আইসিটি আইনের দুই মামলায় ৮ মাস কারাগারে জবি ছাত্রী খাদিজা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:০৫ PM , আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:০৫ PM
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা ২ মামলায় প্রায় ৮ মাস ধরে কারাগারে আছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা। গত বছর ২৭ আগস্ট (শনিবার) রাতে নিউ মার্কেট থানার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছিলো। এরপর তাকে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এ সময় আসামিপক্ষে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বিচারিক আদালতে দুবার ওই শিক্ষার্থীর জামিন আবেদন নাকচ হয়। পরে গত ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্ট তাঁর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার বিচারপতি।
মূলত, ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর নিউ মার্কেট থানার উপপরিদর্শক খাইরুল ইসলাম বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ২৫/২৯/৩১/৩৫ ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খাদিজাতুল কোবরা ও অবসর মেজর দেলোয়ারকে আসামি করা হয়। মামলায় আইনশৃঙ্খলা অবনতির ঘটানোর জন্য আক্রমনাত্মক ও মানহানিকর তথ্য ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার ও প্রচারে সহয়তার করার অপরাধ উল্লেখ করা হয়েছে। এ মামলার তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।
এরপর ৭ জুলাই সাইবার ট্রাইব্যুনাল এ মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বাদী ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর মেজর দেলোয়ার হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলে ‘হিউম্যানিটি ফর বাংলাদেশ was live’ শিরোনামে এক ভিডিও দেখতে পান। সেখানে সঞ্চালক খাদিজাতুল কুবরার উপস্থাপনায় মেজর দেলোয়ার হোসেন (অব:) তার বক্তব্যে বাংলাদেশে বৈধ গনতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি খাদিজাতুল কুবরা ও মেজর দেলোয়ার (অব:) তাদের ইউটিউব চ্যানেল ও ব্যক্তিগত ফেইসবুক পেইজগুলোতে ভিডিও আপলোড করে বাংলাদেশে চলমান স্থিতিশীল পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের মিথ্যা তথ্যপূর্ণ আলোচনা ইউটিউব, ফেইসবুকে প্রচার করে বাংলাদেশের সাধারণ জনগনকে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে উসকানি দিয়ে তাদেরকে দেশ ও সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত করার চেষ্টা করে। তাদের মনগড়া মিথ্যা তথ্য এবং উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচারের মাধ্যমে সরকার বিরোধী মনোভাব তৈরি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে ও বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। তারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের বৈধ সরকারের পতনের উদ্দেশ্যে দেশের প্রধানমন্ত্রী, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মনগড়া, বানোয়াট, মিথ্যা মানহানিকর অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। তারা এমন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, বিদ্বেষ, ঘৃণা সৃষ্টির অপচেষ্টাসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের কার্যক্রম চালাচ্ছে। খাদিজাতুল কুবরা ও মেজর দেলোয়ার (অব.) তাদের আত্মীয় স্বজন এবং বন্ধু বান্ধবের সহায়তায় অনলাইনে এই ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
নিউমার্কেট থানায় মামলা করার আট দিনের মাথায় কলাবাগান থানায় আরেকটি মামলা করেন এসআই আরিফ হোসেন। কলাবাগান থানার মামলার এজাহারেও উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর রাত ৯টা ১৫ মিনিটে মুঠোফোনে ইউটিউব দেখার সময় দেলোয়ার হোসেনের ইউটিউব চ্যানেল দেখতে পান। ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি থানায় মামলা করেন। দুই মামলার অভিযোগের ভাষ্য প্রায় একই রকম।
মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর খাদিজাতুল কুবরাকে গ্রেপ্তার করে নিউমার্কেট থানা-পুলিশ। তাঁর পক্ষে জামিন চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করা হয়। আদালতকে লিখিতভাবে জানানো হয়, খাদিজাতুল কুবরার কিডনিতে পাথর ধরা পড়েছে। আবেদনের সঙ্গে চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রও জমা দেওয়া হয়।
খাদিজাতুল কুবরার আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া গণমাধ্যমকে বলেন, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীর জামিন দেন হাইকোর্ট। তবে চেম্বার বিচারপতি ওই আদেশ স্থগিত করেন।
তিনি বলেন, খাদিজাতুল কুবরা সম্পূর্ণ নিরপরাধ। হয়রানির উদ্দেশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে।
অপরদিকে খাদিজাতুল কুবরার মুক্তি দাবি করেছেন তাঁর বোন মনিরা খাতুন। তিনি বলেন, আমার বোনের নামে মামলা হয়েছে, সেটি জানতাম না। রাতে মিরপুরের বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ।
এর আগে গত মাসে কারাগারে থাকা খাদিজাতুল কুবরাকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে এমন অভিযোগও উঠেছ। যদিও এই সেলে কেবলমাত্র ফাঁসির আসামিদের থাকা কথা।
জবি ছাত্রীকে কনডেম সেলে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মো. ওবায়দুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, খাদিজা কারা হাসপাতালের যন্ত্রপাতি এবং চিকিৎসককে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। একজন চিকিৎসকের সাথে তিনি খুবই বাজে ব্যবহার করেছেন। সেজন্য তাকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেছিলেন, কারাগারে থাকাকালীন কেউ অসদচারণ করলে তাকে শাস্তি হিসেবে শাস্তিমূলক সেলে রাখা হয়। খাদিজাকেও তার খারপ আচরণের জন্য এই সেলে রাখা হয়েছে। তবে এটি কনডেম সেল নয়। গত ২২ মার্চ থেকে তিনি শাস্তিমূলক সেলে রয়েছেন। আগামী ২৭ মার্চ তার শাস্তি শেষ হবে। এরপর আবার তাকে সাধারণ সেলে পাঠানো হবে।