‘হতাশাগ্রস্ত’ ছিলেন ঢাবি শিক্ষার্থী মঞ্জুরুল

শেখ মঞ্জুরুল ইসলাম
শেখ মঞ্জুরুল ইসলাম  © সংগৃহীত

বেশ কিছুদিন ধরে হতাশায় ভুগছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের শিক্ষার্থী শেখ মঞ্জুরুল ইসলাম। অর্থনৈতিক টানপোড়েনেও ছিলেন তিনি। এসব কারণে তিনি কারও সঙ্গে তেমন মিশতেনও না; থাকতেন একা একা। এ হতাশার কারণেই শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারেন বলে মনে করছেন হলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

আজ সোমবার (২১ আগস্ট) বিকেলের দিকে ওই হলের ১৬৫ নম্বর রুমে আত্মহত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের এই শিক্ষার্থী। পরে হল প্রশাসন শাহবাগ থানা পুলিশের সহায়তায় লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেছে। তার বাড়ি তার বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলায়। 

এদিকে, তার ফেসবুকের সর্বশেষ প্রোফাইল পিকচারে মৃত্যু নিয়ে কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের একটি উক্তি লেখা দেখা গেছে। সেই উক্তিতে বলা আছে, “মৃত্যু কি সহজ, কি নিঃশব্দে আসে অথচ মানুষ চিরকালই জীবন নিয়ে গর্ব করে যায়।”

ওই ছাত্রের ফেসবুক আইডি

জানা যায়, আজ বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে। হলের ওই রুমে মঞ্জুরসহ মোট আটজন শিক্ষার্থী থাকতেন। বিকেলে রুমের অন্য সদস্যরা যখন বাইরে ছিলেন, তখনই সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দেন তিনি। পরবর্তীতে তাকে ঝুলন্ত অবস্থান দেখতে পান অন্য এক রুমমেট। পরে তিনি হল প্রশাসনকে খবর দেন।

রুমমেটরা মঞ্জুর আত্মহত্যার কারণ নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেন না। তবে তারা বলছেন, মঞ্জুর কিছুদিন ধরে অর্থনৈতিক সমস্যা ও হতাশায় ভুগছিলেন। হয়তো এ কারণে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।

ফরহাদ হোসেন নামে তার এক রুমমেট জানান, আজ সকাল ৭টার দিকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির উদ্দেশ্যে রুম থেকে বের হয়েছেন। তারপর আর হলে আসেনি। এখন (ঘটনার সময়) এসে মঞ্জুরকে এই অবস্থায় দেখছেন তিনি।

শাহবাগ থানার উপ পরিদর্শক (এস আই) মো. টিপু সুলতান জানান, আমরা এসে ঝুলন্ত লাশ পেয়েছি এবং উদ্ধার করেছি। তার সাথে কোন সুইসাইডাল নোট পাওয়া যায়নি৷ আমাদের ফরেনসিক বিভাগ আলামত সংগ্রহ করেছে এবং ময়নাতদন্তের পরে ঘটনার মূল কারণ জানা যাবে। 

হলের সেই কক্ষের টেবিলে ওই ছাত্রের বই-খাতা পড়ে আছে

হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইকবাল রউফ মামুন বলেন, ঘটনাটি শোনার পরে আর রুমে প্রবেশ করিনি। যে ছেলেটা দেখেছে সেও রুমে ঢুকেনি। পরে পুলিশের সাথে আমরা রুমে ঢুকেছি। গিয়ে দেখি তার শরীর শক্ত হয়ে আছে।  

সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন,  প্রাথমিকভাবে কোন সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। তার ল্যাপটপ, খালি খাতা ও একটি ডায়েরি আলামত হিসেবে নিয়ে গেছে। কিছুদিন ধরে সে হতাশাগ্রস্ত ছিল। একা একা বসে থাকতো কারো সাথে তেমন মিশতো না। তবে ময়নাতদন্তের পরে বিস্তারিত জানতে পারবো।

হলের ১৬৫ রুমে এ ঘটনা ঘটেছে

ঘটনার পর পরিদর্শনে এসে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর অপমৃত্যু এটি কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি এমন এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যা ভাষায় প্রকাশ করার মতোও নয়। 

তিনি বলেন, ঘটনার পর পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা, সিআইডি ও ফরেনসিক টিম এসে ঘটনার তদন্ত করছেন যেখানে হল প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। অনেকে বলছে সে হতাশাগ্রস্থ ছিলো। তবে বিস্তারিত ঘটনা ময়নাতদন্তের পরে আমরা জানতে পারবো।


সর্বশেষ সংবাদ