খালেদা জিয়ার সঙ্গে যুবলীগ নেত্রীর ছবি ভাইরাল

২০০২ সালে সেনানিবাসে মঈনুল রোডের বাসায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে যুবলীগ নেত্রী মৌসুমী ফাতেমা
২০০২ সালে সেনানিবাসে মঈনুল রোডের বাসায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে যুবলীগ নেত্রী মৌসুমী ফাতেমা  © টিডিসি ফটো

গত শনিবার ঘোষণা করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। ২০১ সদস্যের এই কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী চৌধুরী মৌসুমী ফাতেমা (কবিতা)। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পাওয়ার পরই তাঁর কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশেষ করে ফেসবুকে শেয়ার দিয়ে অনেকেই নানা মন্তব্য করছেন।

মৌসুমী ফাতেমা যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাহী সদস্য হয়েছেন। গতকাল রোববার ফেসবুকে যে ছবিগুলো শেয়ার করা হয়েছে সেখানে দেখা যাচ্ছে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে সোফায় বসেন তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন মৌসুমী।

একটি ছবিতে খালেদা জিয়া সোফায় বসা আর মৌসুমী মেঝেতে বসে সোফার হাতলে হাত রেখেছেন। ছবিগুলো বিএনপি চেয়ারপারসনের তৎকালীন সেনানিবাসের বাসায় তোলা।

ফেসবুকে ঘুরতে থাকা এই ছবিতে এমন মন্তব্যও এসেছে, মৌসুমী ফাতেমা কীভাবে যুবলীগে পদ পেলেন। কেউ কেউ মৌসুমী ও তাঁর পরিবারকে বিএনপির সমর্থক ও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলেও উল্লেখ করেছেন। অবশ্য খোঁজ নিয়ে মৌসুমী বা তাঁর পরিবার বিএনপির ঘনিষ্ঠ বলে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাঁর বাবা শিক্ষকতা করতেন। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। এক ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আরেক ভাই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। আরেক ভাই থাকেন গ্রামে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে।

গ্রামে থাকা এই ভাইকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে বলা হচ্ছে। অবশ্য এখন সেখানে বিএনপির কোনো কমিটি নেই। ফলে তিনি এখন কোনো পদেও নেই।

যুবলীগের এক নেতা এ নিয়ে বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে যেখানে ছবি তোলা হয়েছে, সেখানে কোনো অনুষ্ঠান নেই। তাঁরা ধারণা করছেন, পারিবারিক সম্পর্ক আছে বিধায় এই ছবি। তবে এই নেতা নিজেই বলছেন, তাঁর কাছে মৌসুমীর বিএনপির সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ নেই। মৌসুমী ফাতেমা ছাত্র রাজনীতিতে ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন। এখন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। স্কুলজীবন থেকেই তিনি সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন। জাতীয় পর্যায়ে খেলাধুলায় বেশ কিছু পুরস্কার জিতেছেন। তাই সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছ থেকে পুরস্কার নেওয়ার ছবি তাঁর আছে। কিন্তু এই ছবি তো অনুষ্ঠানের নয়। তাহলে তিনি ছবি তুললেন কীভাবে? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৌসুমীর এক ভাই ২০০০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এসএসএফে কর্মরত ছিলেন। ২০০১ সালের পয়লা অক্টোবরের ভোটে আওয়ামী লীগ পরাজিত হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খালেদা জিয়া। ওই ভাই তখনো এসএসএফে ছিলেন।

সেই সূত্রেই বিএনপির চেয়ারপারসনের বাসায় এই ছবি তোলা। তবে যখন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখনো মৌসুমী তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে এসএসএফের অনুষ্ঠানে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছবি তুলেছেন।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফাতেমার তোলা পুরনো ছবি

মৌসুমী ফাতেমা বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি জাতীয় পর্যায়ে নানা পুরস্কার পেয়েছি। ১৯৮৯-৯০ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের কাছ থেকে পুরস্কার পেয়েছি। তাঁর স্ত্রী বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গেও ছবি আছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও ছবি আছে। আর যে ছবিটির কথা বলা হচ্ছে সেটি ১৮-১৯ বছর আগে তোলা। এর সঙ্গে আমি বা আমার পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, এর কোনো ভিত্তি নেই।

যুবলীগের এই নেতা বলেন, যে সময়ের ছবি নিয়ে কথা বলা হচ্ছে সেই সময়ে কিন্তু তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও আমার ছবি ছিল। মৌসুমী ফাতেমা বলেন, ‘এসএসএফের কিছু অনুষ্ঠান হতো। ফ্যামিলি প্রোগ্রামও হতো। সেখানে ভাইয়ের সঙ্গে গিয়েছি। এটাকে কেন রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা, সেটা বুঝলাম না।’

তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে খুবই বিরক্ত। তবে সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, তুমি মেধাবী। রাজনীতিতে ভালো করবে। এগুলোকে পাত্তা দেওয়ার কিছু নেই। আমাকে তাঁরা যুবলীগের জন্য, আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করতে বলেছেন।’ [সূত্র: প্রথম আলো]


সর্বশেষ সংবাদ