রাবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে প্রকাশনা জালিয়াতির অভিযোগ সহকর্মীর

অধ্যাপক ড. মোরশেদুল ইসলাম
অধ্যাপক ড. মোরশেদুল ইসলাম  © টিডিসি সম্পাদিত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাহাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে গবেষণা প্রবন্ধ জালিয়াতির অভিযোগ করেছেন তাঁরই সহকর্মী ও আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোরশেদুল ইসলাম। তিনি দাবি করেছেন, অধ্যাপক সাহাল উদ্দিন সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য জমা দেওয়া ৮টি গবেষণা প্রবন্ধে জালিয়াতি করেছেন। 

রোববার (২৪ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটারিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন অধ্যাপক ড. মোরশেদুল ইসলাম। তিনি জানান, তিনি এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছেন এবং তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

অধ্যাপক ড. মো. সাহাল উদ্দিন বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগে প্রেষণে কর্মরত আছেন। গত ১৭ নভেম্বর তিনি ওই বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে অধ্যাপনা করতেন।

এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে এই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক মোরশেদুল বলেন, গত ১৬ জুলাই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আবু সাঈদের শাহাদাৎ আমাকে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করে। পরদিন ১৭ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শিক্ষক হিসেবে আমি এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। আবু সাঈদসহ অন্য সকল শহিদের জীবন উৎসর্গ করার উদ্দেশ্য ছিল অন্যায় ও বৈষম্যহীন ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্য ধারণ করে আমি এখন পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছি। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সেই নীতিকে সামনে রেখে ফ্যাসিবাদকে সমূলে উৎপাটন করে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়মভিত্তিক, সু-শৃঙ্খল ও দুর্নীতিমুক্ত করবে বলে বিশ্বাস করি।

প্রকাশনায় জালিয়াতির অভিযোগ এনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, অধ্যাপক সাহাল উদ্দিন ২০১২ সালের ৮ আগস্টে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদায়নের জন্য আবেদন করেন। আবেদনপত্রে তিনি তিনটি প্রকাশনার কথা উল্লেখ করেন। যার মধ্যে একটি বাংলা প্রকাশনা আছে। ইংরেজিতে লেখা দুটি প্রকাশনা হলো 'দ্য আনহোলি ডিলে অব দ্য লাস্ট কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট: বাংলাদেশ ইজ অন দ্য ভার্জ অব আ কনস্টিটিউশনাল ক্রাইসিস (The Unholy Delay of the Last Caretaker Government: Bangladesh is on the Verge of a Constitutional Crisis) এবং কনফ্লিক্ট অব লজ অ্যান্ড ইটস ইমপ্যাক্ট অন চাইল্ড লেবার ইস্যুজ: বাংলাদেশ পার্সপেক্টিভ (Conflict of Laws and it's Impact on Child Labour Issues: Bangladesh Perspective)। 

প্রকৃতপক্ষে অন্য লেখকের এবং তা তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের নামে প্রকাশ করেছেন। উল্লিখিত প্রকাশনাগুলোতে প্লেজিয়ারিজমের হার যথাক্রমে ৬৪ শতাংশ ও ৭৬ শতাংশ। 

পুনরায় ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারিতে ড. সাহাল উদ্দিন অধ্যাপক পদে পদায়নের জন্য যে ছয়টি প্রকাশনা তার নিজের বলে দাবি করেছেন, সেগুলোর সবই অন্যের কাজ থেকে চুরি করে প্রকাশিত বলে প্রমাণিত হয়েছে। প্রকাশনাগুলো হলো 'পলিসি অ্যান্ড প্র্যাকটিস অব ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি ল': বাংলাদেশ পার্সপেকটিভ (Policy and Practice of Intellectual Property Law: Bangladesh Perspective), ইন্টারন্যাশনাল লিগ্যাল অবলিগেশন্স অব বাংলাদেশ ইন আর্বিট্রারি অ্যারেস্ট, রিম্যান্ড অ্যান্ড টর্চার: এ ক্রিটিকাল অ্যানালাইসিস (International Legal Obligations of Bangladesh in Arbitrary Arrest, Remand and Torture A Critical Analysis), রোল অব ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন ইন কমব্যাটিং টেরোরিজম ইন দ্য এয়ার স্পেস: এ লিগ্যাল স্ট্যাডি উইথ রিলেভ্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল ইনস্ট্রুমেন্টস (Role of International Civil Aviation Organization in Combating Terrorism in the air Space: A Legal Study with Relevant International Instruments)।

রেকগনিশন অব লেবার রাইটস ইন বাংলাদেশ: ক্রিটিকাল স্ট্যাডি উইথ স্পেশাল রেফারেন্স টু দ্য স্ট্যান্ডার্ড অব আইএলও (Recognition of Labour Rights in Bangladesh: Critical Study with Special Reference to the Standard of ILO), চাইল্ড লেবার লজ অ্যান্ড পলিসিস ইন হোম অ্যান্ড অ্যাব্রড: ইশুজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস উইথ স্পেশাল রেফারেন্স টু বাংলাদেশ (Child Labour Laws and Policies in Home and Abroad: Issues and Challenges with Special Reference to Bangladesh), ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিসপিউট সেটলমেন্ট মেকানিজম অ্যান্ড ইটস ইফেক্টিভনেস বাংলাদেশ পার্সপেকটিভ (Industrial Dispute Settlement Mechanism and its Effectiveness: Bangladesh Perspective), 

উপর্যুক্ত প্রকাশনাগুলোতে চৌর্যবৃত্তির হার উল্লেখ করে তিনি বলেন, উপর্যুক্ত প্রকাশনাগুলোতে চৌর্যবৃত্তির হার যথাক্রমে ৯৩ শতাংশ, ৮৫ শতাংশ, ৬৬ শতাংশ, ৬৪ শতাংশ, ৫৬ শতাংশ ও ৩৭ শতাংশ। 

তিনি আরো অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির সকল প্রমাণ দেওয়া হলেও ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন না এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট করবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত অধ্যাপক সাহাল উদ্দিন বলেন, অধ্যাপক পিটার আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগে চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন। সেটা না হতে পেরে আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব অভিযোগ এনেছেন। উনি শিক্ষক হিসাবেও যোগ্য না। তিনি কিছুই পড়াতে পারেন না। তিনি পাগল, এই পাগলপনার জন্য তাঁকে চাকুরিচ্যুত করা উচিত।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ২১ নভেম্বর ‘৮ প্রকাশনার সবটিতেই চৌর্যবৃত্তি করে পদোন্নতি অধ্যাপকের, সর্বোচ্চ ৯৩ শতাংশ’ শিরোনামে একটি নিউজ প্রকাশ করা হয়। তারপর বিষয়টি আলোচনায় আসলে অধ্যাপক সাহাল উদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছেন। যা ২৩ নভেম্বর ‘প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ রাবি অধ্যাপকের’ এই শিরোনামে প্রকাশ করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