রাবিতে ‘সাংবিধানিক অধিকার ও প্রতিকার’ বিষয়ক সেমিনার

রাবিতে সেমিনার
রাবিতে সেমিনার  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন অনুষদের ‘ডিন’স লেকচার সিরিজ অন কন্টেম্পোরারি লিগ্যাল ইস্যুজ’-এর আওতায় ‘সাংবিধানিক অধিকার ও প্রতিকার: বাংলাদেশের সংস্কার কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ সিনেট ভবনে এ সেমিনারের আয়োজন করে আইন অনুষদ। এতে সভাপতিত্ব করেন আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক আ.ন.ম. ওয়াহিদ।

সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ও অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ একরামুল হক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, “সংবিধান কেবল একটি আইনি দলিল নয়, এটি একটি জাতির আত্মপরিচয়ের দলিল। সংবিধান বুঝতে হলে কেবল আইন নয়, সমাজ, ইতিহাস ও দর্শনের জ্ঞানও জরুরি। অনেক দেশে লিখিত সংবিধান না থাকলেও সেখানে সুশাসন আছে। অথচ আমাদের দেশে লিখিত সংবিধান থাকলেও বারবার নাগরিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। আইনবিদরাই কেবল আইনের বাহক—এমন ধারণা ভুল। সচেতনতা প্রতিটি নাগরিকের অধিকার।”

অধ্যাপক মুহাম্মদ একরামুল হক বলেন, “রাষ্ট্রের একটি মৌলিক দায়িত্ব হলো নাগরিকদের তাদের সাংবিধানিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা। প্রতিটি নাগরিকের জানা উচিত সংবিধান তাকে কী কী অধিকার দিয়েছে এবং সেগুলো দৈনন্দিন জীবনে কীভাবে প্রয়োগ হয়। এই সচেতনতা না থাকলে নাগরিকরা নিজেদের অধিকারের হরণ সম্পর্কে বুঝতেই পারে না।”

তিনি আরও বলেন, “যদি রাষ্ট্র নাগরিকদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার সম্পর্কে শিক্ষিত করতে পারে, তবে জনগণ নিজেরাই বুঝতে পারবে—রাষ্ট্রের কোন নীতি বা সিদ্ধান্ত তাদের অধিকার লঙ্ঘন করছে। এই সচেতনতা ছাড়া গণতন্ত্র শুধুই তাত্ত্বিক থাকে, বাস্তব রূপ পায় না। সংবিধান কেবল আইনবিদ কিংবা শাসকদের বিষয় নয়, এটি প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের জানার বিষয়।”

প্রধান বক্তা তার আলোচনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব, মৌলিক অধিকার ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির পার্থক্য, বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং গণতন্ত্রের বিকাশে আইনি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।

সেমিনারের সমাপনী বক্তব্যে আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক আ.ন.ম. ওয়াহিদ বলেন, “আজকের এই আয়োজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংবিধান বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির একটি আন্তরিক প্রচেষ্টা। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন সংবিধান, আইনের শাসন ও মৌলিক অধিকারের বিষয়ে সম্যক জ্ঞান অর্জন করে, সেই লক্ষ্যেই এই আয়োজন। সকল বক্তা ও অংশগ্রহণকারীদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”

সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাঈদা আঞ্জু এবং আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাহাল উদ্দিন। শেষে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন, যেখানে সংবিধান বিষয়ক বিভিন্ন জিজ্ঞাসার উত্তর দেন বক্তারা।


সর্বশেষ সংবাদ