টার্গেট ছিল দুই বিসিএস, দ্বিতীয়টিতেই ক্যাডার বিইউপির জোহায়ের

৪৩তম বিসিএসে কর ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত জোহায়ের ইউসুফ হাসান
৪৩তম বিসিএসে কর ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত জোহায়ের ইউসুফ হাসান  © সংগৃহীত

৪৩তম বিসিএসে কর ক্যাডারে সহকারী কমিশনার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী জোহায়ের ইউসুফ হাসান। তার মেধাক্রম ছিল ৩৫। দু’টি বিসিএস টার্গেট করে দ্বিতীয়টিতেই সফল হয়েছেন তিনি। ৪৩তম বিসিএসের মাধ্যমে ক্যাডার ও নন-ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছেন দু’হাজার ৮০৫ জন। গত ২৬ ডিসেম্বর এ ফল প্রকাশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।

জোহায়ের ইউসুফ হাসানের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার ডৌকারচর গ্রামে। তার বাবার নাম মোহাম্মদ কামরুল হাসান। তিনি বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পড়াশুনা করেছেন। বর্তমানে সিভিল ওয়ার্কস কনসালটেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। তার মায়ের নাম খোদেজা আক্তার। তিন ভাই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট।

ছোটবেলা থেকেই তার বড় হয়ে ওঠা ঢাকাতেই। তিনি তার মাধ্যমিক ফয়জুর রহমান আইডিয়াল ইনস্টিটিউট থেকে এবং উচ্চমাধ্যমিক মোহাম্মদপুরের সেইন্ট জোসেফ কলেজ থেকে শেষ করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের বিবিএ (জেনারেল) ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি রিসার্চার হিসেবে একটা প্রাইভেট ফার্মে কর্মরত আছেন।

সফলতার বিষয়ে জানতে চাইলে জোহায়ের ইউসুফ হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার রহমতে ৪৩তম বিসিএসে সহকারী ট্যাক্স কমিশনার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। আমার মেধাক্রম ছিল ৩৫। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতাম- হলে আমার দুটি বিসিএসের মধ্যেই হয়ে যাবে। না হয় আর হবে না।

তিনি বলেন, আমি যখন ৪৪ এর জন্য এপ্লাই করিনি, তখন অনেকেই বলেছে আমি ভুল করছি। এতদিন কষ্ট করছি। আরও কয়েকটাতে পরীক্ষা দিয়ে রাখতে পারতাম। মানুষ এগুলো বলাতে নিজের কাছে কিছুটা প্রেশার ফিল হতো। আমি তাদের বলেছিলাম, ইনশাআল্লাহ হওয়ার থাকলে ৪৩তম বিসিএসেই হয়ে যাবে। আলহামদুলিল্লাহ, দ্বিতীয় বিসিএসেই আমি সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে যাই।

‘মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার রহমতে ৪৩তম বিসিএসে সহকারী ট্যাক্স কমিশনার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। আমার মেধাক্রম ছিল ৩৫। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতাম- হলে আমার দুটি বিসিএসের মধ্যেই হয়ে যাবে। না হয় আর হবে না।’

বিসিএসে সফল হওয়ার পেছনে গল্প জানতে চাইলে জোহায়ের ইউসুফ হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন বিসিএস দেব বলে কখনো ভাবিনি। গ্রাজুয়েশনের ঠিক পরই বাংলাদেশের বড় একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কিছুদিন কাজ করার সুযোগ হয়। তখন কাজ করার সময় সিদ্ধান্ত নিই যে, আমার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে শুধু একটি কোম্পানির ভ্যালু অ্যাডিশন না করে বরং আমার দেশের জন্য আরো বৃহৎ পরিসরে কিছু করতে পারলে নিজেকে কিছুটা হলেও সার্থক মনে করব।

