জাতীয় কবির সম্মানার্থে ঢাবিতে নজরুল কর্নারের ভাড়া নেয়া হয় ১ টাকা

নজরুল কর্নার
নজরুল কর্নার  © টিডিসি ফটো

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতির প্রতি সম্মানার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে অবস্থিত কবির সমাধিস্থলের ভেতরে ‘নজরুল কর্নারের’ মাসিক ভাড়া ১ টাকা করে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কবি নজরুল ইন্সটিটিউটের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানটি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে কার্যক্রম পরিচালনা করে। 

মাসিক ১ টাকা ভাড়ার বিষয়টি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী এস্টেট ম্যানেজার (মার্কেট শাখা) একেএম আতিকুল ইসলাম। 

আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের জাতীয় কবির স্মৃতির প্রতি সম্মান রেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নামমাত্র ১ টাকা মাসিক ভাড়া নেয় নজরুল কর্নার স্থাপনের জন্য।

সমাধিসৌধে প্রবেশের পর হাতের বাম পাশে অবস্থিত নজরুল কর্নারটিতে দ্রোহের কবির পঙক্তি লেখা রয়েছে। ‘মানুষ’ কবিতার প্রথম চার লাইন সেখানে উল্লেখ আছে—

“গাহি সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান, 
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি, 
সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।”

আজ মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) নজরুল কর্নারে সশরীরে গিয়ে দেখা যায়, সেটি বন্ধ রয়েছে। কর্নারের সম্মুখভাগে পুলক রায় নাম সম্বলিত একটি মোবাইল নম্বর ঝুলানো রয়েছে। নম্বরে কল দিলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, বাংলা একাডেমিতে এবারের বইমেলায় নজরুল কর্নারের জন্য বরাদ্দকৃত স্টলে দায়িত্বরত থাকায় কর্নারটি বন্ধ রয়েছে।

কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৪০ সালে প্রকাশিত তার এক নজরুলগীতিতে “মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই, যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই” পঙক্তির মাধ্যমে মৃত্যুর পর মসজিদের পাশে সমাহিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের পর কাজী নজরুল ইসলাম ও তার পরিবারকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৪ মে তার জন্মদিনে কলকাতা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তখন কাজী নজরুল সপরিবারে বাংলাদেশে বসবাস শুরু করেন। অসুস্থতার দরুন ১৯৭৫ সালের ২৩ জুলাইয়ে তিনি ঢাকার পিজি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

১৯৭৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারিতে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পান, এরপর থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর পর তার লেখা গানে প্রকাশিত ইচ্ছানুযায়ী তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়।

মাজহারুল ইসলামের নকশায় নির্মিত কাজী নজরুল ইসলামের সৌধটি ২০০৯ সালে উদ্বোধন করা হয়। তাছাড়াও সমাধির কমপ্লেক্সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের জাতীয় ব্যক্তিত্বদের সমাধি রয়েছে।

অন্যান্যদের মধ্যে এখানে শায়িত আছেন বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক ও চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন, চিত্রশিল্পী ও বাংলাদেশের বর্তমান পতাকার প্রণেতা কামরুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের প্রথম সভাপতি মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন আরেক উপাচার্য পদার্থবিদ আব্দুল মতিন চৌধুরী।


সর্বশেষ সংবাদ