ভিসির কাছে অভিযোগ
পরামর্শের জন্য শিক্ষকের কক্ষে গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার ঢাবি ছাত্রী
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:০২ PM , আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৪০ AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক ছাত্রীকে নিজ কক্ষে পরামর্শের জন্য ডেকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে একই ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ সময় যৌন নিপীড়ন করেছেন বলে দাবি ভুক্তভোগীর। এ ঘটনার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগপত্র দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী।
আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বরাবর এই অভিযোগপত্র দেন তিনি। পরে উপাচার্য অভিযোগটি গ্রহণ করে তদন্ত করবেন বলে ভুক্তভোগীকে জানান। অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম নুরুল ইসলাম। তিনি সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে এর আগেও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরে জানুয়ারি মাসেও এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ছিল। এর আগে ২০১৪ সালে মে মাসেও এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ছিল ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
জানতে চাইলে ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নিজ ইনস্টিটিউটে সবাই নিরাপদ থাকে। তাই স্যার যখন ইনস্টিটিউটে নিজ কক্ষে আমাকে ডাকেন তখন আমি যাই। এরপর উনার কথা অসংলগ্ন লাগলে আমি চেয়ার থেকে চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াই। কিন্তু উনি দ্রুত চেয়ার থেকে উঠে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমি সেখান থেকে দ্রুত পালিয়ে যাই। এরপর উনি ফোন দেয় আমি যেন ঘটনাটি কাউকে না বলি। আমি আজকে উপাচার্য বরাবর অভিযোগ দিই। আমি এর বিচার চাই। আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন শিক্ষার্থী। গত ১১ সেপ্টেম্বর হল বিষয়ে পরামর্শ নেওয়ার জন্য ইনস্টিটিউটের অফিস কক্ষের সামনে গেলে তিনি আমাকে নিজে থেকে তার কক্ষে ডাকেন। তখন আমি স্যারের কক্ষে যাই। স্যার আমাকে প্রয়োজনীয় দু’একটা কথা বলার পরপরই অপ্রাসঙ্গিক কথা বলতে শুরু করেন। তিনি আমাকে নানারকমের সাহায্যের প্রলোভন দেখান এবং আমাকে বলতে থাকেন আমি যেন একা তার সাথে দেখা করি এবং বই নেই তার কাছে গিয়ে। তাছাড়া তার বিষয়ে বা তার সাহায্যের বিষয়ে যেন কাউকে কোনো কথা না বলি।
“তিনি আমার সেল ফোন নাম্বার নেন এবং এক রকম জোর করেই আমার মেসেঞ্জারে নক করেন এবং যুক্ত হোন। তার কথার ধরন এবং অঙ্গভঙ্গি আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হলে তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়াই এবং তখন তিনি নিজেও তার নিজ আসন ছেড়ে আমার কাছে উঠে আসেন এবং আমাকে যৌন নিপীড়ন করেন। তিনি বার বার বলতে থাকেন, তোমাকে আমার ভালো লেগেছে-কথাটি বলেন। তিনি আমার শরীরের আপত্তিকর স্থানে স্পর্শ করেন, ঘটনার আকস্মিকতায় কিছু বুঝে উঠতে না পেরে আমি ভয়ে তার কক্ষ হতে দৌড়ে পালিয়ে যাই।”
অভিযোগ পত্রে আরও উল্লেখ রয়েছে, ঘটনার আমাকে তার রুমে থেকে এবং বের হয়ে যাওয়ার সময় সিনিয়র কিছু শিক্ষার্থী দেখেছেন। এরপর আমি এতোটাই ভয় পাই যে মেসে ফিরে যাওয়ার শক্তিও পাচ্ছিলাম না, তাই আমি ক্যান্টিনে কিছু সময় অবস্থান করি। কিছু সময় পর আমাকে পুনরায় ফোন করে তার সাথে দুপুরের খাবার অথবা হালকা নাস্তা বা চা খাওয়ার প্রস্তাব জানান। তখনও আমাকে বারবার এই বিষয়ে যেন কাউকে না জানাই, তা সাবধান করতে থাকেন। আমি মানসিক ট্রমা থেকে বের হতে না প্রচণ্ড ভয়ে দেশের বাসায় চলে যাই যার কারণে আমি আমার চলমান পাঠদান থেকে বিরত থাকি। এমন সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।“
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ও ইনস্টিটিউটের পারিচালক অধ্যাপক ড. গোলাম আজমের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।