দেশের সর্ববৃহৎ সমাবর্তন চবিতে, ডি-লিট ডিগ্রি পাচ্ছেন ড. ইউনূস
- চবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫, ১১:৩৫ AM , আপডেট: ১৪ মে ২০২৫, ০৩:৫৪ AM
আগামী ১৪ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠান। এ সমাবর্তনে ২০১১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা প্রায় ২৩ হাজার শিক্ষার্থী সনদ পাবেন। পাশাপাশি ২২ জনকে পিএইচডি ও ১৭ জনকে এমফিল ডিগ্রি প্রদান করা হবে। এতে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সমাবর্তনে তাকে ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট) ডিগ্রি দেওয়া হবে।
সোমবার (১২ মে) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে দেখা যায়, অনুষ্ঠিতব্য দেশের সর্ববৃহৎ এ সমাবর্তনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে সাজসাজ রব বিরাজ করছে। সমাবর্তী অনেক শিক্ষার্থীকেই সমাবর্তন গাউন ও টুপি পরে পরিবার-পরিজন এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঘোরাঘুরির পাশাপাশি ছবি তুলছেন। দীর্ঘদিন পর দেখা হয়ে একে অপরের সঙ্গে মেতে উঠছেন খোঁশগল্পে। এ যেন এক বৃহৎ মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
এদিকে, ক্যাম্পাসের প্রতিটি হল, অনুষদ ও প্রশাসনিক ভবন সাজানো হয়েছে নতুনরূপে। সর্বত্র যেন লেগেছে সংস্কারের ছোঁয়া। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশাল এই আয়োজনে খরচ হবে প্রায় ১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের ফি থেকে আয়ের সাড়ে ৬ কোটি টাকা এবং বাকি অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি ও স্পন্সরদের কাছ থেকে নেওয়া।
কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, সমাবর্তন সফল করতে ১৯টি উপ–কমিটি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ তাদের সাবেকদের যাবতীয় বিষয় দেখভাল করছেন। ইতোমধ্যে সমাবর্তনের অনুষ্ঠানস্থল কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ প্রস্তুত করা হয়েছে এবং তৈরি করা হয়েছে তিনটি বিশাল প্যান্ডেল। যেখানে একসাথে বসতে পারবেন ৩০ হাজার শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে পারবেন ইউজিসি সদস্যরা
দীর্ঘ ৯ বছর পর সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে অনুভূতি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী উম্মে সালমা নিঝুম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অ্যাকাডেমিক জীবনের একটি সুন্দর সমাপ্তি সমাবর্তন। দীর্ঘ ৯ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন হচ্ছে। আমি একজন সমাবর্তী হিসেবে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। বর্তমান প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই, তারা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, আজ যখন পিছন ফিরে দেখি, তখন মনে হয় একদম প্রথম দিনের সেই অচেনা ক্যাম্পাস, নতুন বন্ধুদের সাথে প্রথম পরিচয়, সেই উদ্ভূত উত্তেজনা সবই যেন এক সুন্দর স্মৃতি হয়ে গেছে। কল্পনায় বহুবার দেখা সেই দিনটা অবশেষে সত্যি বাস্তবে এসে ধরা দিতে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের বাইজিদ বলেন, ড. ইউনূসের মত একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের কথা শুনতে পারবো সরাসরি, এটা জানতে পেরে ভালো লাগছে। উনার অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য আমাদের পরবর্তী জীবনে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে আশা করছি।
আরও পড়ুন: ‘মব’ সৃষ্টি করে সাংবাদিকদের ওপর হামলাচেষ্টা ঢাবির একদল শিক্ষার্থীর
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহইয়া আখতার বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার পর দেখলাম, বিশ্ববিদ্যালয় তার মূল লক্ষ্যে কাজ করছে না। সমাবর্তন হওয়াটাতো অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারেরই একটি অংশ। কিন্তু দেখলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর সমাবর্তন হয়েছে মাত্র চারটি। যা শিক্ষক হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জার। পরবর্তীতে এটা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাথে কথা বললাম, স্যারকে বিষয়টি জানালাম, তিনি রাজি হলেন।
তিনি আরও বলেন, আমি ওয়াদা করব না যে আমি একবছরের মাথায় একটি সমাবর্তন করব। তবে অনিয়ম আমরা সহ্য করব না। আমরা ধীরে ধীরে একটা নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরে আসবো। আমরা এখানে ছাত্রদেরকে সেবা দিতে এসেছি, তাদের অধিকার তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। সেজন্য আমরা বিভিন্নরকম উদ্যোগ নিচ্ছি। তারই অংশ এই সমাবর্তন। আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন, আমরা সুন্দর একটি সমাবর্তন আয়োজন করতে পারবো, যা দেশের ইতিহাসে এতবড় সমাবর্তন আগে হয়নি।
সমাবর্তনে অংশ নিতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের মানতে হবে যে-সব নির্দেশনা:
বুধবার দুপুর ১টার মধ্যেই অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে হবে। বিলম্ব হলে কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। মোবাইল ফোন ব্যতীত কোনো কিছুই সাথে নেওয়া যাবে না। জরুরি প্রয়োজনে মেডিক্যাল টিম, আইসিইউ এবং ওয়াশরুমের ব্যবস্থা থাকবে। অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ বের হতে পারবেন না। বৃদ্ধ, নবজাতক ও শিশুদের না আনার বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়েছে। ওইদিন সকাল ৬টা থেকে শহরের নির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে ১০০টি বাস সমাবর্তীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে আসবে। সমাবর্তন শেষে এগুলো আবার শহরে ফিরে যাবে। এছাড়া ক্যাম্পাসের এক নম্বর গেট এলাকা থেকে শাটল বাস সার্ভিস রাখা হবে। এর বাইরে কোনো গাড়ি সেদিন ওই রুটে চলাচল করতে পারবে না। শাটলবাসে অভিভাবকরাও চড়তে পারবেন। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি সাথে আনলে ব্যক্তিগত ড্রাইভার নিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কেননা ১ নম্বর গেট থেকে কোনো গাড়ি ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
আরও পড়ুন: ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে সিআইসিজি প্রধানের বৈঠক: গুরত্ব পাঠ্যপুস্তক অনুবাদে
বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য জিরো পয়েন্ট, শহিদ মিনার, জারুলতলা, সায়েন্স ফ্যাকাল্টিসহ ৫টি পয়েন্টে এলইডি স্ক্রিনে অনুষ্ঠান দেখানো হবে। বিটিভিতে পুরো অনুষ্ঠান লাইভ সম্প্রচার হবে। ক্যাম্পাসের খাবার হোটেল এবং ক্যান্টিনগুলোতে পর্যাপ্ত খাবার রান্নার নির্দেশনা দিয়েছে চবি কর্তৃপক্ষ। তবে ড. ইউনূস যেই রুটে যাতায়াত করবে সেই রুটের হোটেলগুলো দুপুর ১২টার পর বন্ধ করে দেওয়া হবে। এছাড়া আগামীকাল বিকেল ৩টা থেকে পরদিন অনুষ্ঠান শুরু হওয়া পর্যন্ত সমাবর্তন স্থলে সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ নিষেধ। সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীরা অনুষ্ঠান শেষে গাউন জমা দিয়ে নিজ নিজ বিভাগ থেকে সনদ ও গিফট গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া সমাবর্তন উপলক্ষ্যে চবির ঐতিহ্যবাহী শাটল ট্রেন রঙিন সাজে সাজানো হতে পারে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠা হয়৷ এরপর ১৯৯৪ সালে প্রথম সমাবর্তন, ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয়, ২০০৮ সালে তৃতীয় এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।