ড্রাগন চাষে সফলতা দেখছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র রাকিব

ড্রাগন চাষে সফলতা দেখছেন উদ্যোক্তা রাকিব
ড্রাগন চাষে সফলতা দেখছেন উদ্যোক্তা রাকিব  © সংগৃহীত

ড্রাগন ফল চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা মো. রাকিব হোসেন (২৪)। ইউটিউবে ড্রাগন চাষিদের সফলতার গল্প দেখে এ ফল চাষে ঝুঁকে পড়েন তিনি। রাকিব হোসেন উপজেলার কনে-শ্বর ইউনিয়নের তিলই দিঘীর-পাড় এলাকার মো. আলী আকবর সরদারের ছেলে। তিনি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তারা তিন ভাই দুই বোন। পরিবারে সবার ছোট রাকিব।

রাকিব বলেন, নিজের কাছে তো তেমন টাকা নেই। অনেক ভেবে কয়েকজন বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার চাই। তারাও আমাকে টাকা ধার দেয়। এরপর বাড়ির পাশে ছোট এক একর জমির পুকুর লিজ নেই। পুকুরে মাছ চাষ শুরু করি। পরে ইউটিউবে ড্রাগন ফলের চাষ দেখি। কম জায়গায় ড্রাগন চাষ করা যায়। তাই পুকুর পাড়ের এক বিঘা জমিতে শুরু করি ড্রাগন চাষ। 

রাকিব আরও বলেন, ছোটবেলা থেকে কৃষিকাজেও প্রতি প্রবল ইচ্ছা ছিল। তাই বাড়ির আশপাশে বিভিন্ন ফলের গাছ রোপণ করি। করোনার সময় ঘরে বসে ছিলাম। এ সময় ইউটিউবে ড্রাগন ফল চাষের ভিডিও দেখি। ড্রাগন চাষে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফলাফল পাওয়া যায়। আবার ঝুঁকিও কম। আমি উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে পরামর্শ দেয়। আমি সেই পরামর্শ অনুযায়ী কাজ শুরু করি।

জানা যায়, রাকিব এক একর জমির পুকুর লিজ নেন। পুকুর পাড়ের এক বিঘা জমিতে পিলারের মাধ্যমে গাছ লাগান। প্রতিটি পিলার বানাতে তার ৪০০-৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। তার বাগানে এমন ১০০ পিলার রয়েছে। প্রতিটি পিলারে চারটি করে গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে ১০-১৫ কেজি ফল হয়। যার বাজার মূল্য প্রতি কেজি দুই থেকে তিনশত টাকা। বর্তমানে তার বাগানে ৬০-৭০ হাজার টাকার ফল রয়েছে।

shariatpur-2-20220916110820

সরেজমিনে দেখা যায়, রাকিবের বাগানে ড্রাগনের পাশাপাশি লেবু, পেয়ারা, মাল্টা, কলা, আম, বেদেনাসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ রয়েছে। বেশ কিছু গাছে ফলও ধরেছে। পুকুর পাড় যেন হরেক রকম ফলের সমাহার। ফলগাছের ক্ষতি যেন না হয়, সেজন্য পুকুর পাড় নেট দিয়ে আটকানো রয়েছে। আর পুকুরে কার্প জাতীয় মাছ চাষ করা হচ্ছে।

রাকিব বলেন, প্রথম যখন কাজ শুরু করি, তখন কেউ আমার পাশে ছিল না। সবাই বিরোধীতা করেছে। নিজের মনের জোরে এখনও কাজ করে যাচ্ছি। তবে সফলতা পেয়েছি। আমার বাগানে উন্নত-জাতের কলা, আম, লেবু, পেয়ারাসহ বেশ কিছু ফলের গাছ রয়েছে। জায়গা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আরও বড় করে বাগান করার জন্য। সবচেয়ে ভালো লাগে, আমার বাগানের ফল বাগান থেকেই বিক্রি হয়ে যায়। বাজারে নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। বাগানে লাল, হলুদ ও সাদা জাতের ড্রাগন ফল রয়েছে। এর মধ্যে লাল ড্রাগন বেশি রয়েছে। বাগানে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করি না, শুধু কেঁচো সার ব্যবহার করি। এতে মাটির উৎপাদন শক্তি বজায় থাকে। প্রাকৃতিক-ভাবে সুস্বাদু ফল পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন: মুরগি-ডিমের দাম বেড়েছে

স্থানীয় যুবক সুলাইমান বলেন, রাকিব যখন শুরু করে, তখন অনেকেই তাকে নিয়ে নানা মন্তব্য করত। আবার অনেকেই বলত যা খরচ হবে, তা উঠবে না। এগুলো করে এখন আর কেউ আয় করতে পারে না। তারপরও রাকিব থেমে থাকেনি। নিজের উদ্যমে কাজ করে গেছে। নিজের লক্ষ্য ঠিক রেখে এগিয়ে গেছে। এখন সে সফল। আমিও তার কাছ থেকে গাছ নিয়ে লাগিয়েছি। তার চারার মান ভালো।

উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি কনে-শ্বর ইউনিয়নের দায়িত্বে রয়েছি। আমার এই এলাকায় রাকিব নামে একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা রয়েছে। তাকে আমরা বিভিন্ন ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে থাকে। নিয়মিত তার বাগানে গিয়ে খোঁজ-খবর নিই।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!