবে থাকছেন হলে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, শিমুল এনআইডি ও অ্যাকাডেমিক কাগজপত্রে তার প্রকৃত পিতা এমদাদুল ইসলাম চৌধুরীর পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধা চাচা মফিজুল ইসলাম চৌধুরী এবং চাচি শামসুন্নাহার চৌধুরীর নাম ব্যবহার করেন। এই মিথ্যা পরিচয়ের ভিত্তিতে তিনি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় (FFQ1) মেধা তালিকায় ৩৮তম হয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন যেখানে সাধারণ মেধায় তার অবস্থান ছিল ৪৬৫৩তম। 

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার মুড়িয়াউক গ্রামের মফিজুল ইসলাম চৌধুরী একজন স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধা (বেসামরিক গেজেট নং ১০৬৫)। তবে তিনি শিমুলের পিতা নন, বরং তার চাচা। 

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, তার চাচা মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলাম মারা গেছেন। বর্তমানে ওয়ারিশ হিসেবে তার স্ত্রী শামসুন্নাহার ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ওয়েবসাইট ঘেঁটে ওয়ারিশ হিসেবে শিমুলের কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর সে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ ‘সিক্সটি নাইন’-এর রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল বলেও জানা গেছে। 

সে নিয়মিত ক্লাস করায় সহপাঠীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এক সহপাঠী জানান, সে আজকেও ক্লাস করেছে। শুধু ক্লাস না, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলে অন্য আরেকজনের সিটে থাকে। তবে শিমুলের রুমমেটের সাথে কথা বলে জানা যায় শিমুল অন্য আরেকজনের সিটে থাকতো। কিন্তু অল্প কিছুদিন হলো সিটের আসল শিক্ষার্থী চলে আসায় সে এখন আর থাকেনা।

এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রকিবা নবী বলেন, ইউনিভার্সিটি খোলার পরে তার থেকে সব কাগজপত্র নিয়ে সেগুলো আমি একাডেমিক কমিটিতে উত্থাপন করেছি। একাডেমিক কমিটিতে এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একাডেমিক কমিটির তো কোনো শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল করার ক্ষমতা নাই। ইউনিভার্সিটি ডিসিপ্লিনারি কমিটি যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেয় সেক্ষেত্রে সেটা আমরা মেনে নিবো।

জানতে চাইলে শিমুল জানান, বিভাগ থেকে তাকে ডাকা হয়েছিলো কথা বলার জন্য। তবে সভাপতি মিটিংয়ে থাকায় দেখা হয়নি পরে ক্লাসে যুক্ত হয়েছি। 

শিমুল আরও বলেন,  ছাত্রলীগ করে হলে থেকেও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ওই শিক্ষার্থীর বিষয়টি ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে এসেছে। সাধারণত একটা এজেন্ডা দিয়ে ডিসিপ্লিনারি কমিটির মিটিং হয় না। তবে আমি বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সাথে কথা বলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।


সর্বশেষ সংবাদ