ঢাবির হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের

‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ’ যোগ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ’ যোগ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।  © সংগৃহীত

অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বন্ধ ঘোষণা প্রত্যাখান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কে থাকা ঢাবি শিক্ষকরা। বুধবার (১৭ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা’র পাদদেশে আয়োজিত এক সমাবেশে এ ঘোষণা দেন শিক্ষকরা। এর আগে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ’ যোগ দেন।

সমাবেশ থেকে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং নিহতের ঘটনার বিচার দাবি করেছেন। পাশাপাশি তারা বলছেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে অবস্থা চলছে, তা আসলে চলতে পারে না। এর একটি স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার বলেও বক্তব্যে জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠনটিতে থাকা শিক্ষকরা।

সমাবেশ শুরুর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পুলিশের হাতে আটককৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি এবং দর্শন বিভাগের দুই শিক্ষার্থীকে শাহবাগ থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। তারা থানার ভেতরে গিয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে আনেন।

আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ

এদিন আন্দোলনে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. তানজীমউদ্দিন খান, বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক নোভা আহমেদ প্রমুখ।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর এরকম আঘাত আসছে, আমরা তো চুপ করে থাকতে পারি না। শিক্ষার্থীদের বাবা-মায়েরা তো আমাদের কাছেই ছেলেমেয়েদের রেখেছে। এভাবে অরক্ষিত অবস্থায় তারা থাকবে, এটা তো আমাদেরও দায়।

অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, যদিও আমরা দেরি করে ফেলেছি, আরেকটু আগে করতে পারলে ভালো হতো। সংগঠিত হতেও আমাদের কিছুটা সময় লেগেছে।

এর আগে বুধবার দুপুরের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সকল আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ঘোষণার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হল চালু রাখতে বিছিন্নভাবে বিভিন্ন হলে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিন ক্যাম্পাসে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা কড়া নিরাপত্তায় রয়েছেন।

আরও পড়ুন: স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করার এখতিয়ার আছে ইউজিসির?

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরের পর কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে থাকা এক শিক্ষার্থীকে গুলি করে পুলিশ। পরে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ওই শিক্ষার্থী। নিহত আবু সাঈদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়টির কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।

এরপর রাতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা এবং আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এরপর জরুরি সিন্ডিকেটে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বৈঠকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটির পাশাপাশি হলও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তীতে রাত ১০.০০ টার পর একটি জরুরি নির্দেশনায় দেশের সকল সরকারি এবং বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা জানিয়েছে দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। 

আরও পড়ুন: সব স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ও পলিটেকনিক অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ

একই সাথে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে দেশের সব মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণার কথা জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে ছুটির আওতায় রয়েছে—দেশের সব মাধ্যমিক স্তর থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষাস্তর পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে ছুটি ঘোষণা করা হয়নি দেশের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষালয়গুলোতে।

এর আগে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) চলমান আন্দোলনে সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ খবর পাওয়া যায়। নিহতের মধ্যে চট্টগ্রামে তিনজন, ঢাকায় তিনজন ও রংপুরে একজন রয়েছে। 

এদিন বেলা তিনটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। এ সময় কয়েকজন অস্ত্রধারীকে গুলি করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে হাতবোমার বিস্ফোরণও ঘটানো হয়। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন: কোটা আন্দোলনের সংঘর্ষে আরেকজনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ৭

চট্টগ্রামে নিহত তিনজনের মধ্যে দুজনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন মো. ফারুক (৩২) ও মো. ওয়াসিম (২২)। ফারুক একটি আসবাবের দোকানের কর্মচারী এবং ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বলে জানা গেছে। অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া আহত অন্তত ২০ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

এরপর বিকেলে রাজধানীর ঢাকা কলেজের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহত ওই যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এছাড়াও সন্ধ্যায় সিটি কলেজের সামনে থেকে রক্তাক্ত একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। 

এর আগে রবিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিরা কোটা পাবে না, তো কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে?’ এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে মুখর হয়ে পড়েন।

আরও পড়ুন: অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ বেরোবি, দুপুরের মধ্যে হল হল ত্যাগের নির্দেশ

এরপর সোমবার রাত থেকেই কোটা সংস্কার ইস্যুতে চলমান আন্দোলন নতুন রূপ পেতে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এরপর রাত দুইটার দিকে তারা হলে ফিরে যান এবং আজ সকালে থেকেই আন্দোলন নতুন দানা বাধতে থাকে। পরবর্তীতে বিকেলের দিকে ছাত্রলীগ আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষ ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত নিহতের পাশাপাশি কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

 

সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence