রাবির উর্দু বিভাগ

আন্দোলনে উস্কানি, আর্থিক অনিয়মসহ নানা অভিযোগ সভাপতির বিরুদ্ধে

আন্দোলনে উস্কানি, আর্থিক অনিয়মসহ নানা অভিযোগ সভাপতির বিরুদ্ধে
আন্দোলনে উস্কানি, আর্থিক অনিয়মসহ নানা অভিযোগ সভাপতির বিরুদ্ধে  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উর্দু বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, বিধিবহির্ভূত ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন বিভাগটির একাডেমিক কমিটির ৫ শিক্ষক। বৃহস্পতিবার (৯মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর দেওয়া তিন পৃষ্ঠার ওই স্মারকলিপিতে উর্দু বিভাগের ফল বিপর্যয়ের অভিযোগের ঘটনায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর তাঁর ইন্ধন আছে অভিযোগ করা হয়েছে। 

স্মারকলিপি প্রদান করেন একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নাসির উদ্দিন, অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ শহীদুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. উম্মে কুলসুম আকতার বানু, ড. মো. মোকাররম হোসেন মণ্ডল ও ড. মো. সামিউল ইসলাম। 

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, সভাপতির অনুগত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে আন্দোলনের নামে বিভাগে বারবার তালা লাগিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত করা, পরীক্ষা কমিটিতে থাকা শিক্ষকদের সাথে অসহযোগিতা ও অসৌজন্যমূলক আচরণ, শিক্ষকদের তোয়াক্কা না করা, বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট করা, শিক্ষার্থীদের সাথে অশালীন ভাষায় কথা বলা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা জিডি করা, অফিসে সময় না দিয়ে চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়া, তিন লক্ষাধিক টাকা নিজ কাজে ব্যয়, ক্লাস রুটিনের তোয়াক্কা না করে ছুটির দিনে (শুক্রবার ও শনিবার) ক্লাস নেওয়াসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে স্মারকলিপিতে।

স্মারকলিপিতে শিক্ষকরা বলেন, উর্দু বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আতাউর রহমান সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কোনো রকম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করেন না। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি বহির্ভূত ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং স্বেচ্ছাচারী আচরণ করে আসছেন। যার মাত্রা বর্তমানে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। ফলে বিভাগ সেশন জটের কবলে পড়েছে এবং শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে হুমকি ধামকি প্রদান করেন এবং অশালীন ভাষায় কথা বলেন।

স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ১ম বর্ষ ২য় সেমিস্টার পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর সভাপতির অনুগত এম.এ. শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আল মারুফুল ইসলাম, চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আল মেরাজ শুভ এবং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দীন খানের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বায়েজীদ হোসাইন ও জাহিদ হাসানের নেতৃত্বে আন্দোলনের নামে বিভাগে বারবার তালা লাগিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম ব্যহত ও বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। এতে উর্দু বিভাগ তথা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

২০২০ সালের ১ম বর্ষ ২য় সেমিস্টার পরীক্ষার ফলাফল ৬ মাস পূর্বে প্রকাশিত হলেও তিনি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অদ্যাবধি দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তির ব্যবস্থা করেননি। এছাড়া সকল কোর্স সমাপ্ত হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বার বার বলার পরেও তিনি ২০২১ সালের ১ম বর্ষ ২য় ও ২য় বর্ষ ১ম সেমিস্টার পরীক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপ ও পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করছেন না। তিনি পরীক্ষা কমিটির শিক্ষকদের সাথে অসহযোগিতা ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।

স্মারকলিপিতে শিক্ষকরা বলেন, তিনি বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। সর্বশেষ একাডেমিক কমিটির ৩৩ তম সভার সিদ্ধান্ত নম্বর- ৫(খ) পরিবর্তন করে ২০২১ সালের ২য় বর্ষ (১ম ও ২য় সেমিস্টার) পরীক্ষা কমিটিতে দেন সহদের একজন শিক্ষকের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। কার্যবিবরণী নিশ্চিত করণের সময় অধিকাংশ সদস্য বলার পরেও তিনি সংশোধন করেন না। একাডেমিক কমিটির সদস্যদের মতামতকে উপেক্ষা করে নিজের মতো করে বিভাগ পরিচালনা করার চেষ্টা করেন।

