নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই কর্মকর্তাদের ঋণ ইউজিসির, ব্যাখ্যা চায় অডিট

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি)
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি)  © ফাইল ফটো

গৃহনির্মাণের কিংবা ফ্ল্যাট কেনার জন্য সরকার ঘোষিত নীতিমালা অনুসারে ঋণ পান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কর্মকর্তারা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই কর্মকর্তাদের বাড়ি নির্মাণে প্রায় দেড় কোটি টাকা অতিরিক্ত ঋণ দিয়েছে ইউজিসি। প্রাপ্যতার অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টির ব্যাখ্যা চেয়েছে শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে অধিদপ্তরের অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সী জানান, ‘কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেড অনুযায়ী বাড়ি নির্মাণে ঋণ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। ইউজিসির যে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাদের ‘কুয়েরি’ পাঠানো হয়েছে। ব্যাখ্যা পাওয়ার বিস্তারিত বলা যাবে।’

প্রাপ্যতার অতিরিক্ত অর্থ অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। লোন অনুমোদনের সময় ইউজিসির অর্থ, হিসাব ও বাজেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব পালনকালে প্রাপ্যতার বাইরে কাউকে অতিরিক্ত অর্থ দিয়েছি বলে মনে হয় না। সর্বোচ্চ সীমার বাইরে টাকা দেওয়ার সুযোগ নেই।’

ইউজিসির কর্পোরেট সাধারণ গৃহ নির্মাণ ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী ৫ম গ্রেড ও তদূর্ধ্ব কর্মচারীদের জন্য ৭৫ লাখ টাকা, ৯ম গ্রেড হতে ৬ষ্ঠ গ্রেড ৬৫ লাখ, ১৩তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেড ৫৫ লাখ, ১৭তম গ্রেড হতে ১৪ ম গ্রেড ৪০ লাখ এবং ২০তম গ্রেড হতে ১৮তম গ্রেড পর্যন্ত ৩৫ লাখ টাকা সর্বোচ্চ সিলিং নির্ধারণ করা হয়। এ পরিমাণ অর্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকরি জীবনের শেষ দিকে পেয়ে থাকেন।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ নীতিমালায় ঋণের সিকিউরিটি হিসেবে জমি বা ফ্ল্যাট সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে বন্ধক হিসেবে রাখতে হয়। তবে কমিশনের ত্রুটিপূর্ণ কর্পোরেট সাধারণ গৃহনির্মাণ ঋণের বিপরীতে সিকিউরিটি হিসেবে শুধু কর্মচারীর পেনশন আনুতোষিক বন্দক হিসেবে রাখা হয়। নীতিমালায় সিলিং যাই থাকুক না কেন, একজন কর্মচারী ঋণ দেওয়ার সময় তার চাকরির বয়স অনুযায়ী প্রাপ্য পেনশন ও আনুতোষিকের চেয়ে বেশি ঋণ দেওয়ার সুযোগ নেই। ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয়নি।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ইউজিসির এক কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা অনেকে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করলেও বাড়ি তৈরির জন্য ঋণ পাচ্ছি না। অথচ একই ব্যক্তি একাধিকবার লোন পাচ্ছে। কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান, সদস্যসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের জোগসাজসে প্রাপ্যতার বাইরে দ্বিগুণ অর্থ ঋণ হিসেবে নিয়েছেন অনেকে। ইউজিসি কীভাবে প্রাপ্যতার অতিরিক্ত দেয়? এই অর্থের উৎস কী?’

প্রাপ্যতার অতিরিক্ত অর্থ অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। লোন অনুমোদনের সময় ইউজিসির অর্থ, হিসাব ও বাজেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব পালনকালে প্রাপ্যতার বাইরে কাউকে অতিরিক্ত অর্থ দিয়েছি বলে মনে হয় না। সর্বোচ্চ সীমার বাইরে টাকা দেওয়ার সুযোগ নেই।’

