জাবিতে ভবন নির্মাণে কাটা পড়বে দুইশত গাছ, হুমকিতে প্রকৃতি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)  © টিডিসি ফটো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আল বেরুনী হলের বর্ধিতাংশে লেকের পাড়ে ছয়তলাবিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে সেখানে ছোট-বড় মিলিয়ে দুইশত গাছ কাটা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া স্থানটি একটি লেকের পাড়ে হওয়ায় হুমকিতে পড়তে পারে প্রতি শীতে আসা পরিযায়ী পাখির বিচরণ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষর্থীরা। 

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ভবনের জন্য স্থানটি নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বিভাগটিকে অনুষদের রূপ দিতে চান বিভাগীয় শিক্ষকরা। সে লক্ষ্যে অনুষদ নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ অর্থায়নে ৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। মোট বরাদ্দের ৪৭ কোটি ৮৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা বাংলাদেশ সরকার এবং অবশিষ্ট ৫০ কোটি টাকা ভারত সরকার প্রদান করবে। এই প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে আছেন বিভাগীয় শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক এম এম ময়েজউদ্দীন।

গত বছরের ১৭ জুন এই ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। পরে গত ৯ নভেম্বর টেন্ডার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শিডিউল বিক্রি ও জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। নির্ধারিত জায়গাটিতে দুইটি টিনশেড ঘরে গত কয়েক বছর ধরে চারুকলা বিভাগ শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা আসছে। তবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যমান জায়গাটির গাছপালা কেটে ও টিনশেড ঘরগুলো ভেঙে ছয়তলাবিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

এদিকে মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া এই ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসা শিক্ষার্থীরা।

তাদের দাবি, ভবন নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থানটির পাশেই রয়েছে একটি লেক। প্রতিবছর শীতের সময়ে দেশ-বিদেশ থেকে অন্যান্য লেকের মতো এতেও পরিযায়ী পাখি আসে। এ স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে পরিযায়ী পাখির নিরাপদ আবাসস্থল। পাশাপাশি ভবন নির্মাণ কাজ চলাকালীন ও শ্রেণী-কার্যক্রম শুরু হলে ভবন থেকে সৃষ্ট শব্দে বন্ধ হয়ে যেতে পারে পরিযায়ী পাখির বিচরণ। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে ভবনটিকে অন্যত্র স্থানান্তর করা উচিত।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে একটি মাস্টারপ্ল্যানের দাবি জানিয়ে আসছি। অতিরিক্ত ভবন নির্মাণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা নষ্ট করে বিলাসিতার প্রয়োজন নাই। ইতোমধ্যে লেকচার থিয়েটার হচ্ছে। এই সময়ে এতো অতিরিক্ত ভবন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। মূল বিষয় হলো আগে আমাদের মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে একটি দৃষ্টান্ত দেখাতে হবে। মাস্টারপ্ল্যানের দৃষ্টান্ত ব্যতীত কোনো ভবন হতে দিবো না।’

লেকের পাড়ে ভবন নির্মাণে পাখিদের উপর প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর কামরুল হাসান বলেন, ‘পাখিদের বিচরণে বাধার বিষয়টি নির্ভর করে লেক ও কন্সট্রাকশন এরিয়ার পজিশনের উপর। দ্বিতীয়ত কন্সট্রাকশনে কোন ধরনের কাজ চলছে এবং তা কোন সিজনে হচ্ছে। যখন পাখি আসবে তখন পুরোপুরি প্রভাব বুঝা যাবে। লেকের পাড়ে বহুতল ভবন হলে তা পাখির ফ্লাই ওয়ের মধ্যে পড়লে একরকম, না পড়লে আরেকরকম প্রভাব। যদি ফ্লাইওয়ের মধ্যে বহুতল ভবন নির্মাণ হয়, সেক্ষেত্রে পাখির চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে।'

তবে বিষয়টি অস্বীকার করে ভিন্ন কথা বলছেন প্রকল্প পরিচালক ও চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ময়েজউদ্দীন। তিনি বলেন, ‘ভবনের ডিজাইন লেকের থেকে কিছুটা সরিয়ে দিয়ে বাস্কেটবল কোর্টের দিকে নিয়ে গেছি। সেখানে শুধু ২০ থেকে ৩০ টার মতো মেহগনি গাছ আছে, সেগুলো কাটা পড়বে। আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি। ২০১৮-১৯ সালের দিকে আমাদের সিন্ডিকেট থেকে জায়গা দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ কমিটিই এখানে জায়গা সিলেক্ট করে দিয়েছে।’

 

সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence