ঢাবির ক্লাসে বাংলায় লেকচার, বুঝতে অসুবিধা বিদেশি শিক্ষার্থীদের

ঢাবির একটি ক্লাসের চিত্র
ঢাবির একটি ক্লাসের চিত্র  © ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা ও পর্যাপ্ত স্কলারশিপের অভাবে বিদেশি শিক্ষার্থী সংখ্যা খুবই সীমিত। এই সীমাবদ্ধতার মাঝেও যে গুটি কয়েক বিদেশি শিক্ষার্থী সেখানে পড়তে আসেন, বেগ পেতে হয় তাদের। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকরা ক্লাসে বাংলায় লেকচারে অভ্যস্ত; ফলে এসব বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগে বাংলা শিখতে হয়।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রকাশিত সর্বশেষ ৪৯তম বার্ষিক প্রতিবেদনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ২৯ জন বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। অথচ একসময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী পড়তে আসতেন। এ জন্য ‘স্যার পিজে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হল’ নামে আলাদা একটি আবাসিক হল করা হয়েছিল। বর্তমানে এই হলে যৎসামান্য বিদেশি শিক্ষার্থীর পাশাপাশি তরুণ শিক্ষকেরা থাকেন।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের মধ্যে খুবই নগণ্য শিক্ষকরা ক্লাসে ইংরেজিতে লেকচার দেন। ফলে অধিকাংশ ক্লাসে লেকচার দেওয়া হয় বাংলাতে। এতে শুরুর দিকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভাষা বুঝে ক্লাসের বিষয়বস্তু আয়ত্ত করতে বেশ বেগ পেতে হয়।

এ বিষয়ে ঢাবির নেপালি ছাত্র অর্জুন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রথম প্রথম ক্লাসে বাংলা বলায় আমি লেকচার বুঝতে পারতাম না। আমি একদিন বিষয়টি এক শিক্ষককে জানালে তিনি আমাকে বলেন এখানে পড়তে হলে অবশ্যই বাংলা শিখতে হবে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে বাংলা আমার আয়ত্তে আসে।

কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আরেক নেপালি ছাত্র বলেন, বাংলায় লেকচার হওয়ার কারণে আমিও প্রথম কয়েকমাস লেকচার বুঝতে পারিনি। কিন্তু উপায় না থাকায় আমি যত দ্রুত সম্ভব বাংলা শিখে নিয়েছি।

ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অধিকাংশ ক্লাস বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষা একত্রে ব্যবহার করা হয়। ইংরেজির মধ্যে বাংলা আর বাংলার মাঝে ইংরেজি এভাবেই ক্লাসগুলো হয়। তবে ইংরেজি বেশি ব্যবহার করা হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, প্রথম বর্ষে সাধারণত সিনিয়র শিক্ষকদেরকে ক্লাস নিতে দেওয়া হয়। যাতে করে শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের চাপে না পড়ে যায় এবং এসময় বিদেশি শিক্ষার্থীদেরকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, কোন সমস্যা হলে কোথায় যেতে হবে, কোন শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে সব বলে দেওয়া হয়। যাতে করে সে নিজেকে আলাদা না ভাবে সেজন্য সে একটা সারাক্ষণ একটা প্রক্রিয়ার মধ্যেই থাকে। সে যাতে ভাবে তার পরিবার (বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার) তার পাশেই আছে সেই ফিলিংসটা তার মধ্যে নিয়ে আসা যাতে কোনো ধরনের সমস্যার মধ্যে না যায়।

তিনি বলেন, তারা যেন এসেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত না হয়ে পড়ে এজন্য আমরা বলি যে সিনিয়র শিক্ষকদেরকে ক্লাস দিতে।

তবে শিক্ষকরা কোন ভাষায় লেকচার দেবেন, এ বিষয়ে তিনি বলেন, ইংরেজিতে লেকচার দিলে আমাদের যে শিক্ষার্থীরা বাংলা মিডিয়াম থেকে এসেছে তাদের জন্য লেকচার বোঝা কষ্ট হয়ে যায়। এজন্য বাংলা ব্যবহার করতে হয়। বাংলা ব্যবহার করা হলেও ইংরেজিতে ট্রান্সলেট করে দেওয়া হয় বলেই জেনেছি।

বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগে বাংলা শেখার ব্যাপারে তিনি বলেন, ক্লাস বোঝার পাশাপাশি সাধারণ ব্যবহার যেমন রিকশা ডাকা, দোকান থেকে কিছু কেনা ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে বাংলার ব্যবহারের স্বার্থে তাদেরকে বাংলা শিখতে বলা হয়। আবার বাংলায় লেকচার দেওয়া হলেও শিক্ষার্থীরা না বুঝলেও লজ্জায় বলতে চায় না। তারা যদি বলে আমি বুঝতে পারছি না তাহলে কিন্তু শিক্ষকরা তাকে আলাদা করে বুঝিয়ে দিবে।

বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা হতে পারে সেক্ষেত্রে ক্লাস লেকচার কি বাংলায় নাকি ইংরেজিতে হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,  আমরা এজন্যই সিনিয়র শিক্ষক দিয়ে প্রথম বর্ষে ক্লাস নেওয়ার জন্য বলেছি। তারা শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বিবেচনায় ক্লাস নেবেন আর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা একটা অন্য পর্যায়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা করছি। গ্লোবালাইজেশনের সাথে মিল রেখে যোগ্যতা এবং ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence