১১ দিন পর স্বামীর স্বীকৃতি ফিরে পেলেন চবির ইরা

স্বামীর সঙ্গে ইরা
স্বামীর সঙ্গে ইরা  © ফাইল ফটো

স্ত্রীর অধিকার আদায়ে শ্বাশুরবাড়ির সামনে ১১ দিন অবস্থানের পর অবশেষে স্ত্রীর মর্যাদা পেলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ইসমত আফিয়া ইরা। গত বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) ফেসবুক লাইভে এসে সকল ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য তিনি সকলের দোয়া প্রত্যাশা করেছেন।

পরে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেছেন, আমার স্বামী স্বেচ্ছায় আমাকে মেনে নিয়েছে। আমরা নতুন বাসায় উঠে নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছি। 

আর তার স্বামী মাহফুজুর রহমান বলেছেন, আগে যা হয়েছে হয়েছে। আমরা নতুন করে জীবন শুরু করতে চাই। ডিভোর্স উইথড্র করছি। আশা করি, পরিবারকে বুঝিয়ে খুব দ্রুত তাকে ঘরে তুলব।

আরও পড়ুন: ক্যাম্পাসে প্রেম, কাজী অফিসে বিয়ে— স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে শ্বশুরবাড়ির দুয়ারে চবির ইরা 

জানা যায়, সম্প্রতি ফেসবুকে লাইভে এসে নিজের অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার কথা ফেসবুক লাইভে এসে জানান ইরা। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়ে একই বর্ষের লোকপ্রশাসন বিভাগের মাহফুজর রহমানের সাথে তার পরিচয় ঘটে । পরিচয়ের এক পর্যায়ে ইরাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন মাহফুজুর। শুরুতে পাত্তা না দিলেও শেষ পর্যন্ত তার প্রেমে সাঁই দেন ইরা। ইরাকে নিজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কথা বলেন মাহফুজুর। ২০২২ সালের ৬ মে ঈদের ছুটিতে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য ইরাকে তার বাসায় নিয়ে যান মাহফুজুর। সেদিন বাসায় কেউ না থাকায় ইরা বারবার জানতে চেয়েছিলেন পরিবারের লোকজন কেন বাসায় নেই? মাহফুজুর বলেছিলেন তারা (বাবা-মা) হঠাৎ পরিকল্পনায় বেড়াতে গেছে, রাতের মধ্যেই ফিরবেন। কিন্তু রাত হতে থাকলেও ফিরেনি মাহফুজুরের পরিবার। সেই রাতেই ইরার ইচ্ছের বিরুদ্ধে ধর্ষণ করেন মাহফুজুর।

এই ঘটনার পর দু’জনের সম্পর্কে টানাপোড়ন শুরু হয়। এর মধ্যে গর্ভবতী হয়ে পড়েন ইরা। বিষয়টি মাহফুজুরকে জানালে তিনি গর্ভপাত করাতে বলেন। ইরা তাতে রাজি না হলেও পরে নানান মানসিক চাপে তার গর্ভপাত হয়। কিন্তু তাতেও দমে যাননি ইরা। স্ত্রীর অধিকার আদায়ে শ্বশুরবাড়িতে ধর্ণা দিয়েছেন বেশ কয়েকবার, পাঠিয়েছেন লিগ্যাল নোটিশও। এসবে কাজ না হওয়ায় আত্মহত্যাও করতে যান। সে যাত্রায় তার নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকার আলফালাহ গলির বাসার রুমমেটরা তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি সেখানে তিনদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ি থেকে এ ঘটনা খুলশী থানাকে জানানো হলে, তারা এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেন।

আইনি ব্যবস্থার পর নগরীর বড়পোল এলাকা থেকে মাহফুজুরকে আটক করে পুলিশ। একই সময়ে ইরাকে বিভিন্ন প্রলোভনে ফেলে মাহফুজুরের পরিবার। পরে থানার ইরাকে বিয়ে করার শর্তে মাহফুজুরকে মুক্তি দেওয়া হয়। চলতি বছরের ১০ অক্টোবর পুলিশ ও আত্মীয়স্বজনদের উপস্থিতিতে ঝাউতলা কাজী অফিসে ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করে তাদের বিয়ে হয়। 

বিয়ের পরও ইরা তার বাসায় থাকতেন। ওই সময় মাহফুজুর বলতেন কিছুদিন যেন অপেক্ষা করে। তারপর তাকে নিজ পরিবারে তুলে নেওয়া হবে। কিন্তু মাহফুজুর তা না করে চলে যান দুবাই। দীর্ঘদিন ধরে তাকে বাসায় না তোলা ও হঠাৎ দুবাই চলে যাওয়ার ঘটনায় সন্দেহের জন্ম দেয় ইরার মনে। তিনি শ্বশুরবাড়িতে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তারা প্রথমে বিয়ে অস্বীকৃতি জানালেও পরে বলেন তাদের সন্তান তাকে ডিভোর্স দিয়েছে। কিন্তু কোন ডিভোর্সের কাগজ পাননি ইরা। 

গত বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) ইরা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেছিলেন, আমি তো ডিভোর্স চাইনি। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর আমার কোন পরিবার নেই। আমি তো একটি পরিবার চেয়েছিলাম। আমাদের রিলেশনের প্রথম দিন থেকে আমি তাকে বলেছিলাম আমার একটি পরিবার চাই।

সেসময় তিনি আরও বলেছিলেন, আমি তো ডিভোর্স দেওয়ার জন্য বিয়ে করেনি। আর সে যদি আমাকে ডিভোর্স দেয়, তবে ডিভোর্স পেপার আমি পাইনি কেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, তাকে মেনে না নেওয়ায় তিনি চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার লায়ন চক্ষু হাসপাতালের পাশে কবির মঞ্জিলে মাহফুজুরের বাসায় অবস্থান নেন। সেখানে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছ থেকে তিনি লাঞ্ছিত হয়েছেন।

এদিকে অভিযুক্ত মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান গত সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশে ফেরেন। এ বিষয়ে গত বুধবার অভিযুক্ত মাহফুজুর রহমান বলেছিলেন, আগে যা হয়েছে হয়েছে। আমরা নতুন করে জীবন শুরু করতে চাই। আজ ডিভোর্স উইথড্র করছি। আশা করি, পরিবারকে বুঝিয়ে খুব দ্রুত তাকে ঘরে তুলব ।

উল্লেখ্য, নারীর প্রতি সম্মান ও ইসলামের সৌন্দর্য দেখে ২০১০ সালে স্বেচ্ছায় ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলিম হন ইরা। আগে কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। এসব ঝামেলায় জড়িয়ে ওই চাকরি হারানোর পর আনোয়ারার একটি কলেজে খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence