ডাকসু গঠনতন্ত্রের খসড়া প্রস্তুত, চূড়ান্ত হতে পারে আগামী সপ্তাহে

ডাকসু ভবন ও ঢাবি লোগো
ডাকসু ভবন ও ঢাবি লোগো  © টিডিসি সম্পাদিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের জন্য গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মতামত নিয়ে প্রথমে একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। ওই খসড়া ছাত্র সংগঠনগুলোকে দেওয়া হচ্ছে এখন। তাদের আরও মতামতের ভিত্তিতে খসড়াটিতে সংযোজন-বিয়োজন করা হতে পারে। আগামী ২৫ মার্চ সিন্ডিকেটের সভায় এটি চূড়ান্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 

ছাত্র সংগঠনগুলো ও প্রশাসনের সূত্রগুলো বলছে, ইতিমধ্যে তৈরি হওয়া খসড়া ফের ছাত্র সংগঠনগুলো দেওয়া হয়েছে। তাদের মতামত পেলে এটি সিন্ডিকেটে পাস করা হবে। গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত হলে নির্বাচন কমিশন গঠনসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শুরু হবে। এরপর কয়েকমাসের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া সম্ভব বলে কর্তৃপক্ষ মনে করছে। সেক্ষেত্রে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে এ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এ নির্বাচনের সময় নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে আগে থেকে মতবিরোধ রয়েছে। 

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, ইসলামী ছাত্র শিবির এবং বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীসহ কয়েকটি সংগঠন ন্যূনতম সংস্কারশেষে দ্রুত নির্বাচনের কথা আগে থেকেই বলে আসছে। তবে ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্টসহ কয়েকটি সংগঠন সিন্ডিকেট থেকে আওয়ামীপন্থীদের এবং গঠনতন্ত্র সংশোধনের পর নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে।

আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচন করতে চাই, এতে কোনো সন্দেহ নেই: ঢাবি ভিসি

সেই ধারাবাহিকতায় গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি এবং অংশীজনদের ধারাবাহিকভাবে মতামত ও প্রস্তাবনা নেওয়ায় নির্বাচনে বেশি বেগ পেতে হবে না বলে আশা কর্তৃপক্ষের। কারণ এ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় সংগঠনগুলোর নেতারা তাদের মতামত জানান। 

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন সফলভাবে আয়োজনের বিষয়ে পরামর্শদান, নির্বাচনের আচরণবিধি প্রণয়ন বা সংশোধন এবং ডাকসু ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র সংশোধন বা পরিমার্জন করার বিষয়ে পৃথক ৩টি কমিটি গঠন করা হয়। এ বিষয়ে পরামর্শদানের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশাকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

এর আগে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধি প্রণয়ন বা সংশোধনের জন্য প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদকে আহবায়ক করে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া ডাকসু ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র সংশোধন বা পরিমার্জন করার বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকরামুল হককে আহ্বায়ক করে পৃথক একটি কমিটি গঠন করা হয়। 

কমিটি বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এবং সকল শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রস্তাবনা চেয়েছিল। তার আলোকে বেশকিছু প্রস্তাবনা পেয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেগুলো বিশ্লেষণ করে গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এটি আগামী ২৫ মার্চ সিন্ডিকেটে পাস হলে ডাকসু নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। ইতিমধ্যে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন জুলাইয়ের পরে করার পক্ষে মতামত দিয়েছেন বিভিন্ন হলের প্রভোস্টরা। নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংজ্ঞাও দ্রুত নির্ধারণের পক্ষে মত দেন তারা।

গত ৫ অক্টোবর দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির সংস্কার করে ছাত্র সংসদভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি করার আগ্রহ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন। এক সংলাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের মুখপাত্ররা রাজনীতির বিষয়ে নিজ দলের বিভিন্ন মতামত তুলে ধরেন।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাবি শাখার একাংশের (মার্ক্সবাদী) সভাপতি সাদিকুর ইসলাম সাদিক বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমাদের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজ করছেন। তিনি ভালো বলতে পারবেন। এ বিষয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা গঠনতন্ত্রের অগণতান্ত্রিক ধারা বাদ দিতে বলেছিলাম। ভিসির ক্ষমতা কমানোর কথাও বলেছি। তার ক্ষমতা কিছুটা কমানো হয়েছে। খসড়া পুরোটা পড়ে আমরা নিজেরা বসে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মতামত জানাব।’

গঠনতন্ত্রের একটি কপি প্রক্টর অফিস থেকে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে জানিয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসেদের ঢাবি শাখার আহবায়ক আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমার এখনও যাওয়া হয়নি অফিসে। গঠনতন্ত্রে কী আছে বা কোন বিষয়ে আমাদের অবস্থান কী, এটি নিয়ে আমরা দলের সঙ্গে আলোচনায় বসবো। আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের অবস্থান তুলে ধরব। যেহেতু ড্রাফট কপি এখনও হাতে পাইনি, তাই এখন এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’ 

ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন যোগাযোগ করা হয়নি। করা হলে চূড়ান্ত সংস্কার প্রস্তাবনা দেখে আমরা প্রতিক্রিয়া জানাব।

আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে আল্টিমেটাম

ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, সত্যি কথা বলতে কি, আমি এখনও ওটা পড়ার সুযোগ পায়নি। তবে আমাদের সংগঠনের লোকজন পড়ছে, তাদের কাছে এবং অন্যান্য সংগঠনের লোকজনের কাছে যেটা শুনলাম, মৌলিক যে দাবিটা ছিল সভাপতির ক্ষমতা কমানো। সেই দাবির ব্যাপারেই আসলে তারা (বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন) একমত নন। সভাপতির যে ক্ষমতা, সেই ক্ষমতাই অক্ষত রেখে দিয়েছে। তো আসলে এ থেকেই বুঝা যায় যে, তারা আসলে কোন রকম গঠনমূলক পরিবর্তনের ব্যাপারে আগ্রহী নয়। 

ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন খান বলেন, “আমাদের কাছে যে সংশোধনী প্রস্তাবনা এসেছে, তাতে লক্ষ্য করেছি যে শুধু আমাদের প্রস্তাবনাই নয়, অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোর দেওয়া প্রস্তাবনাগুলোরও খুব কমই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বিশেষ করে, সভাপতির ক্ষমতা কিছুটা কমানো হলেও, যে অংশটি আমরা কমানোর দাবি করেছিলাম, তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে আমি মনে করি, আমাদের দাবি অনুযায়ী সংস্কার পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি, এবং এ বিষয়ে আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। সার্বিকভাবে আমরা যে সংস্কার চেয়েছিলাম, তা প্রস্তাবনায় যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি।”

ডাকসু গঠনতন্ত্রের খসড়া তৈরি হয়েছে জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এখন এর একটা কপি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের মতামত চেয়ে পুনরায় তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এরপরই এটি সিন্ডিকেটে উঠবে। সিন্ডিকেটে পাস হলে এটি চূড়ান্ত হতে পারে। 


সর্বশেষ সংবাদ