চবি নারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি
নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা নারী হিসেবে আমাদের লজ্জিত করেছে
- চবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫, ০৬:২২ PM , আপডেট: ২২ মে ২০২৫, ০১:৩০ AM
নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একদল নারী শিক্ষক-শিক্ষার্থী। তারা বলছেন, নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা নারীদেরই লজ্জিত করেছে। ম্যারিটাল রেইপের আইন পারিবারিক ব্যবস্থা ধ্বংসের এক চক্রান্তের নাম। এ আইন নারী-পুরুষের সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈবাহিক সম্পর্কের জন্য অশনিসংকেত। সংস্কার কমিশনে শব্দের লুকোচুরিতে ট্রান্সউইমেনকেও নারী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের ষড়যন্ত্র চলছে। তাছাড়া, তারা পতিতাবৃত্তিকে শ্রমের স্বীকৃতির সুপারিশেরও ঘোর বিরোধিতা করছেন।
বুধবার (২১ মে) দুপুর আড়াইটায় চবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাতিলের দাবি জানান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম বলেন, এই নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা আমাদের নারী হিসেবে লজ্জিত করেছে। ম্যারিটাল রেইপের আইন পারিবারিক ব্যবস্থা ধ্বংসের এক চক্রান্তের নাম। এই আইন নারী-পুরুষের সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈবাহিক সম্পর্কের জন্য অশনিসংকেত। একদিকে ম্যারিটাল রেইপের আইন করবেন, অন্যদিকে পতিতাবৃত্তির স্বীকৃতি দিবেন - এটা তো সরাসরি পারিবারিক ব্যবস্থা ধ্বংসের রোডম্যাপ। এই সুপারিশমালা বাস্তবায়িত হলে নারীরা বরং আরো বেশি সমস্যার সম্মুখীন হবে।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল আদন নুসরাত বলেন, নারী সংস্কার কমিশন উত্তরাধিকার আইনে ধর্মীয় আইনের পাশাপাশি আলাদা সিভিল ল চাচ্ছেন। একই পরিবারের দুইজন সন্তানের মাঝে একজন সিভিল ল আর আরেকজন ইসলামি আইনে সম্পদের ভাগ চাইলে আপনি কীভাবে সমাধান করবেন? যে দেশে প্রচলিত আইনে নারী তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার চাইতে গেলে নেগেটিভলি নেওয়া হয়, প্রপার ইমপ্লিমেন্টেশন নেই সেদেশে এই ধরনের ধ্বংসাত্মক আইন কেন? আমরা বাংলাদেশের নারীরা কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক সম্পদের উত্তরাধিকার চাই। আমাদের জন্য এটাই নিশ্চিত করুন। ইসলামি উত্তরাধিকার আইনের সঠিক প্রয়োগই জরুরি মনে করছি।
আরও পড়ুন: নারীবিষয়ক কমিশন বাতিলের দাবি নিয়ে রাবিতে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে ছাত্রীসংস্থা
সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী নওশিন নাওয়াল ফাতিমা বলেন, সংস্কার কমিশনে শব্দের লুকোচুরিতে ট্রান্সউইমেনকেও নারী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের ষড়যন্ত্র চলছে। সম্প্রতি মৈত্রী যাত্রার আড়ালে এসব ট্রান্সজেন্ডারকে আমরা সক্রিয় হতে দেখেছি। ট্রান্সজেন্ডারদের স্বীকৃতি নারীর প্রতি চরম অবমাননার শামিল। জুলাইয়ের বাংলাদেশে এমন কিছু বাস্তবায়ন আমাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব না।
দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামসুন্নাহার মিতুল বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের এমন একটি সমাজের স্বপ্ন দেখা উচিত, যেখানে নারী ও পুরুষের মধ্যে প্রকৃত ইনসাফ বিদ্যমান থাকবে। কিন্তু, উত্তরাধিকার আইনে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিকতা, যৌনকর্মীদের শ্রমিক স্বীকৃতি প্রদান, ম্যারিটাল রেইপ আইন, ট্রান্সজেন্ডার নারীদের স্বীকৃতির কৌশল অবলম্বন প্রস্তাবনা বাঙালি মুসলিমদের মূল্যবোধ ও চিন্তার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। তাদের এই প্রস্তাবিত মডেল কি আমাদের দেশের ট্র্যাডিশন, কালচার, ফেইথ, সোশ্যাল ভ্যালু, মোরালিটিটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ? এক্ষেত্রে তাদের কোনো ডেটা বা রিসার্চ ফাইন্ডিংস আছে কী?
আরও পড়ুন: ছাত্রসংসদ নির্বাচন ছাড়া কোনো জাতীয় নির্বাচন নয়: বাকের
তিনি আরো বলেন, পতিতাবৃত্তির স্বীকৃতি আমাদের সমাজ ও পরিবার ব্যবস্থাকে ভঙ্গুর করে তুলবে। আপনি আপনার মা বা মেয়ের পতিতাবৃত্তিতে যুক্ত হওয়া সম্মানজনক মনে না করলে কেন এর স্বীকৃতি চাচ্ছেন? পতিতাদের বড় অংশই অনিচ্ছায় বিক্রি হয়ে এই পেশায় আসে। এদের মধ্যে একটা বড় অংশ আবার অপ্রাপ্তবয়স্ক। বাংলাদেশে যৌনকর্মীর চেয়ে মাদকাসক্তের সংখ্যা বেশি। মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হলে যৌনকর্মীদের পুনর্বাসন কেন সম্ভব নয়?