এসএসসির ফলের পরই কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া: যেসব বিষয় জেনে রাখা ভালো

প্রতীকী
প্রতীকী  © সংগৃহীত

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল কাল। এরপরই শুরু একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আলোচনা। এই কোথায় ভর্তি হবেন, কোন গ্রুপ বেছে নেবেন— এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর খোঁজার সময় এই সময়টি। কারণ, একটি সঠিক সিদ্ধান্ত যেমন জীবন বদলে দিতে পারে, তেমনি ভুল সিদ্ধান্তও ধ্বংস করে দিতে ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার। বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে ব্যক্তিজীবনে। তাই এখনই ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করে প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পছন্দের বিষয় নির্বাচন করুন। 

এইচএসসিতে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রথমেই পছন্দের কলেজ নির্বাচনের বিষয়টি সামনে আসে। শিক্ষার্থীদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এটি। অনেক সময় দেখা যায়, কিছু ভাল কলেজের আসন নিজস্ব শিক্ষার্থীদের দিয়েই পূর্ণ হয়ে যায়। ফলে অন্যান্য কলেজে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের জন্যও কিছুটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অভিভাবকদের মধ্যে অনেকের ধারণা, ভালো কলেজে ভর্তি হলে ভাল ফল পাওয়া যাবে। তাই তারা যে করেই হোক নামিদামি কলেজে ভর্তি করাতে চান। তবে এটি একটি বড় ধরনের ভুল ধারণা। অভিজ্ঞান এবং পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, নামকরা কলেজের শিক্ষার্থীরাও কখনও কখনও অকৃতকার্য হয়; আবার এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যেখানে এসএসসিতে ভাল ফল পাওয়া শিক্ষার্থীরা এইচএসসিতে প্রত্যাশিত ফল অর্জন করতে পারেনি।

অন্যদিকে এমন অনেক কলেজও রয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত ভাল ফলাফল করেছে এবং অকৃতকার্য হওয়ার নজির নেই। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানে এসএসসি তে এ+ পাওয়া শিক্ষার্থীরা এইচএসসিতে কষ্ট পেয়েছে। বিপরীত ঘটনাও অনেক জায়গায় ঘটেছে। তাই একমাত্র কলেজের নাম নয়, বরং শিক্ষার মান, পাঠ্যক্রম, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং পরিপূরক সুবিধা এই সব কিছু মিলিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কিছু শিক্ষার্থী চান নামীদামি কলেজে ভর্তি হতে; যেগুলোর ফল বরাবরই ভালো এবং দেশের নানা প্রান্তে যার পরিচিতি রয়েছে। আবার কিছু শিক্ষার্থী রয়েছেন; যারা চান আধুনিক প্রযুক্তি এবং পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হতে। তাই তারা নামকরা বেসরকারি কলেজে ভর্তি হতে আগ্রহী। অন্যদিকে কিছু শিক্ষার্থী এমন কলেজে ভর্তি হতে চান; যেখানে অন্তত একটি গ্রহণযোগ্য শিক্ষা পাওয়া যাবে, যেন উচ্চ মাধ্যমিকটা সহজে শেষ করা যায়।

আরেক ধরনের শিক্ষার্থী রয়েছেন; যারা কোনও রকমের কলেজের বারান্দায় পা রাখতে পারলেই খুশি, তা সে গ্রামের বা পাড়ার কলেজ হোক কিংবা শহরের দামি কলেজ। তাদের ইচ্ছে যেমন ভিন্ন, তেমনই তাদের উদ্দেশ্যও আলাদা। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত বাস্তবতা হলো অনেক শিক্ষার্থী তাদের পছন্দের কলেজে না ভর্তি হয়ে, কিছুটা কম পছন্দের বা এমনকি অপছন্দের কলেজে ভর্তি হতে বাধ্য হন। যেমন ইচ্ছে, তেমনি সকলের মেধার মান এক নয়, তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য উপযুক্ত কলেজে ভর্তি হতে কিছুটা সংগ্রামও করতে হয়।

কলেজে ভর্তির আগে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত 

এসএসসির ফল
এসএসসির ফলাফলের দ্বারাই অনেকটা নির্ধারণ হয়ে যায় ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর একাদশ শ্রেণিতে কোন কোন প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবে, কোন কোন প্রতিষ্ঠানে  আবেদন করতে পারবে না। কলেজগুলোরও চাহিদা থাকে যে, কোন মানের ফলাফলের নিচে শিক্ষার্থী তারা নেবে কিংবা নেবে না।

কলেজের মান
কলেজের মান বিচারের জন্য কখনোই বড় মাপের গবেষণার প্রয়োজন নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত অবস্থা, লোকেশন, পরিচিতি এবং অনলাইন থেকে বিগত কয়েক বছরের ফল ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত হওয়াই যথেষ্ট। এর চেয়ে গভীরভাবে বা ভিতরে গিয়ে কখনোই প্রতিষ্ঠানে মান যাচাই করা সম্ভব নয়। তাছাড়া  সময়ও কম, প্রাথমিকভাবে শুধু ধারণা নেওয়াই যথেষ্ট। শুধু নামে নয় ও দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

