সাহসী পদক্ষেপে স্বপ্ন জয়, বিজেএস পরীক্ষায় সহকারী জজ চবির মাহাদী

সৈয়দ ফজলুল মাহাদী
সৈয়দ ফজলুল মাহাদী  © টিডিসি ফটো

‘‘কয়েকজন বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। শুধু সাহস করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম মাস্টার্স এবং বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) দুটোতেই অংশগ্রহণ করবো। যদিও একই মাসে ছিলো দুটি পরীক্ষা। তবুও আল্লার রহমতে মাস্টার্সেও ৩.৫৫ পেয়ে পঞ্চম স্থান অধিকার করি। অন্যদিকে জুডিশিয়ারিতেও ৬৪তম স্থান অর্জন করে সফল হয়েছি। তবে ৬ মাস আগে কেউ বললেও বিশ্বাস করতাম না যে আমি জুডিশিয়ারিতে এবং মাস্টার্সে একসাথে কোয়ালিফাই করবো।’’

এমনই এক সাহসী পদক্ষেপের কথা বলছিলেন সৈয়দ ফজলুল মাহাদী (তৌসিফ)। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি তিনি ১৪তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজেএস) নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। 

চট্টগ্রামের চন্দনাইশে জন্মগ্রহণ করেন তৌসিফ মাহাদী। হালিশহরের গরীবে নেওয়াজ স্কুল থেকে পাশ করে ভর্তি হন চট্টগ্রামের সরকারি কমার্স কলেজে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই চেয়েছিলেন জাতিসংঘে কাজ করতে। কারণ কলেজ থেকেই ঝোঁক ছিল আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি। বাবার পছন্দ ছেলেকে আইনে পড়াবেন। চবিতে ভর্তি পরীক্ষায় ১৮তম অবস্থান করে ভর্তি হন আইন বিভাগে। 

নিজেকে যোগ্য করে তুলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই। নেতৃত্বও দিয়েছেন মডেল ইউএন ক্লাবের। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং আইন আমার কাছে ভালো লাগতো। কোন দেশে কি ঘটছে তা জেনে আনন্দ পেতাম খুব। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে সিইউ মুনাতেও যুক্ত হয়েছিলাম। 

জাতিসংঘে কাজ করার স্বপ্ন নিয়ে স্নাতক শেষ করেন তিনি। তবে বিচারক হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন স্নাতক শেষ করার পর থেকে। মাহাদী বলেন, নিজের দেশের সেবা করার ইচ্ছাটা ভেতর জেগে উঠলো। মাস্টার্সে এসে এটাই হয়ে দাঁড়ালো চূড়ান্ত লক্ষ্য। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করার সৌভাগ্য হতো কিনা জানিনা। হলেও দেশের সেবা করাই আমার কাছে মুখ্য মনে হয়।

আরও পড়ুন: পড়াশোনায় ধীর কিন্তু নিয়মিত, বিজেএস পরীক্ষায় ৩য় ঢাবির জ্যোতি

নিজের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। বিচার বিভাগের সহকারী জজ হয়ে তিনি উচ্ছ্বসিত এবং সবচেয়ে বেশি খুশি এজন্য যে তিনি মানুষকে ন্যায় বিচার দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, আমি এর মাধ্যমে জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছি। দেশের মানুষদের ন্যায়বিচারের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করবো।

তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে তুলে ধরেছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। ২০১৯ সালে ফিলিপ সি. জেসাপ ইন্টারন্যাশনাল ল’ মুট-কোর্টে তারই নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ওয়াশিংটন ডি.সি-তে ইন্টারন্যাশনাল রাউন্ডে কোয়ালিফাই করে। এছাড়া দেশ-বিদেশে বিভিন্ন মডেল ইউএন কনফারেন্স বিচারকের ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।

জুডিশিয়ারিতে নিজেকে প্রমাণিত করার পথটা সহজ ছিল না তার। তিনি বলেন, করোনা মহামারীর কারণে মাস্টার্সের পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। পরবর্তীতে একই সপ্তাহে জুডিসিয়ারির প্রিলিমিনারি পরীক্ষা এবং মাস্টার্সের পরীক্ষা দিয়েছি। উভয় পরীক্ষার জন্য সময় ভাগ করে পড়েছি। এভাবেই লেগে ছিলাম স্বপ্নের পেছনে। আল্লাহর রহমত ছিল তাই স্বপ্ন অধরা থাকেনি।

তিনি নিজের লক্ষ্যে এবং প্রায়োরিটি স্বচ্ছ রেখেছিলেন নিজের কাছে। মাহাদী আরও বলেন, জুডিশিয়ারিকেই জীবনের উদ্দেশ্যে হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম। এখন আমি জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পেয়েছি। আমি বিশ্বাস করি এটাই আমার জীবনকে অর্থবহ করে তুলবে।

মাহাদী বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করতে চান। সেজন্য আইন গবেষণায় কাজ করার দৃঢ় আকাঙ্ক্ষাও ব্যক্ত করেছেন তিনি।

তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় হলেও নিজের সখ-আহ্লাদকে কখনো দাবিয়ে রাখেননি ভ্রমণপিয়াসী এ মাহাদী। তিনি বলেন, পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় কিছু দায়িত্ব তো থাকেই। আমি বর্তমানে স্কয়ার গ্রুপের ফুড এন্ড বেভারেজ লিমিটেডে এ্যাসিস্টেন্ট লিগ্যাল কাউন্সেল হিসেবে কাজ করছি। নিজে উপার্জন করে দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। সৃষ্টির সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করতে না পারলে আমার কাছে জীবন ব্যর্থ মনে হয়। নিয়ম করে সাহিত্যে চর্চাও করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