দেশের প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর দ্রুত নির্বাচিত সরকার চান শিক্ষক-ছাত্রনেতারা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস  © ফাইল ছবি

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় বঙ্গভবনে শপথ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে এ সরকারের মেয়াদ আসলে কতদিন হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। যার ফলে এই সরকার কতদিন থাকবে তা নিয়ে সাধারণ জনগণের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশার। যদিও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদকাল ৩ বছরের প্রস্তাব দিয়েছিলেন কিন্তু বাংলাদেশে একটি অনির্বাচিত সরকারের এত দীর্ঘ সময় থাকার নজির এখনও পর্যন্ত ঘটেনি।

সংবিধানের ১২৩ (৩) (খ) নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মেয়াদ অবসান ছাড়া অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে তারপরের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু বর্তমান অবস্থাকে ‘বিশেষ পরিস্থিতি’ হিসেবে বিবেচনা করে সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে বর্তমানে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয় বলে মত দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। সে ক্ষেত্রে সাধারণ নির্বাচনের পর গঠিত সংসদে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়া হবে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়সীমা তারা নিজেরাই নির্ধারণ করবে।

তবে সাধারণ দৃষ্টিতে একটি অনির্বাচিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতদিন থাকতে পারে বা কতদিন তারা থাকবেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দীর্ঘ সময় থাকলে জনমনে তিক্ততা চলে আসতে পারে। আবার কেউ বলছেন দেশের সর্বস্তরে সংস্কারের জন্য এই সরকারকে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে হতে পারে।

আরও পড়ুন: ভারতকে যে চরম উভয় সঙ্কটে ফেলেছে শেখ হাসিনা

গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে পরিবর্তন করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। কারণ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য না আনলে বর্তমান পরিস্থিতি আবারও আসতে পারে। সে জন্য দরকার হবে নির্বাচিত সংসদ। সংসদের অনুমোদন ছাড়া রাষ্ট্রীয় কাঠামো পরিবর্তনের সুযোগ নেই। ড. ইউনূস নিশ্চয় কিছু পরিকল্পনা নিয়েই দায়িত্ব নেবেন। তাঁর উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কী সিদ্ধান্ত নেন, সেটা আগে দেখতে হবে। 

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতিই  যেহেতু এখন নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করছেন। নির্বাহী ক্ষমতাবলেই তিনি নতুন উপদেষ্টা পরিষদের মেয়াদ বেঁধে দিতে পারেন অথবা সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপিল বিভাগের কাছে ব্যাখ্যা চাইতে পারেন। 

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ২০০৭- ০৮ সালে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছিলো তারা আদালতের একটি নির্দেশনার মাধ্যমে খুব সম্ভবত টিকে ছিল। বর্তমানে যে পরিস্থিতি এবং তারা যে কথা বলছেন যে রাজনৈতিক সংস্কার, সাংবিধানিক সংস্কার এগুলো খুব সময় সাপেক্ষ ও প্রস্তুতির ব্যাপার।  এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ আলোচনা খুবই জরুরি। কারণ ২০০৭-০৮ সালে যে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার গুলো হয়েছিলো নির্বাচনের পর সরকার কিন্তু সেগুলোকে বাদ দিয়ে দিয়েছিলো। 

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনা: গণতন্ত্রের আইকন যেভাবে একনায়ক

তিনি বলেন, আমি ২০০৭-০৮ এর অভিজ্ঞতা থেকে বলছি বিশেষ পরিস্থিতিতে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দীর্ঘ সময় থাকতে পারে বা মেয়াদকাল বাড়াতে পারে এবং তার নজির বাংলাদেশে আছে। 

একই বিষয়ে আইন বিভাগের অধ্যাপক আরিফ জামিল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ৩ বছরও একটি অনির্বাচিত সরকারের জন্য অনেক বেশি সময় বলে আমি মনে করি। অন্যান্য দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নজির রয়েছে। লেবাননেও হয়েছে সেসব জায়গায় আমরা দেখেছি স্বল্প সময়ের জন্যই হয়েছে। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলা হয় তাহলে সংবিধান অনুযায়ী তার মেয়াদ ৯০ দিন আর যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলা হয় তাহলে আমাদের নজির আছে হুমায়ুন ফখরুদ্দীনের প্রায় ২ বছর ২ মাসের সময়কাল। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের ঘোষিত মেয়াদকাল বাড়াতে পারে কি না বর্তমান সংবিধানে এরকম ধারা আছে বলে আমার জানা নেই। 

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমাদের অতীতের যে নজির তার উপর ভিত্তি করেই তাদের একটি সময় সীমা দেওয়া উচিত। খুব বেশিদিন হয়ে গেলে তো সেটি আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থাকে না। তিন বছর সময়ও একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য অনেক বেশি। 

আরও পড়ুন: কী হয়েছিল শেষ মুহূর্তে, যে পরিস্থিতিতে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা

এদিকে বিএনপির সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, দেশের প্রাথমিক ও প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত একটি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দেওয়া উচিত। এর আগে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ভিডিও বার্তায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও একই কথা বলেন।

জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, একটি গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জন চাহিদা অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। এই সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়কাল দিবে। তবে আমরা আশা করবো দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ঘোষিত সময়কালের একটা দিনও বেশি না থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত  সরকারের কাছে যেন তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করে।

আরও পড়ুন: হাসিনার পতনে বাংলাদেশে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ যাত্রা ভারতের

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের একাংশের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কতদিন থাকা উচিত, সে সময়টা আমি নির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না। তবে একটি বিশেষ মুহূর্তে জন চাহিদার উপর ভিত্তি করেই এই সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকারকে আগে সকল ধরনের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংস্কারের আহ্বান জানাই। প্রাথমিক সকল কাজ এই সরকারকে করা উচিত বলে আমরা মনে করি। 

তিনি বলেন, প্রাথমিক কাজ শেষে একটি নির্বাচন দিয়ে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে তবে যদি এই সরকার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করে অথবা নিজেরাই অগণতান্ত্রিক হয়ে পড়ে তখন জনগণ আবার রাস্তায় নামবে। সুতরাং সরকারকে এটাও মাথায় রাখতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