অর্থ নির্বাহ
উচ্চবিত্তদের জন্য এটি ডাল ভাতের মতো মনে হলেও মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তদের জন্য কঠিন। তাদের ক্ষেত্রে মাথায় যে বিষয়টি রাখতে হয় সেটি আর্থিক অবস্থা। যেকোনো কিছুর জন্যই অর্থ সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেমন খরচ হয় কিংবা বর্তমান সময়ে যেহেতু প্রাইভেট পড়ার প্রবণতা রয়েছে, কলেজের কাছাকাছি বাসা ভাড়া করে থাকতে হবে কিনা এই বিষয়গুলো নিয়ে একটু ভাবা উচিত, খোঁজ নেওয়া উচিত যে, কোথায় ভর্তি হলে বা করালে অর্থের পরিমাণ কিছুটা হলেও কম লাগবে। আবার অর্থ থাকলেই যে ব্যয় করতে হবে সেটিরও বিশেষ কোন মানে নেই।

দূরত্ব
বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব নিয়ে ভাবা উচিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যতটা সম্ভব বাড়ির কাছাকাছি হলেই ভালো হয়। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সিলেবাস এসএসসির সিলেবাসের থেকে অনেক অনেক গুণ বড় এবং সেই তুলনায় সময় অনেক কম পাওয়া যায় যা বাস্তবে দেড় বছরেরও কম। এই অল্প সময়ের মধ্যে তোমার  উচিত বেশিরভাগ সময় পড়ার কাজে ব্যয় করা। তোমার কলেজ যদি বাসা থেকে অনেক দূরে হয় তাহলে যাতায়াতে অনেক সময় নষ্ট হবে। আর দিন শেষে  তুমি ক্লান্ত হয়ে যাবে। তাই পড়ালেখায় মন  বসানো এবং সামনে ভালো  করা তোমার জন্য হয়ে যাবে অনেক কষ্টের বিষয়।যাতায়াতে  যে সময় নষ্ট হবে সেই সময়টাতে পড়াশোনা মন দিলে নিশ্চিত ভালো রেজাল্ট হবে ইনশাল্লাহ।

ল্যাবরেটরির অবস্থা সম্পর্কে জানা
বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য এইচএসসি পরীক্ষার ব্যবহারিক অংশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তবে খুব কম কলেজেই পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন ল্যাবরেটরি দেখা যায়। অনেক কলেজে ল্যাবরেটরির থাকলেও ভালো প্রদর্শক নেই, প্রদর্শক  না থাকায় খুব বেশি শেখার সুযোগ থাকে না,যা পাবলিক পরীক্ষার ভালো রেজাল্ট করতে বাধাগ্রস্ত করে। তাই যে কলেজগুলোতে তোমার লিস্টের উপরের দিকে  দিয়েছো ওই সমস্ত কলেজের ল্যাবরেটরি অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে রাখা উচিৎ। 

কলেজ নির্বাচন
এসএসসির পরবর্তী উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে কলেজ নির্বাচন করা, কেননা পরবর্তী জীবনে ক্যারিয়ারের ভীত এখানেই রচিত হয়। তাই এই সময়টা সিদ্ধান্ত নিতে হয় অনেক ভেবে,চিন্তে এবং সতর্কতার সাথে। নিজের ইচ্ছা ও আগ্রহের বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণ থাকা জরুরী। তবে শুধু নিজের ইচ্ছা বা আগ্রহকে প্রাধান্য দিলেই অনেক সময় লক্ষ্য নির্ধারণ সঠিক হয় না। তুমি কত জিপিএ পেয়েছ এবং কোন বিভাগে পড়তে  চাও তাঁর উপর মূলত নির্ভর করবে তোমার কলেজ নির্বাচন। যারা জিপিএ-৫ তাদের প্রতিযোগিতা বেশি। এমন কোন কলেজেও সহজেই খাপ খাওয়াতে পারবে কিন্তু কারো যদি গ্রেড পয়েন্ট কম থাকে তাহলে তার উচিত একটু মাঝারি মানের কলেজ  নির্বাচন করা।

কলেজের পরিবেশটাও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এমন অনেক কলেজ আছে যেখানে হয়তো পড়ালেখার ভালো, রেজাল্ট  ভালো কিন্তু পরিবেশ ভালো নয় অভিভাবকদের উচিত এ ধরনের কলেজ এড়িয়ে যাওয়া।কারণ  কলেজের সময়টায় ছেলে- মেয়েদের মধ্যে একটু স্বাধীন চেতা মনোভাব  চলে আসে, তখন তাঁরা কার  সাথে মিশছে,  কেমন পরিবেশে পড়ছে  এসব দিক দৃষ্টি রাখতে হবে। আমাদের দেশে এখনো কোনো একটা কলেজ ভালো বা খারাপ এটি নির্বাচন করা হয় বেশিরভাগ সময়েই কলেজটির পূর্ববর্তী বছরগুলোর রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে। তবে তোমার উচিত হবে  কলেজের পূর্ববর্তী বছরের পাশের হার কেমন, জিপিএ-৫ কতজন  পেয়েছে এ সম্পর্কে অবহিত হয়ে কলেজ নির্বাচন ও ভর্তি হওয়া। অনলাইনে কলেজ নির্বাচনে তোমাকে একটি  লিস্ট তৈরি করতে হবে সব থেকে বেশি পছন্দের কলেজের স্থান হবে সবার উপরে এবং পর্যায়ক্রমে কম পছন্দের কলেজগুলোর স্থান নিচে নিচে   সাজাতে হবে 

বিভাগ নির্বাচন
অনেকেই জিজ্ঞেস করেন এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে ছিলাম এখন আমি মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ভর্তি চাচ্ছি। এটা কি সম্ভব? হ্যাঁ এটা অবশ্যই সম্ভব। তবে তার আগে নিজের স্বপ্ন ঠিক করে নেওয়া প্রয়োজন। আপনার স্বপ্ন দেখার উপর নির্ভর করবে আপনি কি হতে চান। একেই  এসএসসিতে যেই  বিভাগের ছিল সেই বিভাগেই আবার পড়তে চায় কিন্তু এসএসসি ও এইচএসসির  সিলেবাসের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। তাই বিভাগ  নির্বাচনে অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।আবার  কেউ কেউ আছেন এসএসসিতে হয়তো বিজ্ঞান বিভাগে ভালো ফলাফল করতে পারেননি তাই বিভাগ পরিবর্তন করে ব্যবসায় শিক্ষা নিতে  চাচ্ছেন অথবা এসএসসির সময় ব্যবসায় শিক্ষা নিয়ে পরে মানবিক  বিভাগে ভর্তি হতে চান  এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেও বড় ভাই-বোনদের বা  অভিভাবকদের  সাথে আলাপ করে বুঝে নিতে হবে বিভাগ পরিবর্তন করা  ঠিক হবে কিনা। আর  যদি  বিভাগ পরিবর্তন করতেই  হয় তাহলে সেই বিভাগের বিষয়গুলো সম্পর্কে আগে থেকে একটু ধারণা নিয়ে রাখা ভালো হবে। বিভাগ পরিবর্তনে আরেকটি বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত সেটি হচ্ছে আর্থিক সামর্থ্য। বিজ্ঞান বিভাগে নিয়ে পড়তে হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাইভেট বা কোচিং করতে হয়। প্রাইভেট বা কোচিং করার আর্থিক সামর্থ্য আছে কিনা ভেবে দেখুন। তারপর ভেবে দেখুন আপনি ফল ভালো করতে পারবেন  কিসে? যদি মানবিকে ভালো ফল করতে বলে আপনার আত্মবিশ্বাস থাকে তাহলে অবশ্যই মানবিক বিভাগ নিন। এক কথায়  মেধা যোগ্যতা ভালোলাগা আগ্রহ ও সামর্থ্য অনুযায়ী স্বপ্ন দেখুন।

বিষয় নির্বাচন
বিভাগ নির্বাচনের পর যে ব্যাপারটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল বিষয় নির্বাচন করা। বিভাগ ভিত্তিক দুটি বিষয় আবশ্যিক থাকে তারপর একটি ঐচ্ছিক এবং অপরটি চতুর্থ বিষয়ে হিসেবে নির্বাচন করতে হয়। যে যেটা ভালো বুঝবে তার জন্য সেই বিষয়টি নির্বাচন করা উচিত। এক্ষেত্রে অন্য কারো কথা শুনে বা বন্ধুরা নিচ্ছে  বলে নিজে ভালো না লাগলেও সেই বিষয় নির্বাচন করা উচিত নয়। কোন  বিষয়ে ভালো মার্কস পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি সেই দিকেও খেয়াল রেখে বিষয় নির্বাচন করতে হবে।

সিদ্ধান্ত
কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এককভাবে শিক্ষার্থীকে বড় করে না বরং উপযুক্ত সুবিধা ও শিক্ষার্থীরাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বড় করে তুলতে  পারে। হতে পারে আজকের একটি মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্য কিন্তু অপেক্ষাকৃত নিচু মানের   একটি কলেজও মাথা উঁচু  করে একদিন বলবে, ‘আমরাও সামর্থ্য আছে’। এর উল্টোটাও  কিন্তু হতে পারে বড় মাপের প্রতিষ্ঠানের জন্যও।

সিদ্ধান্ত প্রত্যেকের নিজের ও পরিবারের তবে, হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। সময় নিয়ে পরিবারের সবার সাথে আলোচনা করে কলেজে  পছন্দক্রম সাজানো উচিত। তবেই হয়তো কাঙ্ক্ষিত সাফল্য ধরা দেবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence