ঢাবি ছাত্রলীগের হল কমিটিতে বিতর্কিতরা

ছাত্রলীগের হল কমিটিতে বিতর্কিতরা
ছাত্রলীগের হল কমিটিতে বিতর্কিতরা  © টিডিসি ফটো

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হল কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের স্বাক্ষরে কমিটি প্রকাশ করা হয়। এক বছর মেয়াদী এই কমিটিতে শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে বিতর্কিতদের হল কমিটিতে পদায়ন না করার ঘোষণা দিয়েছিলো শাখা ছাত্রলীগ। কিন্তু সে কথা রাখেনি তারা। বেশ কয়েকটি হলে বিতর্কিতরা পদ পেয়েছে।

বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় আবু ইউনুছকে। ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের এই শিক্ষার্থী এর আগে হলে সিট দখল ও প্রভোস্টের কক্ষ ভাঙচুরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাখা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন। পরে বহিষ্কারাদেশ তুলে হলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিদেশি অতিথিদের আগমন উপলক্ষে আয়োজিত আনন্দ মিছিলে ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষে জড়ান আবু ইউনুছ। এছাড়া তার বিরুদ্ধে পদ্মা ব্লকের ১১০০৩, ১১০১১ ও ১১০১৩ নম্বর কক্ষ দখলের অভিযোগ আছে। সম্প্রতি হলের গেস্টরুমে আবু ইউনুছের অনুসারীরা এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করে। এতে ওই শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় তিনজন ছাত্রলীগ কর্মীকে হল থেকে বহিষ্কার করে প্রশাসন। একই হলের সভাপতি সজিবুর রহমান সজিবের বিরুদ্ধে যমুনা ব্লকের ৯০০৩, ৯০০৪ ও ৯০০৮ নম্বর কক্ষ দখলের অভিযোগ আছে।

আরও পড়ুন- ছাত্রলীগের চার নেতার সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মেহেদী হাসান শান্ত। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ। ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ সভাপতিকে মারধর করার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া জোর করে হলের ৩০৯ নম্বর কক্ষ দখল করে তালা দিয়েছেন বলেও হল সূত্র জানায়। ডাকসুর সাবেক ভিপি নুর ও তার সহযোগীদের ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন শান্ত। তিনি ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী।

মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হোসেন শান্ত লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী। হাসিবুল হোসেন শান্ত হল সংসদের সাবেক জিএস। তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালের মার্চে ডাকসু নির্বাচনে জিএস নির্বাচিত হওয়ার পর এই হলের ৩০৫ নাম্বার রুম জোরপূর্বক দখলে নিয়েছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে এই হলের ছাত্রলীগের অনেক সিনিয়র নেতার সাথে খারাপ ব্যবহার করারও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের সময় ফেসবুকে লিখার অপরাধে প্রথম বর্ষের পাঁচ শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হল থেকে বের করে দিয়েছিলেন তিনি।

সূর্যসেন হলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মারিয়াম জামান খান সোহান। শাখা সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী মারিয়াম জাহান সোহানের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে।এর মধ্যে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত হামলার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও ২০১৯ সালের অক্টোবরে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় দৈনিক যায়যায়দিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আনিসুর রহমান ও বিজনেস বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নুরুল আফসারের ওপর সোহান অতর্কিত হামলা করে।

আরও পড়ুন- ঢাবি জিয়া হল ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আজহার-শান্ত

কামাল উদ্দিন রানার বিরুদ্ধে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় থাকার অভিযোগ আছে। তিনি শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী তিনি। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ছাত্রলীগ সরকার বিরোধী আন্দোলন হিসেবে দেখে। কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে সাত কলেজের অধিভুক্ত বাতিলের দাবিতে চলা আন্দোলনে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করার অভিযোগ আছে। এছাড়া কর্মসূচিতে না যাওয়ায় চার শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিলো। একই হলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকার অভিযোগ রয়েছে। 

স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন মুনেম শাহরিয়ার মুন। তার বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর করার অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে তার নির্দেশে হলে দ্বিতীয় বর্ষের চার ছাত্রলীগ কর্মী প্রথম বর্ষের পাঁচজনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছিলো। সেসময় এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ সমালোচনা হয়।

এসব বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, আমরা পরিচ্ছন্নদের পদ দিয়েছি। পদ পাওয়াদের মধ্যে কেউ বিতর্কিত নেই। পরিশ্রম ও আদর্শ বিবেচনা করে নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