নিয়োগে হস্তক্ষেপ, চবি শিক্ষক সমিতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

আইন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ
আইন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ  © টিডিসি ফটো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পরিকল্পনা কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আইন বিভাগে অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া নিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে চবি শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতির এরুপ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদপত্র দিয়েছে আইন বিভাগের প্রশাসনপন্থি একাংশ শিক্ষকবৃন্দ। মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) আইন অনুষদের ডিন ও বিভাগের সভাপতি সহ মোট ১১জন শিক্ষকের পক্ষে থেকে এই প্রতিবাদপত্র দেওয়া হয়। 

এতে বলা হয়, গত ১৭ ডিসেম্বর আইন বিভাগে ২জন প্রভাষক নিয়োগের জন্য বেলা আড়াই টায় উপাচার্যের অফিস কক্ষে নির্বাচনী বোর্ড বসার জন্য ধার্য ছিলো। বোর্ডের সকল সদস্য এবং ৯জন প্রার্থী সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য যথারীতি উপস্থিত ছিলো। প্রথম প্রার্থীর সাক্ষাৎকার শুরু হওয়ার সাথে সাথে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে প্রায় অর্ধশত জনের একদল শিক্ষক উপাচার্য কার্যালয়ে প্রবেশ করে অশোভন আচরণ করেন এবং জোরপূর্বক নিয়োগ বন্ধের জন্য চাপ দেন। পরে তারা উপাচার্য মহোদয়ের কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখেন। 

প্রার্থীদেরকে সাক্ষাৎকার কক্ষে প্রবেশেও বাধা প্রদান করেন এবং বিভিন্ন হুমকি ধামকি দেন। যদিও উপাচার্য মহোদয়ের দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী সভা যথানিয়মে অনুষ্ঠিত হয় এবং ৮ জন প্রার্থী সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। শিক্ষক নামধারী এ ব্যক্তিবর্গের দুর্বিনীত আচরণে ঢাকা থেকে আসা একজন প্রার্থী লাঞ্ছিত এবং অপদস্ত হন। আতংকে ও ভয়ে তিনি আর নিয়োগ বোর্ডের সাক্ষাৎকারে হাজির হতে পারেননি। শিক্ষক সমিতির ব্যানারে গুটিকয়েক ব্যক্তির এমন অশিক্ষকসুলভ কর্মকান্ড নজিরবিহীন এবং প্রচলিত ফৌজদারি আইনের লঙ্ঘনও বটে। তাদের আচরণ আইন বিভাগের স্বার্থের পরিপন্থী এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমরা, আইন বিভাগ ও আইন অনুষদের শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষক সমিতির কতিপয় সদস্যের অন্যায় ও বল প্রয়োগের মাধ্যমে আইন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে বাধা প্রদানের এহেন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। 

এতে আরও উল্লেখ্য করা হয়, আলোচ্য ২টি প্রভাষকের পদ নতুন সৃষ্ট পদ নয়। এ ২টি পদে দু’জন শিক্ষক কর্মরত ছিলেন যার মধ্যে একজন অবসর গ্রহণ করেন এবং অন্যজন চাকুরী থেকে ইস্তফা দেন যে কারণে স্থায়ী পদ দু'টি শুণ্য হয়। ফলে, এ দু'টি পদে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। এছাড়া আইন বিভাগের দুজন শিক্ষাছুটিতে আছেন এবং একজন শিক্ষক বিনা বেতনে ছুটি নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। আরো কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষাছুটিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে বর্তমানে আইন বিভাগের এলএল. এম. শ্রেণিতে ১৪টি কোর্সের মধ্যে অর্ধেক সংখ্যক কোর্সই চালু করা যাচ্ছেনা। তাছাড়া, আইন বিভাগে বর্তমানে এলএলবি প্রোগ্রামে ৩৫ টি কোর্স চালু আছে এবং আরো ২টি কোর্স চালু করার ব্যাপারে একাডেমিক কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এম. ফিল, এবং পিএইচ, ডি. প্রোগ্রামে ২টি করে কোর্সওয়ার্ক রয়েছে। ভবিষ্যতে আউটকাম রেটেড এডুকেশন (০৮) চালু হবে যাতে কোর্সের সংখ্যা আরো অনেক বেড়ে যাবে। 

উল্লেখ্য, প্রায় একই ধরণের সিলেবাস ও একই সংখ্যক কোর্সের পাঠদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে যেখানে ৪৪ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন, সে তুলনায় চবির আইন বিভাগে তার অর্ধেক সংখ্যক শিক্ষক কর্মরত আছেন। উপরোক্ত কারণে বিভাগে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়াটা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে বিভাগের বিভিন্ন একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। কর্মরত শিক্ষকদের বিভাগের বিভিন্ন কাজে অতিরিক্ত ব্যস্ততার কারণে তাদের গবেষণাও ব্যহত হচ্ছে।

