চবির সেই ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতারে হলে অভিযান, রুম সিলগালা

  © ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রধান প্রকৌশলী ও প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে মারধরের মামলার আসামিদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে শাহজালাল হলের আশপাশে অভিযান চালিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এ অভিযান চালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলের ৪৩৫ নম্বর কক্ষটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। মামলায় অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজু মুন্সি আবাসিক হলের ওই কক্ষে থাকতেন বলে জানা গেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নুরুল আজিম সিকদার বলেন, ক্যাম্পাসে রাজু মুন্সি যেসব জায়গায় থাকে, আমরা সেসব জায়গায় অভিযান চালাচ্ছি। প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সঙ্গে হলে অভিযান চালিয়েছি। তাকে না পেয়ে তার কক্ষটি আমরা সিলগালা করে দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে তাকে যত দ্রুত গ্রেপ্তার করা যায় সেই ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন ও পুলিশ তৎপর।

হাটহাজারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যা যা করণীয়, আমরা তা করছি।

এর আগে ২৮ আগস্ট  ছাত্রলীগের নেতা রাজু মুন্সি বিরুদ্ধে চাঁদা না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) ছৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল ও প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শেখ আব্দুর রাজ্জাককে মারধর করার অভিযোগ উঠে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তারা উপাচার্য বরাবর আলাদা ভাবে দুটি অভিযোগ জমা দেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে সে সময় প্রকৌশল দপ্তর ক্যাম্পাসে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখেছিল দুই ঘন্টা। পরে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ খোলে দিলেও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ২৪ ঘন্টার মধ্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। অন্যথায় গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় বন্ধের হুশিয়ারি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে হাটহাজারী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা। 

এ ঘটনায় পরের দিন পাল্টা ক্যাম্পাসে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বন্ধের ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করে শাখা ছাত্রলীগের সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতা কর্মীরা। তারা প্রক্টরকে চার ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। 

এই ঘটনা স্বীকার করে সে সময় রাজু মুন্সি বলেছিলেন, আমার প্রতিবাদের ভাষা একটু বাজে। তারা (দুই কর্মকর্তা) অভিযোগ দিয়েছে সমস্যা নাই। আমি তো জামায়াত-শিবির, বিএনপি না। আমার নামে অভিযোগ সামনে আরও হবে। আমাকে পুলিশে নিয়ে গেলে শেখ হাসিনা ফোন দিয়ে ছাড়াবে৷ আমি শেখ হাসিনার রিসার্ভ ফোর্স। নির্বাচনে আমাকে কাজে লাগবে।

অভিযুক্ত রাজু মন্সি শাখা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক গ্রুপ সিক্সটি নাইনের কর্মি। তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইকবাল টিপুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। 

রাজু মুন্সির বিরুদ্ধে এর আগে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে চাঁদার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ বিভাগের নির্মাণাধীন একটি ভবনের কাজ বন্ধে করে দেওয়ার অভিযোগ উঠে।

জানা যায়, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার শাত্রাকান্দার সন্তান রাজু মুন্সি অ্যাকাউন্টিং বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন। কিন্তু রাজু মুন্সি স্নাতক শেষ করেননি। প্রথম বর্ষে কয়েক দিন ক্লাসে এলেও দ্বিতীয় বর্ষ থেকে আর আসেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বর্ষে টানা দুবার ফেল করলে বা পরীক্ষা না দিলে ছাত্রত্ব বাতিল হবে। সেই হিসেবে রাজুর ছাত্রত্ব বাতিল হয়েছিল ২০১৬ সালে।

তাঁর বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ উঠেছিল। গত ১ জুন অনুপস্থিতির কারণে তাঁর দুই কর্মীকে পরীক্ষা দিতে না দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা দিয়ে অবরোধ করেছিলেন রাজু মুন্সি। গত বছরের ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক মো. তানবীর হাসানকে ফোন করে মারধরের হুমকি দেন তিনি। এ ঘটনায় প্রক্টরকে লিখিত অভিযোগও দিয়েছিলেন ভুক্তভোগী শিক্ষক।  

২০১৩ সালের ২৪ জুন রেলওয়ের কোটি টাকার দরপত্রের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী ওরফে বাবর এবং ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল আলম ওরফে লিমনের অনুসারীদের মধ্যে চট্টগ্রামের সিআরবি (রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর) এলাকায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিতে প্রাণ হারান যুবলীগের কর্মী সাজু পালিত (২৮) ও মো. আরমান (৮) নামের এক শিশু। এ ঘটনায় প্রথমে পুলিশ বাদী হয়ে ও পরে সাজু পালিতের মা মিনতি পালিত মামলা করেন। এতে মামলায় তাকে অপরাধী করা হয়। সে মামলায় রাজু মুন্সি জেল খেটে জামিনে মুক্তি হোন। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence