জুতা কিনতে গিয়ে দোকানিকে মারধরের অভিযোগ জাবি ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে
- জাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৩, ০৯:০০ PM , আপডেট: ০৬ মে ২০২৩, ০৯:০০ PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) সংলগ্ন ইসলামনগর বাজারে জুতা কিনতে গিয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে এক জুতার দোকানি ও কর্মচারিকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে। শুক্রবার (৫ মে) সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাভারের ইসলামনগর এলাকায় ‘মেসমেরাইজ’ নামের জুতার দোকানে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্তরা হলেন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন ওরফে নাহিদ এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের একই ব্যাচের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান ওরফে জয়। তাদের মধ্যে সাব্বির হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং মেহেদী হাসান সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন। তারা উভয়েই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী বলে পরিচিত।
ঘটনার সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় ইসলামনগর বাজারে সাব্বির ও মেহেদী জুতা কিনতে গেলে দোকানের কর্মচারী মিরাজুল ইসলামকে জুতা পালিশ করার জন্য তাড়া দেন। একপর্যায়ে ওই কর্মচারীর সঙ্গে সাব্বিরের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সাব্বির ওই কর্মচারীকে মারতে মারতে দোকানের ভেতর থেকে বাইরের রাস্তায় নিয়ে আসেন। রাস্তায় কয়েক দফায় মারতে থাকেন। একপর্যায়ে ওই কর্মচারীকে কান ধরিয়ে ওঠবস করানো এবং পা ধরে মাফ চাওয়ানো হয়। এ সময় দোকানির বড় ভাই সাবেক বুয়েট শিক্ষার্থী নেওয়াজ থামানোর চেষ্টা করলে তাঁকে থাপ্পড় মারেন মেহেদী হাসান।
প্রত্যক্ষদর্শী মাসুদ খান গণমাধ্যমকে বলেন, জুতা পালিশ করতে দেরি হওয়ায় আমাদের সামনে কর্মচারীকে মারধর শুরু করে। সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে সব আছে। আমরা অশিক্ষিত মানুষেরা ভুল করতে পারি। তাই বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে এভাবে মারবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না।
ভুক্তভোগী কর্মচারী মিরাজুল ইসলাম বলেন, জুতা কেনার পর স্বাভাবিকভাবে আমি পালিশ করতে থাকি। তারা তাড়াহুড়ো শুরু করলে আমি একটু সময় লাগবে বলে জানাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁরা আমাকে বেধড়ক কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে। আমি কান ধরে ওঠবস এবং পা ধরে মাফ চাওয়ার পরও আমাকে মারতে থাকে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
দোকানের মালিক রোমেন রায়হান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২ ব্যাচের শিক্ষার্থী । তিনি বলেন, আমি ঘটনার সময় বাইরে থেকে এসে আমার কর্মচারীকে পেটাতে দেখে ক্যাম্পাসের বড় ভাই পরিচয় দেওয়ার পরও তারা মারধর করতে থাকে। আমার বড় ভাইকেও চড়-থাপ্পড় দিয়েছে। তারা যাওয়ার সময় দোকান বন্ধ রাখার জন্য বলে গেছে। এমন অবস্থায় আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ আমি নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
তবে এ ঘটনায় আজ আশুলিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানান তিনি।
আশুলিয়া থানার উপ–পরিদর্শক (এসআই) সোহেল খন্দকার বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ দেয়ার কথা কথা শুনেছি। ইতিমধ্যে সেটা তদন্তের জন্য আমাকে বলেছে। তদন্তের আগে বিষয়টি নিয়ে এখনই বিস্তারিত বলতে পারছি না।
এদিকে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দুই অভিযুক্তই।
মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে মেহেদী হাসান বলেন, দর কষাকষির পর জুতার দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা ঠিক করে ১৫০০ টাকা দিলে ফিরতি টাকাতে তারা আমাদের ৫০ টাকা দেয়। এতে ওই জুতার রসিদ চাইলে তারা দেখাতে ব্যর্থ হয়। একজন ভোক্তা হিসেবে তারা আমাদের অধিকার ক্ষুন্ন করেছে।
আরেক অভিযুক্ত সাব্বির হোসেন বলেন, তারা আমাদের থেকে জুতার দাম কম রাখার কথা বলে বেশি রেখেছে। এতে আমরা প্রতিবাদ করলে মিরাজ নামের ওই কর্মচারী আমাদের ওপর হামলা করে। ঘটনার সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে মারধর করতে দেখা গেছে বললে সাব্বির বলেন, ‘ওরা আগে এসে হামলা করলে আমরা আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করি, এতে দুই পক্ষের হাতাহাতি হয়। কোনো মারামারি হয়নি।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, বিষয়টা আমি অবগত, ছাত্রলীগের ভিতরে এসব কাজ কখনোই কাম্য না। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।