উদ্বোধনেই সীমাবদ্ধ সিকিউরিটি বক্স

ঢাবি ক্যাম্পাসে চলছে অবাধে বহিরাগত যান, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

তালা ঝুলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি বক্সের।
তালা ঝুলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি বক্সের।   © টিডিসি ফটো

সাড়ে তিন মাসের বেশি সময় আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) পাঁচটি বড় বড় প্রবেশ মুখে সিকিউরিটি বক্স উদ্বোধন করা হয়েছিল। সেসময় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে বহিরাগত বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ করার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো হলেও বর্তমানে উদ্ভোধনেই সীমাবদ্ধ রয়েছে এসব সিকিউরিটি বক্স। বক্সগুলোতে ঝুলছে তালা। সাড়ে তিন মাস পরও ক্যাম্পাসে চলছে অবাধে বহিরাগত যান, এরফলে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে শিক্ষার্থীদের।

আরো পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জেরে ছাত্রদলের বিক্ষোভ, রাজু ভাস্কর্যে সংঘর্ষে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল

জানা যায়, চলতি বছরের ১৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামান এই সিকিউরিটি সার্ভেইলেন্স বক্সগুলো উদ্বোধন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি প্রধান প্রবেশ পথগুলোতে বক্সগুলো বসানো হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে নীলক্ষেত মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ, পলাশীতে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের গেটের পাশে, ঢাকা মেডিকেলের সামনে শহীদুল্লাহ হলের গেটের পাশে, শাহবাগ থেকে টিএসসিতে প্রবেশ পথের মুখে এবং সুফিয়া কামাল হলের পাশে। 

১৬ জুন ‘সিকিউরিটি এন্ড সার্ভিলেন্স বক্স’ উদ্বোধন করেন ঢাবি ভিসি

সিকিউরিটি বক্স উদ্বোধনের সাড়ে তিন মাস পার হলেও প্রশাসন থেকে নেওয়া হয়নি সচল করার জন্য কোনো ব্যবস্থা। এখনো চলাচল করছে বহিরাগত বড় বড় ট্রাক। বিশেষ করে রাতের বেলায় দূরপাল্লার বাসও চলাচল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে।    

সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাম্পাসে বিকেল থেকে এফ রহমান হল থেকে ভিসি চত্বর পর্যন্ত গাড়ির যানজট লেগে থাকে। এসময় গাড়ির উচ্চস্বরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় স্বাভাবিক পরিবেশ মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা চলাচল করতে সমস্যায় পড়ে। একই অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর এবং সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের সামনে অবস্থিত পলাশী মোড়ে। বহিগরাগত গাড়ির কারণে সারাক্ষণ যানজটে ভুগতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের।

ক্যাম্পাস যেন অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘেঁষা চারুকলা অনুষদ, টিএসসি ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এলাকায় ভবঘুরে এবং মাদকসেবীদের উপদ্রব সবচেয়ে বেশি। নেশার উপকরণ ‘ড্যান্ডি’ নিয়ে নেশায় বুদ হয়ে যায় অনেক ভবঘুরে পথশিশুকে। তাছাড়া দোয়েল চত্বর, উপাচার্য ভবন, রোকেয়া হল, জগন্নাথ হল ও বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তায় নানান অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে।

ক্যাম্পাসে ড্যান্ডি’ নিয়ে নেশায় বুদ হওয়া এক পথশিশু

শাকিল চৌধুরী বিজয় নামে ঢাবিপড়ুয়া এক শিক্ষার্থী ‘ড্যান্ডি’ নিয়ে নেশায় বুদ হওয়া এক পথশিশুর ছবি দিয়ে ফেসবুকে লেখেন, ডাকসু ক্যাফেটেরিয়ার ঠিক মূল ফটকে জনসম্মুখে বসে ড্যান্ডি খাচ্ছিল দুজন পথশিশু। ফুল বিক্রি করে এমন কয়েকজন পথশিশু এই দুইজনের সাথে ধস্তাধস্তি করছে তখন। আমি তখন এগিয়ে গিয়ে তাদের ঝামেলার বিষয়টি শুনি। পরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে ড্যান্ডির বোতল আর পলিথিনে। 

  আরো পড়ুন : খেলার জোরে ঢাবিতে পড়ার সুযোগ ৪৯ জনের

প্রক্টর অফিস সূত্রে জানা যায়, বক্সগুলোর কার্যক্রম চালাতে জনবল নিয়োগের কথা ছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি)। জুন মাসে তাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। নিয়োগের বিষয়ে কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানতে চাইলেও কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি ইউজিসি।

“এখন আমরা মানুষ পাচ্ছি না। আমি উপাচার্য স্যারের সাথে কথা বলেছি স্যার জানিয়েছেন আমাদের নিজেদের লোক দিয়ে হলেও  তিনি অন্তত তিনটা বক্স খুব শীঘ্রই চালু করবেন ইউজিসির দিকে আর তাকিয়ে থাকবেন না। ফলে কিছুটা হলেও সফলতা নিশ্চিত হবে”-ঢাবি প্রক্টর 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমরান শরীফ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য কতটা নিরাপদ? দুইদিন পরপর নিজ ক্যাম্পাসে আমাদের শিক্ষার্থীরা বহিরাগত গাড়ির জন্য নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে বিশেষ করে উচ্চমাত্রায় হর্ণ এবং রাতে চলা বড় বড় ট্রাকের জন্য আমরা সমস্যা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সিকিউরিটি বক্সের কাজ কী? কেউ নেই এতে রাতে অবাধে বড় ট্রাক, বাস ক্যাম্পাসে চলাচল করে। এতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ দিন দিন নষ্ট হচ্ছে।

সাড়ে ৩ মাসের বেশি সময় আগে বক্সগুলো উদ্বোধন করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মাকসুদূর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এটা গঠন করা হয়েছে একটা মহৎ উদ্যোগ নিয়ে। বক্স তৈরির আগে ইউজিসি ৩০ জন লোক নিয়োগের কথা নিশ্চিত করা হয়েছিলো। যাদের মধ্যে প্রতি বক্সে পাঁচজন করে ২০ জন থাকবে বক্সগুলোতে এবং বাঁকি ১০ জন স্পেশাল তারা থাকবে শহীদ মিনারে। কিন্তু কি জন্য ইউজিসি লোক নিয়োগ দিচ্ছে না আমরা সেটা জানিনা। 

আরো পড়ুন : টিএসসি-ডাকসু ক্যাফেটেরিয়ায় এক কেজি মুরগি ৪৫ খণ্ডে বিক্রি

তিনি বলেন, এখন আমরা মানুষ পাচ্ছি না। আমি উপাচার্য স্যারের সাথে কথা বলেছি স্যার জানিয়েছেন আমাদের নিজেদের লোক দিয়ে হলেও  তিনি অন্তত তিনটা বক্স খুব শিগগিরই চালু করবেন ইউজিসির দিকে আর তাকিয়ে থাকবেন না। ফলে কিছুটা হলেও সফলতা নিশ্চিত হবে। 

তিনি আরও জানান, যারা নিয়োগপ্রাপ্ত হবে তাদের কাছে এবং প্রত্যেকটা বক্সে ওয়াকিটকি থাকবে এবং পুরো ক্যাম্পাসটা সিসিটিভির আওতাভুক্ত করা হবে। যাতে করে কোনো জায়গায় কোনো অসঙ্গতি দেখা গেলে একগেট থেকে ধরতে না পারলেও ওয়াকিটকি এবং ক্যামেরার মাধ্যমে অন্য গেট থেকে যাতে ধরা যায়। 


সর্বশেষ সংবাদ