তাছাড়া আইন বিভাগে বেশ কিছুদিন যাবত কোন প্রভাষক নেই। একটি বিভাগ ভারসাম্যপূর্ণ হওয়ার জন্য সব ক্যাটাগরিতে শিক্ষক থাকা প্রয়োজন। নিয়মিত বিরতিতে শিক্ষক নিয়োগ না হলে পরবর্তীতে একসাথে বেশি সংখাক শিক্ষক নিয়োগ করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে এবং সে সুযোগে কিছু নিম্নমানের শিক্ষকের নিয়োগ হয়ে যেতে পারে।

আরো উল্লেখ্য যে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৭৩ এর ক্ষমতাবলে সিন্ডিকেটের গত ১৮-০৮-১৯৯৪ ইং তারিখে অনুষ্টিত ২৮৩ তম সভার ৬(গ) নম্বর সিদ্ধান্ত অনুসারে উপাচার্য মহোদোয় কে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। উক্ত সিদ্ধান্তে বলা হয়, "বিভাগ/ইন্সটিটিউটের কোন শিক্ষকের পদ খালি হওয়ার তিন মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগের চেয়ারম্যান/ইন্সটিটিউটের পরিচালক পরিকল্পনা কমিটির মাধ্যমে পদটি বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রারকে অনুরোধ না করিলে সেই ক্ষেত্রে উপাচার্যকে পদটির বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য ক্ষমতা প্রদান করা হইল। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত আইনের সমমর্যাদা সম্পন্ন। সে ক্ষমতা অনুসারে অতীতের উপাচার্য মহোদয়গণের সময়কালে অনেকবার শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। একই ক্ষমতা বলে উপরোল্লিখিত আইন বিভাগের ২টি স্থায়ী প্রভাষক পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে প্রার্থীদের আবেদনসমূহ যাচাই- বাচাই করার জন্য ২৫/০৯/২০২৩ ইং, ০৪/১০/২০২৩ ইং এবং ১৭/১০/২০২৩ ইং তারিখে আহ্লত আইন বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির পরপর ৩টি সভা কোরাম সংকটের কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি। উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে কয়েকজন শিক্ষক সভায় অনুপস্থিত থাকার মাধ্যমে উক্ত সভাসমূহ অনুষ্ঠিত হতে দেয়া হয়নি। 

তবে, প্রার্থীদের আবেদনসমূহ কমিটির বাকি ৩জন সদস্য কর্তৃক যাচাই-বাচাই করা হয় এবং বিজ্ঞাপনের সকল শর্ত পূরন করায় আবেদনকারীগণকে নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের সম্মুখে সাক্ষাৎকার পরীক্ষার জন্য উপস্থিত হতে পত্র প্রদানের সুপারিশ করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ইং তারিখ নিয়োগ বোর্ডের সভা আহবান করা হয়। এ সভা অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৭৩ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিধি-বিধানের কোন লঙ্ঘন হয়নি। প্রচলিত নিয়ম মেনেই উক্ত নির্বাচনী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বর্তমান শিক্ষক সমিতির কাছে নিয়োগে অনিয়ম বিষয়ে আইন বিভাগের কোন শিক্ষক কোন লিখিত আবেদন জানায়নি। কোন প্রার্থীও এবিষয়ে কোন অভিযোগ দেয়নি। শিক্ষক সমিতির কিছু অতি উৎসাহী কুচক্রী শিক্ষক কোন গোষ্টীর হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য অহেতুক এবং অযাচিতভাবে আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে অবৈধ হস্তক্ষেপ করেছে বলে আমরা মনে করি। তাছাড়া, বর্তমান শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কোন সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত  ব্যতিরেকেই সাধারণ শিক্ষকদের পাশ কাটিয়ে গত ১৭ ডিসেম্বরের উপরোল্লিখিত ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

এ প্রেক্ষিতে আমরা আইন বিভাগ ও অনুষদের পক্ষ থেকে এই বেআইনি কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পাশাপাশি আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বরাবরে এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের এবং দোষীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযোজ্য আইন ও বিধি অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাই। একইসাথে শিক্ষক সমিতিকে ভবিষ্যতে এধরনের অশিক্ষকসুলভ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।

আইন অনুষদ ও আইন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দের পক্ষে- ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক, অধ্যাপক ড. মু. জাফল উল্লাহ তালুকদার, অধ্যাপক নির্মল কুমার সাহা, অধ্যাপক  ড. নাজনীন বেগম, সভাপতি অধ্যাপক ড. রকিবা নবী, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মঈন উদ্দীন, অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, অধ্যাপক ড. আসমা বিনতে শফিক, সহযোগী অধ্যাপক শারমিন আফরোজ, হাসান মোহাম্মদ রোমান, প্রভাষক সৈকত দাশ।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!