ইতিহাসের ক্যানভাসে সূর্যসেন হলের স্মৃতির জানালা-৭১
- মুহাইমিনুল ইসলাম, ঢাবি
- প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৩৮ AM , আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৪৭ AM
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হল থেকে শহীদ হওয়া শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্মরণে স্মৃতির জানালা-৭১ নামে নতুন এক স্থাপনা তৈরি করা হয়। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ এ স্থাপনাটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। স্মৃতির জানালা-৭১ স্থাপনাটির নামকরণ করেন এ হলের সাবেক হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. খোন্দকার আশরাফ হোসেন।
জানা যায়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হন মাস্টারদা সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষক, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাদত আলী। শিক্ষক ছাড়াও শত শত শিক্ষার্থীও এ হল থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন।
এসব শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরও রয়েছেন- ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী জিল্লুর মুরশিদ, অর্থনীতির বদিউল আলম, মো. আবদুর রহিম, মো. মনিরুজ্জামান। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মো. আতাউর রহমান, ভূগোলের মো. আমিরুস সালাম, মৃত্তিকাবিজ্ঞানের শামসুজ্জামানসহ নাম না জানা আরও অনেক শিক্ষার্থী।
মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ হওয়া শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চিরস্মরণীয় করে রাখতে সূর্যসেন হলের পাম চত্বর সংলগ্ন এলাকায় এই স্থাপনা নির্মাণ করা হয় বলে জানায় হল প্রশাসন।
জানা যায়, ২০১০ সালের ২৫ মার্চ এ স্থাপনাটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এরপর একই বছরের স্বাধীনতা দিবসে এ স্থাপনাটির উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
১৯৭১ সালে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলার সাহসী ছেলেরা যে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল, তার সূত্রপাত হয়েছিল এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকেই শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। এ যুদ্ধে অংশ তখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। এরপর আসে ২৫ মার্চের কালরাত্রি।
পাকিস্তানি বাহিনী নেমে পড়ে অপারেশন সার্চলাইট বাস্তবায়নে। প্রকৃতপক্ষে যা ছিল গণহত্যা। পাক হানাদার বাহিনী আক্রমণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন হল, শিক্ষকদের বাসাবাড়ি। এতে প্রাণ হারান শত শত ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী।
ইতিহাস স্মরণ করে সূর্যসেন হলের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গ করা সূর্য সেনাদের স্মৃতি ও সম্মান রক্ষার্থে স্মৃতির জানালা-৭১ স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয়। তারা আমাদের ভাই। তাদের জীবনের বিনিময়ে আমরা মহান স্বাধীনতা পেয়েছি। তারা আমাদের গর্ব। তাদের স্মৃতি মুছে ফেলার মত নয়।
স্মৃতির জানালা-৭১ সম্পর্কে মাস্টারদা সূর্যসেন হলের প্রিন্সিপাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার মো. আব্দুল মোতালেব বলেন, স্মৃতির জানালা-৭১ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্যকে ধারণ করে। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার পেছনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবদান রয়েছে। এরমধ্যে সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থীদের অবদান উল্লেখযোগ্য।
তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে তারা আমাদের নতুন দেশ উপহার দিয়েছেন। তাই সূর্যসেন হল থেকে শহীদ হওয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্মরণীয় করে রাখতে এই স্থাপনা নির্মাণ করা হয়।