ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষকের টাকায় ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ, ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটে ২য় লিখন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৫, ০৪:৪৪ PM , আপডেট: ১০ জুন ২০২৫, ০৬:২৩ PM
সৌরভ আহম্মেদ লিখন। যশোরের সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ (যশোর বোর্ডে ৫ম) ও এবিসিডি কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ (যশোর বোর্ডে ৩য়) পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এরপর ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটে বাণিজ্য শাখা থেকে ২য় হয়েছেন। এ পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা না থাকায় তার এক শিক্ষক তাকে আর্থিক সাহায্য করেন। ভর্তি পরীক্ষায় নিজের সাফল্য, সংগ্রাম নতুন ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য কিছু টিপস নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের। তার কথাগুলো শুনেছেন—তাহমিনা আক্তার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ২য় হয়ে আপনার অনুভূতি কী?
গ্রামের একটি কলেজ থেকে পড়ালেখা করে ঢাবিতে দ্বিতীয় হব, এটা আমার ধারণার বাইরে ছিল। গত ২৫ মে রাত ১০ টায় যখন রেজাল্ট দেখতে পাই এবং নামের পাশে ২য় লেখা দেখি তখন আমি অনেক বিস্মিত হই।। কারণ এর আগেও আমি দুই বার স্বপ্নে দেখেছি যে আমি ঢাবিতে ২য় হয়েছি। তো সেদিন ও ভাবছি আসলেই সত্যি কিনা। তারপর বারবার রেজাল্ট চেক করেছি। তারপর সাথে সাথে আম্মুকে ফোন করে জানাই আর কেঁদে ফেলি। আমার রেজাল্টের কথা শুনে মা নিজেও কোনো কথা বলতে পারছিলেন না। আমি বুঝতে পারি মা নিজেও কাঁদছে। সেদিনের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।
ঢাবিতে কোন বিষয়ে ভর্তি হতে চান?
আমি ঢাবিতে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগে পড়তে চাই। আমার পরিবার ও আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা চান আমি এই বিভাগে পড়ি।
ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি, তখন একজন বড় ভাই আমাকে পড়ালেখার ক্ষেত্রে সাহায্য করতেন। ভাইয়ার কথাতেই অ্যাডমিশন নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়। তখন থেকেই ব্যাসিক জিনিসগুলো পড়া শুরু করি। একাদশ শ্রেণি থেকে অ্যাকাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি অ্যাডমিশনের পড়া পড়ি। ভাইয়াসহ কলেজের স্যাররা আমার প্রতি অনেক সাপোর্টিভ ছিলেন। আমিও সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেছি। আল্লাহ আমার প্রতি সহায় হয়েছেন।
ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আপনার অনুপ্রেরণা কী ছিল?
আমার এসএসসি পরীক্ষার আগে বাবা মারা যান। তখন থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে বেশ স্ট্রাগল করতে হয়েছে। নিজে টিউশনি করে কলেজের খরচ যুগিয়েছি। এর পাশাপাশি একাদশ শ্রেণি থেকে অ্যাকাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি অ্যাডমিশনের পড়া শুরু করি। আর্থিক সংকটে থাকাকালীন সময়ে কলেজের স্যাররা আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। আমাকে প্রয়োজনীয় বই দিয়েছেন যেটা কেনার সামর্থ্য আমার ছিল না। এইচএসসি পরীক্ষার সময় ফরম ফিলাপের টাকাটাও স্যাররা দিয়েছেন।
শুধু কলেজ না অ্যাডমিশন পিরিয়ডেও স্যাররা আমাকে নানানভাবে সাহায্য করেছেন। ঢাবিতে অ্যাপ্লাই করার টাকা ছিল না, সেটাও একজন স্যার আমাকে দিয়েছেন। বাবার স্বপ্ন, মায়ের পরিশ্রম, কলেজের শিক্ষকদের অবদান— এ সব কিছুই আমাকে ভালো কিছু করার তাগিদ যুগিয়েছে।
পরীক্ষার হলে কোন কৌশল অবলম্বন করে পরীক্ষা দিয়েছেন?
পরীক্ষার হলে টাইম ম্যানেজমেন্টের একটা বিষয় থাকে। এজন্য ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বাসায় নিজে নিজে মডেল টেস্ট দিয়েছি। সেই কৌশুলটিই পরীক্ষার হলে কাজে লাগিয়েছি। যতটা সম্ভব রিলাক্সাড থেকে পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
ভবিষ্যতে যারা ভর্তি পরীক্ষা দিবে তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে কিছুটা কৌশলি হতে হয়। ভবিষ্যতে যারা ভর্তি পরীক্ষা দেবে তাদের প্রতি পরামর্শ হলো প্রশ্ন ব্যাংক অ্যানালাইসিস করে যে টপিকগুলো থেকে প্রশ্ন আসে, সেগুলো ভালো করে পড়া আর বারবার রিভিশন দেওয়া। অ্যাডমিশনে ভালো করার মূলমন্ত্র কনসিস্টেন্সি। ইররেগুলারিটি ডাউন ফলের একটা অন্যতম কারণ।