তিনি সভাপতির কক্ষে অফিস চলাকালীন সময়ে তাঁর অনুগত বর্তমান শিক্ষার্থীদের শিক্ষকদের চেয়ারে বসায়ে আড্ডা দেন জানিয়ে তারা বলেন, শিক্ষকরা বার বার আপত্তি জানালেও তিনি কোন কর্ণপাত করেন না। গত ১৮ ডিসেম্বর বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনাল খেলার দিন এম.এ শিক্ষার্থী আল মারুফুল ইসলামের নেতৃত্বে গভীর রাত পর্যন্ত বিভাগের শিক্ষকদের না জানিয়ে সভাপতির কক্ষে শিক্ষকদের চেয়ারে বসায়ে বর্তমান ও সাবেক ছাত্র ছাত্রীদের সাথে হৈচৈ ও আনন্দ উল্লাস করেছেন, যা সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

শিক্ষকরা বলেন, বিভাগের অনেক প্রয়োজনীয় কাজের কথা তাঁকে বললে তিনি অর্থাভাবে কাজ করা সম্ভব নয় মর্মে আমাদেরকে অবগত করেন। অথচ তিনি বিভাগের তিন লক্ষাধিক টাকা ব্যক্তিগত কাজে খরচ করেছেন। বারবার বলার পরেও তিনি অদ্যাবধি উক্ত টাকা ফেরত দেননি। আবর্তক খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে একটি পানির ফিল্টার ক্রয়ের অনুমোদন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২২ সালে ৩০০০০ টাকা উত্তোলনের ব্যবস্থা করলেও অদ্যাবধি বিভাগে পানির ফিল্টার স্থাপন করেননি।

বিভাগের ক্রয় কমিটির দুইজন সদস্যকে পক্ষে রাখতে ড. মো. রশিদুল আলমের চেম্বারে সভাপতির কক্ষের অনেকগুলি মূল্যবান ফার্নিচার এবং অধ্যাপক ড. হোছাইন আহমদ কামালীর চেম্বারে এসি ও নগদ লক্ষাধিক টাকা প্রদান করেছেন। ড. মো. রশিদুল আলম আঞ্চলিকতার টানে বিভাগীয় সভাপতির সকল অনিয়ম ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড সাপোর্ট করেন এবং তাঁকে খুশি করতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যা জিডি করেন। 

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, সভাপতিকে অফিসে নিয়মিত পাওয়া যায় না। অধিকাংশ সময় তিনি সিরাজী ভবনের সামনে আড্ডা দেন এবং চায়ের স্টলে বসে অফিসিয়াল কার্যক্রম (স্বাক্ষর) পরিচালনা করেন। প্রতিটি ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থীকে নিজের অনুগত রাখার কৌশল হিসেবে তিনি ইনকোর্স পরীক্ষায় ১০০% নম্বর প্রদান করেন। ক্লাস রুটিন অনুযায়ী ক্লাস না নিয়ে তিনি সাপ্তাহিক ছুটির দিন (শুক্র ও শনিবার) ক্লাস নেন। এতে শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হয়।

তাঁর একান্ত অনুগত বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দীন খান এবং বর্তমান চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আল মেরাজ শুভ ‘আয়োজনে: উর্দু বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’ লিখে ব্যানার তৈরি করে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনে বিভাগের ১০-১২ জন শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের নিয়ে মানব বন্ধন করে। এতে উর্দু বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। বিভাগের নামে মানব বন্ধন আয়োজনের অনুমতি দিয়েছেন কিনা সভাপতির নিকট জানতে চাইলে তিনি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। অতঃপর মানব বন্ধন আয়োজনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বললে তিনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। 

এতে বলা হয়েছে, বোরহান উদ্দীন খান প্রাইভেট পড়ানোর নামে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে তাদের মাধ্যমে বিভাগে বারবার তালা লাগিয়ে। একাডেমিক কার্যক্রম ব্যহত ও বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। 

বিভাগীয় সভাপতি ড. মো. আতাউর রহমানের বিধিবহির্ভূত ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং স্বেচ্ছাচারী আচরণের কারণে উর্দু বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষকরা বলছেন, যদি তাঁকে বিধি বহির্ভূত ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা না যায় তাহলে উর্দু বিভাগ সেশন জটের কবলে পড়বে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে।

তবে এসব অভিযোগ অসত্য জানিয়ে উর্দু বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আতাউর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সমাজে আমার মানসম্মান ক্ষুণ্ণ করার জন্য এ অভিযোগ করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence