জাবির প্রো-ভিসি পদে নিয়োগের আলোচনা ছেয়ে গেছে সমালোচনায়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) পদটি প্রায় ৮ মাস শূন্য থাকলেও হঠাৎ চলছে প্রো-ভিসি নিয়োগের গুঞ্জন। তবে কে হচ্ছেন ক্যাম্পাসের পরবর্তী উপ-উপাচার্য তা নিয়ে আলোচনা ছেয়ে গেছে সমালোচনায়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফী ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ এবং সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক বশির আহমেদের নাম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে অধ্যাপক কাফীর বিরুদ্ধে রয়েছে যৌন হয়রানির একাধিক অভিযোগ যার একটিতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। আর অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজের বিরুদ্ধে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি থাকাকালীন সময়ে ভর্তি পরীক্ষা কমিটি গঠনে পক্ষপাতদুষ্টতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে।

মূলধারার বিভিন্ন গণমাধ্যম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, অধ্যাপক কাফির বিরুদ্ধে ছাত্রাবস্থা থেকে শিক্ষক থাকাকালীন সময় পর্যন্ত যৌন নিপীড়নের ২টি, ১টি ফৌজদারী মামলার চার্জশিটে অভিযুক্ত ছিলেন।

 ১৯৯৬ সালে এমফিলের ছাত্র থাকাবস্থায় সাভারস্থ একজন প্রকৌশলীর স্ত্রীর সাথে যৌন হয়রানিমূলক আচরণ করেন এবং সেখানে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একজন শিক্ষকের নাম ব্যবহার করেন। এ  বিষয়ে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রয়াত অধ্যাপক আফসার আহমেদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তৎকালীন প্রশাসনকে ব্যবহার করে এ তদন্ত অসম্পূর্ণ রাখা হয় বলেও জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক।

অধ্যাপক কাফিকে পদাবনতি ও বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব থেকে অপসারণ করার শাস্তি দেওয়া হয়। ২০১০ সালের ৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রার আবু বক্কর সিদ্দিক স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ থেকে এ তথ্য জানা যায়। 
 
এছাড়াও অধ্যাপক কাফির বিরুদ্ধে রয়েছে ডাকাতির অভিযোগে নিজ গ্রামের মানুষের মামলা। সেসময় এলাকাবাসীর পক্ষে মামলাটি করেন আয়নাল হক। মামলা নম্বর ছিল ১৭। মামলায় তাকে প্রধান আসামি করে ৬ মার্চ ২০০০ তারিখে চার্জশিট দেওয়া হয়।

এসব অভিযোগ নিয়ে অধ্যাপক কাফি বলেন, প্রথম অভিযোগটি মিথ্যা ও বানোয়াট। দ্বিতীয় অভিযোগের (শিক্ষিকার করা অভিযোগ)  কোনো ভিত্তি পায়নি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি। তৃতীয় অভিযোগটি মিথ্যা হওয়ায় বাদী মামলাটি প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। 

তবে একই বিভাগের নারী শিক্ষিকার করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে অধ্যাপক কাফি তার বক্তব্যের সমর্থনে কোনো অফিস আদেশ বা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেখাতে পারেন নি। তিনি দুয়েকটি পত্রিকার ক্লিপ দেখিয়েছেন যেখানেও কোনো স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায় নি। এর একটি, ভুঁইফোড় অনলাইনে অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে উদ্বৃত্ত করে অধ্যাপক কাফিকে নির্দোষ দাবি করা হয়েছে। 

তবে এ ব্যাপারে ওই তদন্ত কমিটির প্রধান ও সাবেক তথ্য কমিশনার অধ্যাপক খুরশিদা বেগম বলেন, আমরা তথ্য প্রমাণ নিয়েই কাজ করেছিলাম। আর প্রমাণ না থাকলে কিসের ভিত্তিতে সুপারিশ করেছে কমিটি? আর অভিযোগ মিথ্যা হলে অভিযোগকারী অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট নিয়ে উনি কেন চ্যালেঞ্জ করেন নি? আর যতটুকু মনে পড়ে আমি কম শাস্তির পক্ষে ছিলাম বরং অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম তাকে চাকুরী থেকে বরখাস্তের পক্ষে ছিলেন। 
হাইকোর্টের গাইডলাইন মেনেই তদন্ত কমিটি কাজ করেছিল।

 অধ্যাপক কাফীর নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন?

অধ্যাপক কাফির শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ ও তার একাডেমিক যোগ্যতা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। ১৯৯৯ সালের ৬ অক্টোবর তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আলাউদ্দিন আহমেদের বিশেষ ক্ষমতাবলে অ্যাডহক ভিত্তিতে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে ২বার নিয়োগের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হন তিনি। এছাড়াও সিন্ডিকেটে তার নিয়োগের ব্যাপারটি সিলেকশন কমিটিতে পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের হলেও তার সিলেকশন বোর্ডে ছিলেন ইতিহাস বিভাগের দুজন অধ্যাপক। অভিযোগ রয়েছে তাকে নিয়োগ দিতেই এ বোর্ড করা হয়েছিল। 

এসব নিয়ে অধ্যাপক কাফী বলেন, এডহক হিসেবে নিয়োগ পাওয়াটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম বহির্ভূত নয়। আমার নিয়োগ বোর্ডে ইতিহাস বিভাগের কেউ ছিল না। নিয়োগ বোর্ডে ওই সময়কার প্রো ভিসি তাজুল স্যার ছিল। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন  সভাপতি আতাউর রহমান স্যার ছিল। তিনি বলেন, আমি পরবর্তীতেও কখনও নিয়োগের অযোগ্য বিবোচিত হই নি। এসএসসি পরীক্ষায় আমার ৬৪৩ নম্বর ছিল। স্নাতকে আমার সেকেন্ড ডিভিশন ছিল। সর্বমোট ৫৮% নাম্বার ছিল। বিভাগের মধ্যে ২য় ছিলাম। 

তিনি আরও বলেন, আমি আলাউদ্দীন স্যারের আমলে যোগ্যতার পরিচয় দিয়েই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছি। কোনোরকম বাটপারি (প্রতারণা) করে টিচার হইনি। নিজের যোগ্যতা দিয়েই হয়েছি।

অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি থাকাকালীন সময়ে ভর্তি পরীক্ষা কমিটি গঠনে পক্ষপাতদুষ্টতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। এ সময়ে তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক মফিজুল কবির টানা তিনবার ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান। অধ্যাপক ফিরোজ ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা ও অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়নে জালিয়াতির পৃষ্ঠপোষক ও প্রশ্রয়দাতা ছিলেন বলেও জানান অনেকেই। পরে তৎকালীন প্রশাসন ওই বিভাগে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি স্থগিত করেন। এ ছাড়া একই সময়ে একই শিক্ষাবর্ষে তিনবার ২য়, ৩য় ও ৪র্থ স্নাতক (সম্মান) পর্বে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক রাজনীতিতে কখনও সক্রিয় ছিলেন না, যে কারণে দলের কোনো পদেও তাকে দেখা যায়নি। এছাড়াও বিএনপির রাজনীতির সাথে তার সংশ্লিষ্টতা  র অভিযোগও রয়েছে। জানা গেছে তিনি বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের কোনো পদেও নেই।

এ নিয়ে মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ বলেন, আমি কখনোই এ ধরণের কাজের সাথে (ভর্তি পরীক্ষায় স্বজনপ্রীতি)  জড়িত ছিলাম না। আওয়ামী রাজনীতিতে তার অবদান ও বিএনপি রাজনীতি সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence