চবিতে বিশ্ব নদী দিবস ২০২৩ উদযাপন
- চবি প্রদায়ক
- প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:২৬ PM , আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৩৩ PM
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, রিভার ক্লাব ও গ্রীন ভয়েসের যৌথ আয়োজনে বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে সচেতনতা বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২৫সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি মিলনায়তনে 'আমাদের জনজীবনে নৌপথ' প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ইমাম হাসান সৈকত ও নওশীন তাসনিম নিঝুম এর সঞ্চালনায় এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড.মো.মনজুরুল কিবরীয়ার সভাপতিত্বে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এর আগে সকাল ৯.৩০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি চত্বরের সামনের রাস্তায় নদী সচেতনতামূলক প্লেকার্ড সম্বলিত র্যালির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হয়।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য প্রফেসর বেনু কুমার দে, মূখ্য আলোচক ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার, এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক ছিলেন প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া।
এতে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন মেরিন সায়েন্স এন্ড ফিসারিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. শফিকুল ইসলাম, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড.অলক পাল, ইন্সটিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্ট সায়েন্সের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মো. ইকবাল সারোয়ার, জেলা মৎস্য কর্মকতা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ,নৌ পুলিশের এসপি এএফএম নেজাম উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গ্লীন প্লানেটের প্রতিষ্ঠাতা স্থপতি মিজানুর রহমান, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ এবং হালদা নদী রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য প্রদানকালে প্রভাষক শামসিল আরেফিন বলেন, বাংলাদেশের আদালতে নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই জীবন্ত সত্তা খালে পরিণত হওয়ার আগেই আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কিবরীয়া বলেন, হালদা বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র, যা শুধু বাংলাদেশই নয় বিশ্বের অন্যান্য দেশেও পরিচিতি পেয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একক নদী হিসেবে সর্বোচ্চ অবদান রেখে আসছে এই হালদা নদী। এ কারনেই হালদা নদীকে 'বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়াও তিনি হালদা নদী সংরক্ষনে আইডিএফ, পিকেএসএফ, নৌ পুলিশ, হালদা নদী রিসার্চ ল্যাবরেটরি এবং ২০১৬ সাল থেকে নদী ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
মূখ্য আলোচক কবির বিন আনোয়ার তার বক্তব্যে বলেন, শিক্ষার্থীদের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে হবে; জানতে হবে কিভাবে স্মার্ট উপায়ে নদী রক্ষা করা যাবে। আমাদের সচেতনতার মাধ্যমে রক্ষা পাবে নদী দূষণসহ নানা অনিয়ম। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নদী সংশ্লিষ্ট কাজে খুবই আন্তরিক ।
আলোচনায় প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হালদাকে দূষণ থেকে রক্ষা করার মধ্যমেই আমরা চাইলেই অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করার মতো হালদাকে রক্ষা করতে পারি। শুধু সচেতনতাই না, আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করতে পারলেই এগিয়ে যাবে দেশ।
চৌধুরী ফরিদ বলেন,কর্ণফুলী নদীর গভীরতা আগে ছিল ৯০০ মিটারের বেশি যা বর্তমানে ৪৫০ মিটারে নেমে এসেছে। নদীর তলদেশ ১৮-২০ ফুট ঢেকে গিয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর দূষণের কারণে। সকল নদী ও প্রকৃতি রক্ষা করার মধ্যমেই আমরা আগামী প্রজন্মকে সুরক্ষিত নদী, নগর ও দেশ উপহার দিতে পারবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর বেনু কুমার দে বলেন, শিক্ষার্থীদের নদী বান্ধব হতে হবে। নদী রক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ভূমিকাই পারবে আগামীতে সুন্দর ও স্বচ্ছ ধারার নদীর প্রবহমান চিত্র বজায় রাখতে।
সেমিনারের সভাপতি প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়ার সভাপতিত্বে ও সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে আয়োজনের সমাপ্ত হয়।
উল্লেখ ১৯৯৮ সাল থেকে সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। নদীর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা এবং বাংলাদেশের নদী গুলোর সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশেও পালিত হয় বিশ্ব নদী দিবস। বিশ্ব নদী দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য নদী সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই নদীগুলোর উপকারিতা এবং নদীগুলো দূষণের ফলে যে দুর্যোগ নেমে আসতে পারে তা সম্পর্কে অজ্ঞ। তাই এ বিষয়ে সরকারের আরো গুরুত্বপূর্ন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা না হলে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে এবং আমাদের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়বে বলে মনে করেন বিষেশজ্ঞরা।