কমিশনের সাবেক সহকারী সচিব (৯ম গ্রেড) মোহা. মামুনুর রশিদ খান বাড়ি নির্মাণের জন্য সর্বোচ্চ ঋণ সীমা ১৩ লাখ ২১ হাজার ৩৮৭ টাকা। তিনি অতিরিক্ত ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৫২ টাকাসহ সব মিলিয়ে ঋণ নিয়েছেন ৬১ লাখ ৬৫ হাজার ৪১৩ টাকা। বর্তমানে এ কর্মকর্তা ইউজিসি চেয়ারম্যানের এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর এ কর্মকর্তা নতুন করে চার লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। যদিও এ ঋণের আবেদন একাধিকবার রিজেক্ট করা হয়েছিল।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গৃহ নির্মাণের জন্য সবচেয়ে বেশি অতিরিক্ত নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের সাবেক যুগ্ম সচিব জাফর আহম্মদ জাহাঙ্গীর। বর্তমানে কমিশনের জেনারেল সার্ভিসেস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা এ কর্মকর্তার ‘ইউজিসি সিএইচবিএল প্রাপ্তির সর্বোচ্চ সীমা’ ২৭ লাখ ৮১ হাজার ৭২২ টাকা। অর্থাৎ ঋণ গ্রহণের সময় চাকরির বয়স অনুযায়ী তার পেনশন ও অন্যান্য আনুতোষিক মিলিয়ে ২৭ লাখ টাকা পান। তবে এ কর্মকর্তাকে প্রাপ্যতার অতিরিক্ত ৪৫ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। তার মোট ঋণের পরিমাণ ৬৭ লাখ টাকা।

ইউজিসির সাবেক সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো: আকরাম আলী খান গৃহ নির্মাণ ঋণ নেওয়ার সময় ৬ষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা ছিলেন। কমিশনের স্ট্র্যাটেজিক প্লানিং অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা এ কর্মকর্তার ইউজিসি সিএইচবিএল অনুযায়ী লোন প্রাপ্তির সর্বোচ্চ সীমা ২৩ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৭ টাকা। তিনি সব মিলিয়ে ঋণ নিয়েছেন ৫৫ লাখ ২২ হাজার ৯৪৯ টাকা। প্রাপ্যতার সর্বোচ্চ সীমার বাহিরে তিনি অতিরিক্ত ১০ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৫ টাকা ঋণ নিয়েছেন।

কমিশনের সাবেক সহকারী সচিব (৯ম গ্রেড) মোহা. মামুনুর রশিদ খান বাড়ি নির্মাণের জন্য সর্বোচ্চ ঋণ সীমা ১৩ লাখ ২১ হাজার ৩৮৭ টাকা। তিনি অতিরিক্ত ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৫২ টাকাসহ সব মিলিয়ে ঋণ নিয়েছেন ৬১ লাখ ৬৫ হাজার ৪১৩ টাকা। বর্তমানে এ কর্মকর্তা ইউজিসি চেয়ারম্যানের এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর এ কর্মকর্তা নতুন করে চার লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। যদিও এ ঋণের আবেদন একাধিকবার রিজেক্ট করা হয়েছিল।

এছাড়া ১৮তম গ্রেডে চাকরি করা অফিস সহায়ক মির্জা হামিদুল ইসলাম, মো: আমিনুল ইসলাম, মো: আবুল হোসেন, মো: নুরুল ইসলাম জীবন, ইউজিসির  সিএইচবিএল এর সর্বোচ্চ সীমার অতিরিক্ত হিসেবে যথাক্রমে ১৪ লাখ ৬৯ হাজার ৩০১ টাকা, ৮ লাখ ৩১ হাজার ৫৬১, ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৬৮৭, ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা অতিরিক্ত ঋণ হিসেবে নিয়েছেন।

অন্যদিকে ১৬তম গ্রেডের কম্পিউটার অপারেটর মো: আব্দুস সালাম ১১ লাখ ৩৩ হাজার ২১৩ টাকা, ১৮তম গ্রেডের মেশিন অপারেটর মো: শহিদুল ইসলাম ৬ লাখ ৬২ হাজার ১৩১, একই গ্রেডের বার্তা বাহক মাসুদ রানা ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৯৪, অফিস সহায়ক মো: আবুল বাশার ৩ লাখ ২৮ হাজার ৬৫ এবং নিরাপত্তা প্রহরী মো: নুর নবী ইউজিসি সিএইচবিএল এর সর্বোচ্চ সীমার অতিরিক্ত ৬ লাখ ৯ হাজার ৬৯৮ টাকা ঋণ।

ইউজিসি সিএইচএবিএল এর সর্বোচ্চসীমার অতিরিক্ত ঋণ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের অর্থ, হিসাব ও বাজেট বিভাগের পরিচালক মো. রেজাউল করিম হাওলাদার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সর্বোচ্চ সীমার বাইরে কীভাবে তারা অতিরিক্ত অর্থ নিয়েছেন তা আমার জানা নেই। যখন অর্থ ছাড় হয়, তখন আমি এই শাখার দায়িত্বে ছিলাম না।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence