ঢাবির তৎকালীন প্রক্টর-প্রভোস্ট ও ছাত্রলীগের ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা শিবির নেতার

নির্যাতন করে মৃত ভেবে ফেলে রাখা হয় হল গেটে

অধ্যাপক মফিজুর রহমান ও অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ এবং ছাত্রলীগ নেতা বাধন
অধ্যাপক মফিজুর রহমান ও অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ এবং ছাত্রলীগ নেতা বাধন  © টিডিসি সম্পাদিত

২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক ছাত্র এবং শিবির নেতা মো. নাজমুল বাশারকে রাতভর শারীরিক নির্যাতন করেন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

অভিযোগ রয়েছে, হাত-পা বেঁধে রড ও স্টাম্প দিয়ে মারধর, নখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা এবং হাত থেতলে দেওয়ার মতো ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয় তার ওপর। দীর্ঘ আট বছর পর সেই ঘটনার বিচার চেয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় তৎকালীন হল প্রভোস্ট, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ ছাত্রলীগের ২৬ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নাজমুল বাশার।

মামলার এজাহারে নাজমুল বাশার উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারি ছাত্রলীগের তৎকালীন হল শাখা সভাপতি বরিকুল ইসলাম বাঁধনের নেতৃত্বে কয়েকদফা বঙ্গবন্ধু হলের ২২২ নম্বর রুমে ও ৩১৭ নম্বর রুমে নির্যাতন করা হয়৷ নির্যাতনের সময় দুই হাত বেঁধে ও চোখ বেঁধে কিল ঘুষি মারাসহ রড স্টাম্প দিয়ে পেটানো হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়৷ এছাড়াও হাতের নখ উপড়ে ফেলার জন্য প্লাস দিয়ে নখ টানা হয় ও হাতে প্লাস দিয়ে বাড়ি দিয়ে হাত থেতলে দেওয়া হয়।

মামলার এজাহারে নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, 'আমার দেহ নিস্তেজ হয়ে পরলে আসামীরা আমাকে মৃত মনে করে আনুমানিক রাত ১২.৩০ ঘটিকার দিকে আমাকে হলের গেটে ফেলে রাখে। আমাকে হলের মধ্যে নির্যাতনের বিষয়ে হলের তৎকালীন প্রভোস্ট মফিজুর রহমান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর ড. এ এম আমজাদ অবগত থাকলেও আমাকে আসামীদের নির্যাতন থেকে বাঁচানোর কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেন নাই। বরং আসামীদেরকে নির্বিঘ্নে নির্যাতন করতে প্রসাশনিক সহায়তা দিয়েছেন, উস্কানি দিয়েছেন এবং হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসামীদের নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছেন। আসামীদের বর্বর নির্যাতনে আমার বাম হাত ও বাম পা ভেঙে যায় এবং শরীরে অসংখ্য নিলাফুলা জখম হয়।'

এবিষয়ে নাজমুল বাশার বলেন, 'আমাকে সেদিন রাত ১০ টা থেকে নির্যাতন করা শুরু হয়। আমার বারোটার পর আর কোন হুশ ছিল না৷ রাত সাড়ে তিনটার দিকে আমি নিজেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখতে পাই। এক্সরে রিপোর্টে দেখি আমার বাম পা ও হাত ভেঙে গিয়েছে। আমাকে হল প্রশাসন থেকে বাঁচানোর জন্য কোন চেষ্টা করা হয়নি। আমি এরপর আর কোন ক্লাস করতে পারিনি। পরে অনেক অনুরোধ করে শুধু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমি শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম বলেই আমাকে এমন নির্যাতন করা হয়েছে।'

মামলায় যাদের আসামী করা হয়েছে তারা হলেন: বরিকুল ইসলাম বাঁধন, সজিব হোসেন, সানাউল্লাহ সূর্য, আবু জাফর সোহাগ, সবুজ রেজা, রাকিব হাসান, নাহিদ উকিল জুয়েল, মুনতাসির বিল্লাহ, আল আমিন, শাকিল, আসিফ আলম, রাইয়ান কামাল, আব্দুল কাদের, মৃধা মো. জাহিদুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান পলাশ, আল আমিন, আরিফুল ইসলাম, শেখ জামি, ইরফান চৌধুরী, তানভির আহমেদ শাওন, মুসা, ফয়সাল, রবিউল, আসিফ, তুষার, হাসান। এজাহারে উল্লেখ করা আসামীরা বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা-কর্মী। 

এছাড়াও মামলায় তৎকালীন হলের প্রভোস্ট গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মফিজুর রহমানসহ তৎকালীন প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদকে আসামী করা হয়েছে৷

আমি তৎকালীন ওই ঘটনার বিষয়ে অবগত ছিলাম না। যদি জানতাম, তাহলে অবশ্যই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতাম। কেউ আমাকে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। এমনকি ওই শিক্ষার্থীকে আমি মনে করতেও পারছি না,—ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এইসব কথা বলেন তৎকালীন হল প্রভোস্ট গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মফিজুর রহমান।

ওই ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তৎকালীন প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ আলী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানায়, আমি সবসময় শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার চেষ্টা করেছি। যতদূর জানি, এই ঘটনাটি প্রায় আট বছর আগের। সে সময় বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। যদি আমাকে জানানো হতো, তবে অবশ্যই আমি তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করতাম।

তিনি আরও বলেন, আমাকে যে মামলার আসামী করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence