ইউজিসির গণবিজ্ঞপ্তি জারি

১৪ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সতর্কতা

ইউজিসির লগো
ইউজিসির লগো

মামলা-মোকদ্দমা, অননুমোদিত ক্যাম্পাস পরিচালনা, মালিকানায় দ্বদ্বসহ নানা সমস্যা থাকায় দেশের ১৪ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সতর্ক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এতে অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও প্রোগ্রামে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ইউজিসি।

গণবিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশে এখনও কোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা, ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়নি জানিয়ে কোনো বিদেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে প্রতারণার শিকার না হতেও সতর্ক করেছে ইউজিসি। এরপরও যদি কোন শিক্ষার্থী এসব অননুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যাম্পাস অথবা প্রোগ্রামে ভর্তি হলে তার দায়ভার শিক্ষামন্ত্রণালয় বা ইউজিসি নিবে না। ইউজিসি এ গণবিজ্ঞপ্তিটি এমন সময় জারি করলো, যখন শিক্ষার্থীরা এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শেষ করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক জাফর আহম্মদ জাহাঙ্গীর স্বাক্ষরিত এ গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে দেশে ১০১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি অনুমোদন আছে। এর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ৯১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর মধ্যে ৬০টিতে ভিসি, ২০টিতে প্রো-ভিসি এবং ৪৪টিতে কোষাধ্যক্ষ রয়েছে। বাকিগুলোতে শীর্ষ পদ ফাঁকা রেখেই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।

ইউজিসি যেসব বেসসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও প্রোগ্রমে ভর্তি হতে সতর্ক করেছে তার মধ্যে রয়েছে-ইবাইস ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, ইউনিভার্সিটি অভ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি চিটাগং, দি পিপলস্ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অভ সাউথ এশিয়া, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কুমিল্লার ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, কুইন্স ইউনিভার্সিটি, গণ বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গণবিজ্ঞপ্তিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সরকার ও ইউজিসির অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যাম্পাস ও প্রোগামে ভর্তি হতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কী সমস্যা
ইবাইস ইউনিভার্সিটি: এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্ব›দ্ব। বোর্ড অব ট্রাস্টিজ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলা করেছে। দ্বদ্ব নিরসনে ইউজিসির পদক্ষেপের বিষয়েও একটি গ্রæপ আদালতে মামলা করে ওই পদক্ষেপের বিষয়ে স্থগিতাদেশ পেয়েছে।

আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি: ২০০৬ সালের ২২ অক্টোবর এই বিশ্ববিদ্যালয় সরকার বন্ধ করে দেয়। পরে আদালতে রিট আবেদন করে স্থগিতাদেশ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রæয়ারি সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্র্বতীকালীন রায়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫, কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, অষ্টম তলা, বনানী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৫৪/১ প্রগতি সরণী, বারিধারা, নর্দ্দা, পুলিশ স্টেশন, গুলশানের ঠিকানা অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু ওই ঠিকানার ক্যাম্পাস পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অবৈধ ক্যাম্পাস উচ্ছেদ করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অনুরোধ করা হয়েছে।

দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা: ২০০৬ সালের ২২ অক্টোবর এই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয় সরকার। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর কোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে রায় দেয়। পরে চলতি বছরের ৭ ফেব্রæয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালুর অনুমতি দেয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও ভবনের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণের অগ্রগতি সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য ইউজিসি একটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে গত ২ এপ্রিল চিঠি দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আদালতে রিট দায়ের করে ওই চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করেছে। যদিও ইউজিসি এর বিরুদ্ধে আপিল করেছে।

সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ: আদালতের রায় অনুযায়ী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩৯, মেহেদীবাগ, চট্টগ্রাম এবং ২২ শহীদ মির্জালেন, চট্টগ্রামে ক্যাম্পাস ছাড়া অন্য সব ক্যাম্পাস অবৈধ হওয়ায় অবৈধ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ইউজিসিকে নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর ইউজিসি ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থী ভর্তি না করাতে চিঠি দেয়। ইউজিসির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রিট করলে আদালত ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে দুটি মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে।

কুইন্স ইউনিভার্সিটি: সরকার কর্তৃক এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে ২০১৫ সালের ৬ সপ্টেম্বর শর্ত সাপেক্ষে এক বছরের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেয়। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়: এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অননুমোদিত প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ার জন্য ইউজিসি ২০১৭ সালের ২৬ এপ্রিল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে রিট করলে ২০১৭ সালের ২৯ মে আদালত গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ, ইনভায়রনমেন্ট সায়েন্স, এমবিবিএস, বিডিএস এবং ফিজিওথেরাপি প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি আমলে নিতে ইউজিসিকে নির্দেশনা দেয়।

দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়: আদালতের আদেশে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর সব আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত ক্যাম্পাস
ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি: চট্টগ্রামের খুলশীস্থ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অনুমোদিত স্থায়ী ক্যাম্পাস রয়েছে। তবে রাজধানীর ধানমন্ডির ৬৩ সেন্ট্রাল রোডে বিশ্ববিদ্যালয়টির অননুমোদিত ক্যাম্পাস আছে। তবে চলতি বছরের ১৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক চিঠিতে অননুমোদিত আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে।

দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ: এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত স্থায়ী ক্যাম্পাস সৃষ্টিগড়, শিবপুর, নরসিংদী এবং অস্থায়ী ক্যাম্পাসের ঠিকানা- ৩/২ ব্লক-এ, আসাদ এভিনিউ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। ঢাকার উত্তরার আব্দুল্লাহপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টির অননুমোদিত একটি ক্যাম্পাস আছে।

ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া: এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত অস্থায়ী ক্যাম্পাস বাড়ি ৭৬-৭৭, রোড ১৪, বøক-বি, বনানী, ঢাকা। তবে বাড়ি-৭২, রোড-১৭, ব্লক-সি, বনানী, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি অননুমোদিত ক্যাম্পাস আছে।

অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়: এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত স্থায়ী ক্যাম্পাসের ঠিকানা প্লট-২০১, সেক্টর-১৫, খানটেক, উত্তরা, ঢাকা। এই বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার উত্তরায় ১২ নম্বর সেক্টরের বাড়ি-৫১, শাহ মখদুম রোড এবং বাড়ি-০২, সোনারগাঁও রোডে দুটি অননুমোদিত ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে।

৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বদ্ব-আদালতে মামলা বিচারাধীন: এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে-ঢাকার ইবাইস ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কুমিল্লার ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।

৮ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি: এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি দেয়া হয়নি, তবে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে- ঢাকার কেরাণীগঞ্জে রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জে রূপায়ন এ কে এম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়, আনোয়ার খান মর্ডান ইউনিভার্সিটি, জেড এন আর এফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস, রাজশাহীর আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা খান বাহাদুর আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি এবং বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়।

এ বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, নিয়ম না মানা এবং আইন অমান্যকারী কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে যেন প্রতারিত না হয় সে বিষয়ে আমরা সবাইকে সতর্ক করছি। এজন্য এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। যদি কেউ এসব অনুমোদনবিহীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে থাকে তাহলে সে ব্যাপারে ভবিষ্যতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ইউজিসি কোন দায়-দায়িত্ব নেবে না।


সর্বশেষ সংবাদ