ঢাবির বিশেষ সমাবর্তন

প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে ফোন নিয়ে অবাধে প্রবেশ, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

অনুষ্ঠানস্থলে মোবাইলে ধারণকৃত সেলফি (বামে), অনুষ্ঠানস্থলে বসে থাকা দুই শিক্ষার্থীর ছবিটিও (ডানে) মোবাইলে ধারণ করা হয়। যা পরবর্তীতে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে
অনুষ্ঠানস্থলে মোবাইলে ধারণকৃত সেলফি (বামে), অনুষ্ঠানস্থলে বসে থাকা দুই শিক্ষার্থীর ছবিটিও (ডানে) মোবাইলে ধারণ করা হয়। যা পরবর্তীতে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে   © সংগৃহীত

বাংলাদেশে ভিভিআইপি, ভিআইপি ও সিআইপি এই তিন ক্যাটাগরি বিশিষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকদের নিরাপত্তা ও বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়। এজন্য প্রশাসনের কাছে একটি রেডবুক আছে। রেডবুক অনুযায়ী, ভিভিআইপি হলেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। তাঁদের জন্য আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং গার্ড রেজিমেন্টও রয়েছে। তাঁরা যেসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন সেখানে নিরাপত্তার জন্য সরকারের বিশেষ বাহিনী রয়েছে। সেসব অনুষ্ঠানে দর্শনার্থীদের মোবাইল ফোন, ক্যামেরা, হাতব্যাগ ইত্যাদি নিয়ে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা থাকে। আর অনুষ্ঠানস্থলে এসব দর্শনার্থীকে ঢুকানো হয় কয়েকস্তরে দেহ তল্লাশি করে।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মোবাইল ফোন নিয়ে অবাধে প্রবেশ করেছেন অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান নেতাদেরও মোবাইল ফোন নিয়ে অবাধে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। যদিও সমাবর্তনের আমন্ত্রণপত্রে এসব সঙ্গে নিয়ে প্রবেশে ছিল নিষেধাজ্ঞা।

প্রধানমন্ত্রীর মতো এমন ভিভিআইপির অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন ছাড়াই এভাবে অবাধে প্রবেশে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সংশ্লিষ্টরা। আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা কর্মীদের কাজ ছিল এটি। মূলত প্রবেশ পথে যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকে এটা দেখা তাদের দায়িত্ব।

বিশেষ সমাবর্তনের আমন্ত্রণপত্র

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মরণোত্তর সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি প্রদানের উদ্দেশ্যে আজ রোববার (২৯ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত হয়েছে বিশেষ এই সমাবর্তন। যেখানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা যায়, বিশেষ এই সমাবর্তনস্থলে প্রবেশের প্রাথমিক নিয়মের মধ্যে ছিল শিক্ষার্থীদের প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তারপর বিভাগীয় অফিস থেকে আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহ করে সেটা দেখিয়ে প্রবেশ করতে হবে।

সমাবর্তনের আমন্ত্রণপত্রে এবং সমাবর্তনের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্টত বলা হয়েছিলো, সমাবর্তনস্থলে প্রবেশের সময় অবশ্যই প্রদানকৃত চিঠি দেখাতে হবে এবং মোবাইল বা ক্যামেরা জাতীয় ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা এবং সমাবর্তনের নিয়মানুযায়ী এধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিলো বলে জানা যায়।

তবে এদিন সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সমাবর্তনস্থলে যেকোনো ধরনের ডিভাইস নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও শিক্ষার্থী এবং অতিথিরা অবাধে প্রবেশ করেছেন মোবাইল ফোন নিয়ে। মোবাইল ফোনসহ প্রবেশ করেছেন এমন একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তারা জানায়, মোবাইল ফোন নেওয়া সম্পর্কে কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি তাদের। এর ফলে মোবাইল ফোনসহ অবাধে তারা প্রবেশ করতে পেরেছেন।

