বাবার সঙ্গে সবজি বিক্রি করেন নাদিরা, মেডিকেলে পড়ার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় 

মা শামছুন্নাহার বেগমের সঙ্গে নাদিরা খাতুন (বাঁয়ে)
মা শামছুন্নাহার বেগমের সঙ্গে নাদিরা খাতুন (বাঁয়ে)  © সংগৃহীত

হত-দরিদ্র পরিবারের মেয়ে নাদিরা খাতুন (১৯)। তার বাবা অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করেন। সবজি বিক্রি করেন। বাবার সঙ্গে সবজি বিক্রি করেন নাদিরাও। ফাঁকে ফাঁকে ঠিক রাখেন পড়াশোনা। সংসারের প্রচণ্ড অর্থাভাব থাকলেও মেধাবী নাদিরা ঠিকই সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। মেডিকেলে পড়ার খরচ কীভাবে চালাবেন, এ নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই।
 
নাদিরা খাতুনের বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের সরদারপাড়ায়। তার বাবার নাম আবু বক্কর। মা শামছুন্নাহার বেগম। চার বোনের মধ্যে নাদিরা তৃতীয়। নাদিরা ২০২২ সালে বোয়ালিয়া হাইস্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ ও বোয়ালিয়া মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২৪ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। আর এবার মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় তিনি চাঁদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। মেধাতালিকা ৩ হাজার ৪১০তম হয়েছেন নাদিরা।

বোয়ালিয়া মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ফারুক হোসেন বলেন, অসচ্ছল বাবা আবু বক্করের ছয় শতক ভিটেবাড়ি ছাড়া কোনো জমি নেই। তার আয়ে সংসার চলে না। নাদিরা মাধ্যমিক স্তর থেকে জমিতে শ্রমিকের কাজ করে তার পড়ালেখার খরচ চালিয়েছেন। পাশাপাশি বাবাকে সহযোগিতা করছেন নানাভাবে। সুযোগ পেলে দেশের মুখ উজ্জ্বল করার মতো মেধাবী মেয়েটি। তার পড়ালেখার জন্য বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।

নাদিরাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ইটের দেয়ালে টিনের ছাউনির একটি ঘর। ঘর ও বারান্দার মেঝে কাঁচা। ঘরে আসবাবপত্র বলতে তেমন কিছু নেই। তবে নাদিরার পড়ার জন্য একটি টেবিল ও চেয়ার আছে। সেখানে আলাপকালে নাদিরার মা শামছুন্নাহার বেগম বলেন, সবার দোয়ায় তার মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তিনি চান, তার মেয়ে একজন মানবিক চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করুক। চিকিৎসকের পাশাপাশি তার মেয়ে মানুষের মতো মানুষ হোক।

নাদিরা খাতুন বলেন, সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে কখনো মাঠে শ্রমিকের কাজ, আবার কখনো বাবার সঙ্গে সবজি বিক্রি করে পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারে সহযোগিতা করেছেন তিনি। এসএসসি উত্তীর্ণ হওয়ার পর স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে কম টাকায় প্রাইভেট পড়িয়ে শিক্ষাজীবন চালিয়েছেন। তবু অদম্য ইচ্ছা ছিল চিকিৎসক হয়ে অসহায়, দুস্থ ও অবহেলিত মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার। এবার মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়ে প্রাথমিকভাবে সফলও হয়েছেন। কিন্তু তার পরিবারের পক্ষে ভর্তির টাকা জোগাড় ও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব।

গ্রামের ফকিরপাড়ায় ছোট একটি সবজির দোকান চালান নাদিরার বাবা আবু বক্কর। তিনি সবজি বিক্রি করে পাঁচজনের সংসর কোনোরকমে চালান। বড় মেয়ে রওশনা খাতুনকে বিয়ে দিয়েছেন যশোরে। মেজ মেয়ে হাজিরা খাতুন যশোর এম এম কলেজ থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় অনার্স শেষ করেছেন। ছোট মেয়ে সাদিয়া সুলতানা স্থানীয় বোয়ালিয়া হাইস্কুলে লেখাপড়া করছে। আবু বক্কর বলেন, নাদিরা মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেলেও তাকে ভর্তি করাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। এ জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ, দপ্তর ও সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা যদি সহযোগিতার হাত বাড়াতেন, তবে বড় উপকার হতো।


সর্বশেষ সংবাদ