আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানালেন গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা
- গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫, ০৫:২৫ AM , আপডেট: ১৫ মে ২০২৫, ০৭:২২ PM
কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন তৎকালীন আওয়ামী সরকারের দমন-নিপীড়নের কারণে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়। পরে ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের ফলে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। এখন সেখানেই তিনি অবস্থান করছেন।
এদিকে শনিবার রাতে (১০ মে) আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে কেউ দেখছেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের জয় হিসেবে, কেউবা দেখছেন বিচার প্রক্রিয়ার একটি প্রারম্ভিক ধাপ হিসেবে। গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) ছাত্রনেতাদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিবেদক শাকিল শাহরিয়ার।
দীর্ঘদিনের রক্তঝরা সংগ্রামের ফসল বলে মন্তব্য করেছেন, ওবায়দুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তটি নিপীড়িত জনগণের দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের একটি স্বীকৃতি। যারা গত দেড় যুগ ধরে রাষ্ট্রযন্ত্রকে জিম্মি করে রেখেছিলো, ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিলো, বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের গুম, খুন, নির্যাতন করেছিলো—তাদের আর রাজনীতিতে থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে জনগণ যেভাবে রক্ত দিয়ে নতুন পথ তৈরি করেছে, তা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। দুই সহস্রাধিক শহীদ এবং হাজার হাজার আহত মানুষ আজকের এই সিদ্ধান্তের নীরব সাক্ষী। কিন্তু এই রক্তের ঋণ তখনই শোধ হবে, যখন আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তাদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং নেতৃত্বকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচার করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মাদ আলী ত্বোহা এই সিদ্ধান্তকে ‘জনতার প্রাথমিক বিজয়’ বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, গত ১৫ বছরের স্বৈরশাসন, ভোট ডাকাতি, বিরোধী মতকে দমন, রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন এবং গুম-খুনের বিরুদ্ধে জনগণের যে ক্ষোভ ও প্রতিরোধ দেখা গিয়েছে, তা জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। ৫ আগস্টের পর ছাত্র অধিকার পরিষদ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে দেশের সর্বত্র সোচ্চার ছিল।
তিনি বলেন, ‘আজকের এই নিষেধাজ্ঞা কেবল শুরু। আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে, সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করা এবং নেতৃত্বকে মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিকভাবে বিচারের আওতায় আনা। রাষ্ট্র সংস্কারে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করাও এখন সময়ের দাবি। আমাদের সংগ্রাম চলবে যতক্ষণ পর্যন্ত গণহত্যার নায়করা শাস্তি না পায়।’
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক বেলাল হোসেন (আরিয়ান) বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ হওয়া গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তারা দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী মত দমন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে একটি ভয়াবহ দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিল। বিশেষ করে জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় তাদের সংশ্লিষ্টতা আজ ইতিহাসের নিকৃষ্টতম অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। শুধু নিষিদ্ধ করলেই চলবে না, দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব এবং সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই নিষেধাজ্ঞা যেন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার একটি দৃঢ় ভিত্তি হিসেবে কাজ করে—এটাই প্রত্যাশা।’
শাখা ছাত্রদলের সভাপতি দূর্জয় শুভ অবশ্য এই সিদ্ধান্তের পেছনে প্রক্রিয়াগত কিছু প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারকে স্বাগত জানাই যে, তারা অবশেষে বিচারিক প্রক্রিয়ার সূচনা করেছে। তবে শনিবার যে সিদ্ধান্ত এলো, সেটি মূলত অনেক পুরনো দাবি হলেও, ঘোষণার ধরন নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। হাসনাত আব্দুল্লাহর এক ঘণ্টার নোটিশে এমন একটি বড় রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা কতটা প্রক্রিয়াসম্মত হয়েছে, তা নিয়ে জনগণের মধ্যেও প্রশ্ন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছরে যে বীভৎসতা ঘটিয়েছে, এবং বিশেষ করে জুলাই আন্দোলনে যে নৃশংসতা চালিয়েছে, তার বিচার যদি সঠিকভাবে শুরু হয়, তবে দলটি এমনিতেই নিষিদ্ধ হয়ে যেতো। তাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একটি স্বচ্ছ ও কার্যকর বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা।’