শাহবাগে ফুলের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাওয়ায় ৩ সাংবাদিককে মারধর

রাজধানীর শাহবাগের ফুলের দোকান
রাজধানীর শাহবাগের ফুলের দোকান  © সংগৃহীত

ফুলের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাওয়ায় রাজধানীর শাহবাগের ফুলের দোকানে ৩ সাংবাদিককে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একজন চোখে আঘাত পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শাহবাগের পাইকারি ফুলের দোকান মালিক সমিতির নেতা শেখ মো. মেরিনের মালিকানাধীন ফুলতলা ফ্লাওয়ার শপে এই ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার তিন সংবাদকর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের ঢাবি প্রতিনিধি।

তারা হলেন নিউজ বাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম, রেডিও টুডের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মো. ইমদাদুল আজাদ ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রাসেল সরকার। এর মধ্যে, ইমদাদুল আজাদের ডান চোখের দুই পাশে মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কেটে গেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

ঘটনার ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলার আবেদন করেছেন। এতে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৬-৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তরা হলেন- পায়েল (৩৫), সাল্লু (২৭), আব্দুর রাজ্জাক (৩৫), বুলু (৩২), দিদার (৩১), বাবু (৩০), জাহাঙ্গীর (৩২)। তারা সবাই শাহবাগ ফুল দোকানের কর্মচারী।

ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেলে নিউজ বাংলার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মনিরুল ইসলাম এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের রাসেল সরকার বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিতব্য পয়লা ফাল্গুন উপলক্ষে ফুলের ক্রয়-বিক্রয়ের অবস্থার সংবাদ সংগ্রহ করতে যান। এসময় মার্কেটে ফুলের দাম বাড়ার কারণ সংক্রান্ত তথ্য জানতে ফুলতলা ফ্লাওয়ার শপে কর্মরত পায়েল নামে একজনের সাথে কথা বলতে চাইলে খারাপ আচরণ শুরু করে দেয়। একপর্যায়ে, তিনি ‘ভুয়া সাংবাদিক’ বলে আখ্যায়িত করে। তখন এর প্রতিবাদ করলে তিনি উত্তেজিত হয়ে মনিরুল ইসলামকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করে। এসময় আশেপাশের কর্মচারীরাও তাদের সাথে যুক্ত হয়। এর পাশেই পুলিশ অবস্থান করার পরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানান কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী।

ঘটনার খবর শুনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়ে হামলাকারীদের হামলার কারণ জিজ্ঞেস করতে গেলে ওখানে অবস্থানরত কিছু পুলিশ তাদের সঙ্গে অসহযোগিতা এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। এক পর্যায়ে, ওখানে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় এবং সে দোকানিদের হামলা ও ফুটপাত দখল করাকে বৈধতা দিতে থাকে। এরপর শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসে হামলায় অভিযুক্তকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। সবশেষে, ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলাম একটি অভিযোগ দায়ের করেন বলে জানা যায়।

ঘটনার বর্ণনায় মামলার এজাহারে মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি পেশাগত কাজে আমার কলিগ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোঃ রাসেল সরকারকে সাথে নিয়ে শাহবাগ মোড়ের ফুল মার্কেট এর ফুলতলা ফ্লাওয়ার শপে ফুলের দাম বাড়ার কারণ সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহে যাই। ওই দোকানে কর্মরত পায়েল নামে একজনের সাথে কথা বলতে চাইলে সে আমাদের সাথে খারাপ আচরণ শুরু করে দেন। এরপর আমাদেরকে ‘ভুয়া সাংবাদিক’ বলে আখ্যায়িত করে। আমরা মৌখিকভাবে এর প্রতিবাদ করলে তিনি উত্তেজিত হয়ে আমাকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি, চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করে। আমার কলিগ (রাসেল) তার প্রতিবাদ করতে গেলে পায়েল, সাল্লু, আঃ রাজ্জাক, বুলু, দিদার, বাবু এবং জাহাঙ্গীরসহ আশেপাশের দোকানের কর্মচারীরা এসে আমাদের দু-জনকে মারপিট করে। 

তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার সংবাদ পেয়ে আমার অন্য কলিগ মোঃ ইমদাদুল আজাদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিক পরিচয়ে ঘটনার বিবরণ জানতে চাইলে বিবাদীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকেও মারপিট করে এবং বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে। আমরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সময় বিবাদীরা পেছন দিক থেকে আমাদের ওপর আবার অতর্কিত হামলা করে। এসময় ইমদাদকে রাস্তায় ফেলে এলোপাতাড়ি মারপিট করে, তার ডান চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। 

পরবর্তীতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী আমাদেরকে চিনতে পেরে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে এবং আহত ইমদাদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। ইমদাদুল আজাদের চোখে রক্তক্ষরণ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মনিরুল ইসলাম।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ ফুলতলা ফ্লাওয়ার সপের মালিক মো. মেরিন শেখ বলেন, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। ঢাকা বাইরে আছি। শুনেছি দোকানে ঝামেলা হয়েছে। আমাদের দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে শাহবাগ থানার ওসি  মো. মোস্তাজিরুর রহমান বলেন, সাংবাদিকদেরকে শাহবাগ মোড়ের ফুল মার্কেটে মারধরের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