সে থেকেই বিসিএস দেওয়ার ইচ্ছা জাগে এবং প্রস্তুতির পর্ব শুরু হয় জোহায়েরের। যেহেতু বিসিএস নিয়ে আগে কোনো ধারণা ছিল না, তাই অনেকটা জগত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়াশোনায় নিমজ্জিত হয়ে যান। প্রথম বিসিএস ৪১তম-তে হাতের লেখা ধীরগতি থাকায় বাংলাদেশ বিষয়াবলীর লিখিত পরীক্ষায় ৬০ মার্ক উত্তর করতে পারেননি। ভাইভা দিলেও জেনারেল ক্যাডার পদে সুপারিশপ্রাপ্ত না হওয়ার পেছনে এটি বড় কারণ ছিল বলে মনে করেন তিনি।

কিছুটা মনক্ষুন্ন হওয়ার পাশাপাশি সামাজিক চাপও বাড়তে থাকে তার। কেননা ৪১তম বিসিএস করোনা মহামারীর কারণে অনেক বিলম্বিত হয়ে যায়। ৪২তম বিসিএসে কেবল ডাক্তারদের নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, আমি বিসিএস বাদে অন্য কোনো চাকরির পরীক্ষায় আবেদন করতাম না। ধর্মীয় কারণে ব্যাংকের পরীক্ষাগুলোয়ও অংশগ্রহণ করতাম না। বিসিএস এর মধ্যে টেকনিক্যাল অথবা শিক্ষা ক্যাডারেও এপ্লাই করা হতো না। কেবল জেনারেল ক্যাডারে এপ্লাই করতাম। তাই কখনো কখনো মনে হতো, একটা বড় গ্যাম্বলিং করে ফেলছি।

সে কারণে জোহায়ের সিদ্ধান্ত নেন, কোনো কারণে ৪৩তম বিসিএসে না হহলে জিআরই দিয়ে দেশের বাইরে চলে যাবেন। তিনি বলেন, এটাই ছিল আমার ‘এক্সিট প্ল্যান’। তাই আমি আর ৪৪ ও ৪৫তম বিসিএসের জন্য আবেদনও করিনি। এ ধরনের সিচুয়েশনের ক্ষেত্রে অবশ্যই একটা এক্সিট প্ল্যান থাকা বাঞ্ছনীয়। তবে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের আমার ওপর বিপুল আস্থা ছিল, যা আমাকে সবসময় অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যায় অনিশ্চিত সময়ে।

প্রথম বিসিএস ৪১তম-তে হাতের লেখা ধীরগতি থাকায় বাংলাদেশ বিষয়াবলীর লিখিত পরীক্ষায় ৬০ মার্ক উত্তর করতে পারেননি। ভাইভা দিলেও জেনারেল ক্যাডার পদে সুপারিশপ্রাপ্ত না হওয়ার পেছনে এটি বড় কারণ ছিল বলে মনে করেন তিনি।

পরে ৪৩তম বিসিএসে নিজের সীমাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন জোহায়ের। দ্রুত লেখার যথাযথ অনুশীলন করায় পরীক্ষায়ও পরিপূর্ণ উত্তর করে আসতে পারেন। প্রথম বিসিএসে কিছু ভুলত্রুটি থাকলেও সেগুলো যদি পরিশ্রমের মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠা যায় তবে আশানুরূপ ফলাফল আসবে বলে মত তার। তিনি বলছিলেন, প্রচেষ্টার কোনো কমতি রাখা যাবে না। যেন পরবর্তীতে নিজেকে এ প্রশ্ন না করেন যে, আমি কি নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েছিলাম?

জোহায়েরের মতে, বিসিএসের ভাইভা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ছোট একটি গ্রুপ করে সমমনা মানুষদের নিয়ে ভাইভার জন্য অনুশীলন করতে পারলে খুবই ভালো হয়। আমাদের পাঁচজনের একটি গ্রুপ ছিল এবং আমরা নিয়মিত সেখানে ভাইবা প্র্যাকটিস করতাম। সে গ্রুপের চারজনই জেনারেল ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে যাই। তাই সঠিক পার্টনার নির্বাচন করে কার্যকরী স্ট্র্যাটেজি এপ্লাই করাটা গুরুত্বপূর্ণ।