এছাড়াও কোনো ধরনের আমন্ত্রণপত্র ছাড়াও অনেক শিক্ষার্থী সমাবর্তনস্থলে প্রবেশ করেছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে তারও সত্যতা মিলেছে। এরকম একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, আমি রেজিস্ট্রেশন করিনি বা আমার কাছে আমন্ত্রণপত্রও ছিলো না। হল ছাত্রলীগের সাথে যাওয়াতে আমি সহজেই প্রবেশ করতে পেরেছি এবং কেউ আটকায়নি। 

দেশের প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকা অবস্থায় এরকম একটি অনুষ্ঠানে এরকম নিরাপত্তাজনিত অসচেতনতার বিষয়টি নজর এড়িয়ে গেছে প্রায় সবারই। 

মোবাইল নিয়ে সমাবর্তনস্থলে যাওয়ার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মোবাইল নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি আমরা জানতাম। এতো শিক্ষার্থী এবং অতিথি যাদের বেশির ভাগই মোবাইল নিয়ে এসেছিলেন তাদের এতো মোবাইল জমা রেখে আবার ফেরত দেওয়া আমাদের জন্য কঠিন ছিল। নিরাপত্তার মূল দায়িত্বে ছিল স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)। আমরা এসএসএফের সাথে কথা বলে মোবাইল নিয়ে ঢুকার ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছিলাম। কিন্তু এতে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকে কিনা সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেনি।

এছাড়াও কার্ড ছাড়া শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনে প্রবেশকারীদের সম্পর্কে তিনি জানেন না বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তা যারা দেখেন তারা তো অত্যন্ত চৌকস। তাদের আসলে সবকিছু যাচাই বাছাই করারই কথা। তবে কার্ড ছাড়া কেউ গেছে কি না সে বিষয়ে আমি জানি না। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।

বিশেষ সমাবর্তনে বঙ্গবন্ধুকে মরণোত্তর সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি প্রদান করা হয়

ফোন নিয়ে এভাবে অবাধে প্রবেশ নিরাপত্তাজনিত হুমকি কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা দায়িত্বশীল জায়গা বসে তো ইচ্ছামতো কথা বলা যায় না। তবে আমরা শিক্ষকেরা সবাই ফোন রেখেই প্রবেশ করেছিলাম। ফোন কেন নিতে দেওয়া হয়েছে সেটা আমরা জানি না। আমি এর আগেও অনেক জায়গা গিয়েছি যেখানে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন কিছু কিছু জায়গায় ফোন কেউ কেউ নিয়ে যায় আবার অনেকেই রেখে যায়।

“তবে ক্রিমিনোলজির শিক্ষক হিসেবে আমার যেটা মনে হয় বিষয়টাকে এক পাক্ষিক করা উচিত। ফোন নিয়ে ঢুকলে অনেকে আবার ছবি তুলবে অনেকে তুলতে পারবে না বা কোনো অপ্রীতিকর কিছু ঘটতে পারে যদিও আমার থেকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা কর্মীরা আরও ভালো বুঝবেন তবে আমার মনে হয় বিষয়টা এক পাক্ষিক করা উচিত। তাই ফোন না নিতে দেওয়াই উচিত।”

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশেষ সমাবর্তন ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। জাতির প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অসামান্য ঋণ সেই ঋণ পরিশোধের দায়বদ্ধতা থেকেই এটা এক স্মারক বিনম্র প্রয়াস।

মোবাইল নিয়ে প্রবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো নিরাপত্তা কর্মীদের কাজ। মূলত প্রবেশ পথে যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকে এটা তো তাদের দায়িত্ব। আমি নিজেই আমার আমার মোবাইল রেখে সমাবর্তনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। যেহেতু নিষেধ করা ছিল তাই আমি নিজেও মোবাইল নিয়ে সমাবর্তনে প্রবেশ করিনি। তবে এটা যাদের দেখার কথা তাদের দেখার দরকার ছিল। তবে আলহামদুলিল্লাহ কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি এবং সমাবর্তন সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