ঢাবি যেন বিনোদন কেন্দ্র, বহিরাগত ও গাড়ির চাপে ব্যাহত শিক্ষার পরিবেশ
- মো. আবদুর রহমান
- প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২০ PM , আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০৩:৩০ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) যেন হয়ে উঠেছে দর্শনীয় স্থান, বিনোদন কেন্দ্র। প্রতিদিনই এখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য মানুষ ভিড় করে। বহিরাগতদের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানজট, শব্দ দূষণ ও ধুলাবালি। গাড়ি বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে যত্রতত্র পার্কিং। এতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অসুবিধার মুখোমুখি হচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসটি ধীরে ধীরে অনিরাপদ হয়ে উঠছে শিক্ষার্থীদের জন্য।
ঢাবি ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেট দিয়ে রিকশা এবং যানবাহন চলাচল করছে অনবরত। অন্যদিকে পলাশী, শহিদ মিনার, শাহবাগ এলাকা থেকে দলে দলে ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসে সবাই। আবার অনেকে পরিবারসহ ঘুরতে এসেছে। ঘুরছে, ছবি তুলছে, ওয়ানটাইম কাপে করে চা খাচ্ছে। চা খেয়ে রাস্তায় কাপ ফেলে অন্যদিকে যাচ্ছে। শুনে মনে হতে পারে কোনো পার্কের কথা বলা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এটিই ছুটির দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র। যেকোনো ছুটির দিনেই বহিরাগতদের আনাগোনায় বিশ্ববিদ্যালয় একটি পার্কে পরিণত হয়। শুধু ছুটির দিন নয়, প্রায় প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ ও গাড়ির চাপে ব্যাহত হচ্ছে ক্যাম্পাসের পরিবেশ।
বহিরাগত ও গাড়ির বাড়ার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতেও যত্রতত্র পার্কিং বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নীলক্ষেত, শাহবাগ মোড়, পলাশী চত্বর এবং অন্যান্য এলাকাগুলো থেকে আসা গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তা বাইপাস হিসেবে ব্যবহার করছে। এই যানজটের কারণে নারী শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে রোকেয়া হল এবং শামসুন্নাহার হল শিক্ষার্থীরা চলাচলে ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে যানজট সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নিলেও তা যথাযথভাবে কার্যকর হয়নি। গত বছর কিছু প্রবেশপথে সিকিউরিটি সার্ভেইল্যান্স বসানো হলেও যানজটের সমস্যা রয়ে গেছে। ফুটপাতের ভাসমান দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হলেও সেগুলো আবারও ফিরে এসেছে এবং বর্তমানে গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
তবে বহিরাগতদের নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেই। শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের এই নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের দাবি, বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ, ভারি যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদার করতে প্রক্টরিয়াল টিমকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রবিউল হাসান জানান, ‘ক্যাম্পাসে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি রিকশা, সিএনজি, এবং প্রাইভেটকার চলছে। রিকশা চালকদের জন্য প্রশাসনের অধীনে একটি ব্যবস্থা থাকা উচিত এবং ভাড়ারও নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। এত ভিড়ে এখন আর টিএসসিতে যেতেই ইচ্ছে করে না। স্কুলকলেজের ছাত্ররা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এখানে এসে আড্ডা দেয়। টিএসসি এখন বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।’
সার্বিক বিষয়ে ঢাবি সহকারী প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহবুব কায়সার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘টিএসসি এলাকায় তীব্র যানজট হওয়ার নিরসনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের প্রক্টরিয়াল টিম অভিযান চালাচ্ছে। একইসঙ্গে আমরা ফুটপাতে যে দোকানগুলোর কারণে ফুটপাত দখলে যাচ্ছে তা নিরসনেও আমরা কাজ করছি। আমাদের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে আমরা কাউকে নিষেধ করতে পারি না। কারণ, এটি একটি উন্মুক্ত জায়গা।’
যদিও ছাত্র সংগঠনগুলোকে দায়ী করে ঢাবি প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এখানে যানজট হওয়ার অন্যতম কারণ হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি না নিয়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন যত্রতত্র সভা সমাবেশ পালন করছে। তাদের বাহির থেকে নেতাকর্মীরা রিকশা বা বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে আসে এই ক্ষেত্রে যেখানে সেখানে পার্কিং করায় যানজট তৈরি হয়। এইসব সংগঠনের বিরুদ্ধে আমরা খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি ছাড়া কেউ সভা-সমাবেশ করতে পারবে না। সকলকে সচেতন করার লক্ষ্যে আমরা মাইকিং করছি।’