ইবিতে ছাত্র হলে র্যাগিংয়ের নামে যৌন হয়রানির অভিযোগ!
- ইবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৩, ১১:৫২ PM , আপডেট: ২১ জুন ২০২৩, ১২:৩৭ AM
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) গণরুমে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এক নবীন শিক্ষার্থীকে দফায় দফায় শারীরিক নির্যাতন ও যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আফিফ হাসান ও তন্ময় বিশ্বাসসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
সোমবার (১৯ জুন) রাত ২টায় লালন শাহ হলের ১৩৬ নং গণরুমে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হল ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী একটি মেসে অবস্থান করছেন।
এ ঘটনায় ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, ১৯ জুন রাত ২টায় তাকে ১৩৬ নং গণরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অফিফ, তন্ময়সহ কয়েকজন তাকে মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন করে। এছাড়াও তাকে যৌন হয়রানি করা হয়।
পরে সে জিয়া মোড় আসে। জিয়া মোড় থেকে হলে গেলে হলগেটে আফিফ ও তন্ময় তাকে আবারও মারধর শুরু করে এবং মারতে মারতে জিয়া মোড় নিয়ে আসে। এসময় তার জামা ছিড়ে যায় ও চশমা ভেঙ্গে যায়। পরে বিচার করার জন্য ছাত্রলীগের রুমে নিয়ে আবার মারধর করে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান তিনি।
ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, ওইদিন রাতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হলের ছাদে মোবাইলে কথা বলছিলেন। পরে আফিফ ও তন্ময় তাকে ১৩৬ নং রুমে ডাকেন। তারা ম্যানার (ভদ্রতা) শিখানোর নাম করে তাকে মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির শিকার হন বলে জানান।
এসময় সে রুম থেকে পালিয়ে পুকুর পাড়ে চলে যায়। পরে ভুক্তভোগী তার বিভাগের বড় ভাই ও শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ফাহিম ফয়সালকে বিষয়টি জানায়। পরে ফাহিম এসে ভুক্তভোগীকে হলে নিয়ে গেলে হল গেটে তাকে ধাক্কা দিয়ে আবার তারা ভুক্তভোগীকে মারধর করেন। পরে বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের রুমে তাকে নিয়ে যায়। সেখানে কথা বলার সময় তারা ভুক্তভোগীর উপর আবারও চড়াও হয়। পরে ভুক্তভোগী হল ছেড়ে ক্যাম্পাস পার্শবর্তী মেসে গিয়ে উঠেন।
অভিযুক্ত আফিফ বলেন, এরকম কোন ঘটনা ঘটেনি। এমনিতেই একটু মনমালিন্য হয়েছিল। পরে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জয় ভাই সমাধান করে দিয়েছে। আরেক অভিযুক্ত তম্ময় একই কথা বলেন।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, সেদিন রাতে আমি হল গেটে ধাক্কাধাক্কি দেখে তাদের ডেকে বিষয়টা মিমাংসা করে দিয়েছিলাম। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ভুক্তভোগী বিকালে জানিয়েছেন যে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে অভিযোগ উইথড্র করে নিয়েছে।
তবে অভিযোগ উইথড্র করার বিষয়ে কিছু জানাননি ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন। তিনি বলেন, আমি অভিযোগ পত্র হাতে পেয়েছি। অভিযোগপত্রে লিখে দিয়েছি বিষয়টি আমলে নেয়া হলো এবং তারাতারি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযুক্তদের ডেকে তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। তিনি আরো বলেন, আগামীকাল অভিযুক্তদের ডেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘আমার অফিসের কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছে শেষ সময়ে একটি অভিযোগ এসেছে। আমি এখনো দেখিনি সে কী লিখেছে। কাল অফিসে গিয়ে বিষয়টি দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’
এর আগে, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে এক নবীন শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। পরে অভিযুক্ত ৫ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। তবে ওই ঘটনার ৪ মাস পেরিয়ে গেলেও কোন সুরাহা হয়নি।