নৌকায় ভোট চাচ্ছেন উপাচার্যরাও

চার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য
চার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য

‘সরকার আছে বলে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। নৌকাকে বিজয়ী করতে কাজ করতে হবে। এখানে আমাদের সরকার ও আমাদের পক্ষে সমস্ত শক্তি থাকার পরেও যদি আমরা হেরে যাই, তবে তা লজ্জার হবে।’  শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বক্তব্য এটি। বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের পক্ষে নৌকা মার্কার সমর্থনে সিটি করপোরেশন নির্বাচনী সভায় বক্তৃতাদানকালে এই কথা বলেন তিনি। শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ ওই সমাবেশের আয়োজন করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শাবিপ্রবি উপাচার্য নয়, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক উপাচার্যই প্রত্যক্ষ সমর্থন দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীককে। এরমধ্যে কেউ সরাসরি ভোট চাইছেন, কেউবা যোগ দিচ্ছেন দলের মতবিনিময় সভায়। দলের হয়ে গণসংযোগ কার্যক্রমেও অংশ নিচ্ছেন কেউ কেউ।

অথচ ‘চাকরির শর্তাবলী’ তে ৫১ ধারার ২ উপধারায় বলা আছে, ‘কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তার রাজনৈতিক মতামত পোষণের অধিকার ক্ষুণ্ণ না করিয়া তাহার চাকরির বিধানাবলী নির্ধারিত হইবে; তবে শর্ত থাকে যে, তিনি তাহার উক্ত মতামত প্রচার করিতে পারিবেন না বা নিজেকে কোনো রাজনৈতিক দলের সহিত জড়িত করিতে পারিবেন না।’

আর নির্বাচন কমিশনের জারি করা প্রজ্ঞাপনের ১৪ নং ধারায়  বলা হয়েছে, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাঁর সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনী কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ড যোগ করতে পারবেন না, নিজের বা অন্যের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি যানবাহন, সরকারি প্রচারযন্ত্রের ব্যবহার বা অন্যবিধ সরকারি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না এবং এই উদ্দেশ্যে সরকারি বা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা কর্মকর্তা কর্মচারীকে ব্যবহার করতে পারবেন না ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৩ ডিসেম্বর খুলনা-২ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের মতবিনিময় সভায় সরাসরি নৌকা প্রতীকে ভোট চান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফায়েকুজ্জামান।মতবিনিমিয় সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সাধারণ সম্পাদক  মিজানুর রহমানসহ দলীয় নেতাদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, ওই অনুষ্ঠানে শুধু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যই যোগ দেননি, বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে করে তার কর্মকর্তাদেরও নিয়ে যান। ঘটনার পর খুলনার জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হেলাল হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, ‘ভিসি সাহেবের আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে। সরকারি লাভজনক পদে থেকে এভাবে নির্বাচনী প্রচারণা সভায় যাওয়াটা নৈতিকভাবে ঠিক হয়নি।’

ভোট চেয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যলয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানও। ঢাকা-৬ আসনে মহাজোট মনোনীত জাতীয় পার্টির প্রার্থী কাজী ফিরোজ রশীদের লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চান তিনি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ওই সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে ফিরোজ রশীদের পক্ষ নিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘পুরান ঢাকায় কাজী ফিরোজ রশীদ ছাড়া আর কেউ যোগ্য প্রার্থী নেই। আগামী নির্বাচনে সবাইকে ফিরোজ রশীদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’ জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতি তরিকুল ইসলাম, কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্রলীগ ও শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জনসভায় উপস্থিত ছিলেন। অবশ্য এর আগেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী সাঈদ খোকনের পক্ষে ভোট চেয়েছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মীজানুর রহমান।

এর আগে নৌকা প্রতীকে ভোট চান বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নর্দান ইউনিভার্সিটি বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি খুলনার উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এইবিএর প্রফেসর ড. ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ। অবশ্য অন্য প্রার্থীর জন্য নয়, নিজেই প্রার্থী হিসেবে শোভাযাত্রা করে গণসংযোগ করেন এই শিক্ষাবিদ।

এখানে উল্লেখ্য যে, এর আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ উপ-কমিটিতে সদস্য হিসেবে স্থান পান দেশের ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ। তারা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান খান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মিজানুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডাক্তার কামরুল হাসান এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক হারুনুর রশীদ।  

এই চার উপাচার্য ছাড়াও আওয়ামীলীগের এই উপকমিটিতে স্থান পেয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন শিক্ষক।


সর্বশেষ সংবাদ