তার সফলতায় কাদের ধন্যবাদ দিতে চান জানতে চাইলে বলেন, আমার সফলতার পেছনে প্রথমেই ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার বাবা-মাকে। গ্র্যাজুয়েশনের পর আমাকে কোনোরকম উপার্জন করার জন্য তারা কোনো চাপ দেননি। আমাকে প্রস্তুতির জন্য সব ধরনের সহায়তা দিয়ে গেছেন এবং আমার সফলতার জন্য আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে প্রার্থনা করেছেন। এটা আমার জন্য অনেক বড় একটি পাওনা ছিল। এছাড়াও আমার ভাই, বোন এবং দুলাভাই আমাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দিয়েছেন প্রস্তুতির সময়ে। তাদের সবার কাছে আমি চিরঋণী।

আরো পড়ুন: সম্পূর্ণ বিনাখরচে পড়ুন অক্সফোর্ড-হার্ভার্ডসহ ১৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে, আবেদন আজ থেকে

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জোহায়ের বলেন, গ্র্যাজুয়েশনের পরপরই বিসিএস এর প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দিই বলে মাস্টার্স করার সুযোগ হয়নি। তাই চাকরি পার্মানেন্ট হবার পর দেশের বাইরে থেকে মাস্টার্স এবং সম্ভব হলে পিএইচডি করার ইচ্ছা আছে। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করবে। দেশের ট্যাক্স টু জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি করতে হবে। তাই যতটা সম্ভব নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য একনিষ্ঠভাবে চেষ্টা করে যাব। যেন বাংলাদেশ আরো স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে।

বিসিএস প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, বিসিএসের জন্য অধ্যবসায়ী হওয়াটা জরুরি। হতে হবে প্যাশনেট। চূড়ান্ত ফলাফল পেতে প্রতিভাবান হওয়ার পাশাপাশি কঠোর শ্রম এবং ধৈর্যেরও প্রয়োজন। যারা বিসিএসের জন্য চেষ্টা করেন, তারা সবাই জানেন বিসিএসটা একটা সময়ে আবেগে পরিণত হয়। এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মানজনক চাকরি হলেও পদের সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত থাকায় আমরা অনেকেই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হই না।

জীবনের মূল্যবান বছরগুলো ঠিকই চলে যায় উল্লেখ করে বলেন, ৪৩তম বিসিএসে আবেদন করেন ৪ লাখ ৩৫ হাজার ১৯০ জন, যার মধ্যে জেনারেল ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হন মাত্র ৬৪৫ জন। শতকরায় কেবল ০.১৪৮ শতাংশ। তাই আমার একটি পরামর্শ থাকবে যে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে প্রথম বিসিএস দেবার চেষ্টা করবেন, যেন প্রথমবারেই হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে প্রিলির পাশাপাশি লিখিত কিছু অংশ কাভার করে ফেলতে পারেন। তবুও যদি কোনও কারণে প্রথমবারে না হয়, তবে সে কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোকে এড্রেস করে দ্বিতীয়বারেই যেন হয়ে যায় সেভাবে প্রস্তুতি নেবেন।

পাশাপাশি অবশ্যই একটি এক্সিট প্ল্যান রেডি রাখবেন। কেননা বিসিএসই জীবনের শেষ না। একটি সরকারি চাকরির জন্য জীবন উৎসর্গ না করে একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করে এগোলেই দারুন সব সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত হয়ে যেতে পারে। হতে পারে এর থেকেও অনেক ভালো কিছু আল্লাহ আপনার জন্য লিখে রেখেছেন। এটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, রিজিকের অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে হবে এবং নিজ প্রচেষ্টা ও কেবল আল্লাহর ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখতে হবে। 

সবার জন্য শুভকামনা জানিয়ে জোহায়ের বলেন,  দোয়া করবেন যেন আমি দেশ ও  দেশের মানুষের জন্য প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হিসেবে ভালো কিছু করতে অবদান রাখতে পারি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence