অবুঝ সমাজ ভাবে সিএসই মানেই ‘মোবাইল-কম্পিউটার মেকানিক’

লোগো
লোগো  © টিডিসি ফটো

কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই)। বাংলাদেশের বেশিরভাগ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষের একটি সাবজেক্ট। সিএসই পড়ুয়াদের নিয়ে অবুঝ সমাজ যা ভাবে তা হলো- ‘কম্পিউটার মেকানিক, মোবাইল মেকানিক, হ্যাকিং করি ইত্যাদি।’

সিএসই জিনিসটা আসলে কি?

কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং। কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে, কিসের দ্বারা কাজ করে, সেইসব জিনিস নিয়ে কাজ করাটাই সিএসই-এর মূল কাজ। যেমন কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম ছাড়া অচল। এটাকে বলা চলে কম্পিউটারের ব্রেইন। এরপর বিভিন্ন সফটওয়ার বিভিন্ন কাজ চালানো ইত্যাদি।

তুমি সিএসইতে কেন পড়বে?

তুমি যদি গাণিতিক ক্যালকুলেশন নিমিষেই বা ধীরে-সুস্থে সময় নিয়ে বিভিন্ন টেকনিকে সমাধান করে ফেলতে পারো; তুমি যদি ফিজিক্সের রুলস নিয়ে মজা করতে ভালোবাসো; বন্ধু মহলে যদি তুমি একজন ধৈর্যের প্রভু খ্যাতি পেয়ে থাকো; জিএফের হাজারও চিল্লাচিল্লির পরেও যদি তোমার কোন একটি কাজে মনযোগ দিয়ে রাখতে পারো; ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটা সমস্যা সমাধান করার জন্য সারাদিন লাগিয়ে দিলেও আফসোস না থাকে; নতুন নতুন আইডিয়া মাথায় ঘুরপাক খায়—তাহলে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে সিএসই। তাহলে তুমি দেখতে পার পাশ করেই লাখ টাকার স্বপ্ন, দেখতে পারো গুগল-মাইক্রোসফটের স্বপ্ন।

সিএসই-ই একমাত্র সাবজেক্ট যেটায় চাকরি পেতে সার্টিফিকেট না হলেও হয়। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? শুধু সার্টিফিকেট না, তুমি যদি গাদা গাদা সাবজেক্টে রিটেক খেয়ে, সিজিপিএতে দুর্ভিক্ষ বানিয়ে হাবুডুব খেতে থাকো তাহলে তোমাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে তোমার স্কিল।

সিএসইতে স্কিল কীভাবে করবে?

হ্যাঁ, তুমি তোমার গাণিতিক সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, ধৈর্য, নতুন নতুন আইডিয়া দিয়ে হয়ে যেতো পারো স্কিলের বস। আর এর জন্য যেটা সবথেকে বেশি দরকার সেটা হচ্ছে প্রোগ্রামিং ভাষা শেখা। যেটা আর অন্য সকল ইঞ্জিনিয়ার থেকে তোমাকে আলাদা করে ফেলবে।

তুমি যতটা বেশি দক্ষ হবে তুমি ততটা তোমার আইডিয়া বাস্তবায়নে দক্ষ হতে পারবে। আর আইডিয়া বাস্তবায়নে দক্ষ হতে পারলে তুমি এক কথায় স্কিল্ড। তোমাকে যেকোনো কাজ বুঝিয়ে দেয়ার আগেই তুমিই বুঝতে পারবে। কোম্পানি তোমাকে রেখে অন্য কারো দিকে তাকাবে না। প্রয়োজনে লাখ টাকা দিয়ে তোমাকে তার প্রতিষ্ঠানে ধরে রাখবে।

আমাদের এক ভাই উনি এখনো কয়েকটি কোর্স শেষ না করেই ৫০+ টাকা বেতনে চাকরি করতেছেন। এক ভাই পাশ করার পূর্বেই জব পেয়ে বসে আছেন। একজন ভাই তো সিজিপিএতে দুর্ভিক্ষ নিয়ে লাখ টাকার কাছেকাছি বেতনে জব করতেছেন। বিভিন্ন ভার্সিটির প্রচুর ছাত্র গাদা গাদা রিটেক নিয়ে, সিজিপিএ ২ নিয়ে, পাশ না করেই গুগল-মাইক্রোসফট-ফেসবুকের মত প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেছে, নিজেই ফার্ম দিয়েছে।

আরও পড়ুন: কূটনীতিক হতে চাইলে ‘আইআর’ আপনার জন্য, পাঠদান ৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে

প্রশ্ন থাকতে পারে সিজিপিএ বেশি হলেই দক্ষ হওয়া যায় না? অবশ্যই যায়, কেন যাবে না? বরং সেটা তোমাকে সামনে এগিয়ে যেতে অতিরিক্ত শক্তি দেবে। রিসার্সে, শিক্ষকতায়, স্কলারশিপে এবং ভালো সিজিপিতে ভূমিকা পালন করে। তবে দেখা গেছে, বেশিরভাগ হাই সিজিপিএ সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা কাজে অদক্ষ। তবে সবার ক্ষেত্রে না এটা। তবুও তারা থিওরিটিক্যালি বস।

তাই বলে সিজিপিএ কে ডোন্ট কেয়ার করলে হবে না। কারণ এটা তোমাকে বিদেশে স্কলারশিপ পেতে, রিসার্সে, জব সেক্টরে এডভ্যান্টাজেস দেবে।

সিএসই-তে কি পড়ানো হয়

গণিত, এলগরিদম, ডাটা স্ক্রাকচার, স্ট্রাজচার্ড প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ, ডাটাবেস, গ্রাফিক্স, নেটওার্কিং, অপারেটিং সিস্টেম, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স, সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি পড়ানো হয়। এখানে অনেক ধরনের টপিকস পড়ানো হয়, যেগুলো তোমার পছন্দ নাও হতে পারে। তবে সেগুলো লাগে বলেই পড়ায়। যেমন ধর গেম ডিজাইন করতে চাইলে তাদের জন্য কম্পিউটার গ্রাফিক্স, ফিজিক্স এবং লিনিয়ার এলজেব্রা এই টপিকস লাগবে।

আরও পড়ুন: সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা সমাজের ডাক্তার, চাকরির সুযোগও প্রশস্ত

নিজের পরিবার/এলাকার বড় প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার সফটওয়ার বানানোর জন্য software engineering, database, মার্কেটিং সাবজেক্ট, Google, Facebook, Microsoft-এ জব করতে চাইলে data structure, algorithm এগুলো লাগবেই।

যাদের জন্য সিএসই ‘নয়’

তুমি যদি লাভার বয় হও, যদি মাস্তিবাজ হও, যদি হতাশ পার্টির সদস্য হও, যদি অল্পতেই ধৈর্যহারা হয়ে যাও, নতুন নতুন গাণিতিক সমীকরণ মাথার উপর দিয়ে যায়, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রজেক্ট করার সময় যদি তুমি গুগলের সাহায্য নাও তাহলে সিএসই তোমার জন্য না। শুধু শুধু অন্যদের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিও না। পরে নিজেই পস্তাবে।

‘ফরেস্ট গাম্প’ মুভি দেখেছ? ফরেস্ট গাম্প যখন ছোট থাকে তখন সে ক্রাচে ভর দিয়ে হাটে? একটা সিনে সে যখন ভয়ে দৌঁড়াতে থাকে তখন দৌঁড়াতেই থাকে সকল বাধা ভেঙে। এক পর্যায়ে সে দৌঁড়ানো শিখে যায় ক্র্যাচ ছাড়া এবং ভালোভাবেই শিখে যায়।

কম্পিউটার সায়েন্সও অনেকটা ওরকম। শুধু কম্পিউটার সায়েন্স না, ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়গুলাই এমন। শুরুতেই তুমি ভয়ানক কিছু পেতে পারো; যার ফলে তোমাকে দৌঁড়াতে হতে পারে। যদি তুমি না দৌঁড়ে ভয়ে ধরা খেয়ে যাও তাহলে তুমি আর ক্র্যাচ ছাড়া একা চলতে পারবে না।

এটা এমন এক সাবজেক্ট, সব সময় নতুন নতুন কিছু শিখতেই হয়। যখনই তুমি কাজ অফ করে দেবে ঠিক সেই সময় থেকে তুমি ভুলতে শুরু করবে। এখানে শুরুতে তুমি প্রচুর পিছলে পড়ে যাবে, যদি বারবার উঠে দাঁড়াতে পারো বা উঠার ইচ্ছা থাকে প্রবল তাহলে তুমি সিএসইতে আসো।

তবে খুব আশার কথা যেটা, একমাত্র সিএসই সাবজেক্টেই সরকারি চাকরিতে মামা-খালু দিয়ে কিছু হয় না। যদি না তোমার যোগ্যতা না থাকে। আর অন্য কেউ তোমার অধিকারও কেড়ে নিতে পারবে না। কারণ এটায় চাই শুধু কাজ, আত্মীয়তা নয়। অবশ্য দক্ষ ইঞ্জিনিয়াররা সরকারিতে যেতেই চায় না।

আরো একটা মজার বিষয় জানো? সিএসইতে পড়েই দ্রুত স্টাবলিশড হওয়া যায় বলেই জিএফকে হারানোর ভয় কম থাকবে। তাই কি পড়তে যাচ্ছ আগে একটু গুগলে সার্চ করে নেওয়া ভালো। না বুঝলেও অনুমান করতে পারবে। তখন সর্বোপরি সিদ্ধান্ত নিতে পারবে তুমি যেমন করে কল্পনা করছ ভবিষ্যৎ, সেটা এই সাবজেক্টে তুমি মন থেকে পছন্দ করে ভালোবেসে এগোতে পারবে কি না।

তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো সাবজেক্ট হিসাবে এটা বর্তমান সেরা; তবে অন্য বন্ধুর কথায় বা জাস্ট স্টাইলে/গর্বিত ফিল করার জন্য সিএসই বাছাই করার সিদ্ধান্ত নিও না। যদি সব কিছু দেখার পর মন এবং যুক্তি সায় দেয়, তাহলেই কেবল এগিয়ে এসো সিএসই-এর প্রতি। নিশ্চিত কর নিজের ভবিষ্যৎ; সে তুমি ভবিষ্যতে যখন যেখানে যেভাবেই থাকো। সুতরাং যারা সিএসইতে আসবা, একটু ভেবে আসবা।

লেখক: শিক্ষার্থী, সিএসই বিভাগ, বশেমুরবিপ্রবি


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence