স্বামী নিয়মিত আন্দোলনে গেলেও জানতেন না রিপনা, এরপর একদিন....

মো. জাহাঙ্গীর আলাম
মো. জাহাঙ্গীর আলাম  © সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে মো. জাহাঙ্গীর আলাম শহীদ হওয়ায় গভীর সংকটে পড়েছেন তার স্ত্রী। পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এখন দুই শিশু সন্তান এবং সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।

স্যানিটারি কারখানার শ্রমিক জাহাঙ্গীর (৩১) গত ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে বাড়ি থেকে বের হন। দীর্ঘ ১৬ বছরের স্বৈরশাসন পতনের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এ কর্মসূচিতে  অংশ নেন তিনি।

সেই দিনই স্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটলেও তিনি আর বাড়ি ফেরেননি, দেখতে পাননি যে আন্দোলন যার জন্য তিনি লড়াই করেছিলেন, তা জয়ী হয়েছে। শহীদ জাহাঙ্গীরকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয়। সে সময় তিনি সহস্রাধিক মানুষের সঙ্গে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ অভিমুখে যাত্রা করছিলেন।

‘আমার স্বামী গত ৫ আগস্ট ফজরের নামাজ পড়তে বের হন, কিন্তু আর ফেরেননি। পরদিন (৬ আগস্ট) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ডিএমসিএইচ) থেকে আমরা তার লাশ উদ্ধার করি,’ বেদনাবিধুর কণ্ঠে স্মৃতিচারণ করেন তার স্ত্রী, পোশাকশ্রমিক রিপনা খাতুন।

বর্তমানে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলার ভাঙা প্রেস এলাকায় বসবাসরত ৩০ বছর বয়সী রিপনা বলেন, ‘আমার স্বামী আন্দোলনে যেতেন, কিন্তু আমি জানতাম না। আমি তার আগেই কর্মস্থলে চলে যেতাম।’

জাহাঙ্গীরের অকালমৃত্যু তার পরিবারের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। চার সদস্যের পরিবার ছাড়াও তার বৃদ্ধ পিতা—৭৭ বছর বয়সী মো. বাহার উদ্দিন এবং ৭২ বছর বয়সী মা মোসাম্মাৎ ফাতেমা খাতুন—তার ওপর নির্ভরশীল ছিলেন।

‘আমার শ্বশুর-শাশুড়ি সিরাজগঞ্জ সদরের গ্রামের বাড়িতে থাকেন। আমার শাশুড়ি মানসিক প্রতিবন্ধী এবং শ্বশুর কর্মক্ষম নন,’ বলেন রিপনা। ‘আমার সাত বছর বয়সী মেয়ে লামিয়া ও চার বছর বয়সী ছেলে রাফিকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। পাশাপাশি শ্বশুর-শাশুড়ির দেখভালও করতে হচ্ছে,’ অসহায় কণ্ঠে জানান তিনি।

সিরাজগঞ্জের একটি গ্রামীণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে লামিয়া, তবে রাফিকে এখনও স্কুলে ভর্তি করা হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা পাননি বলে জানান রিপনা। তবে জামায়াতে ইসলামী থেকে দুই লাখ টাকা এবং আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন থেকে এক লাখ টাকা পেয়েছেন, যা তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিবার চালানোর জন্য কাজে লেগেছে বলে হানান তিনি।

তিনি সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে সরকারের কাছে সহায়তা চান এবং স্বামীর হত্যার বিচার দাবি করেন।

জাহাঙ্গীরের ভাগ্নে ও সহকর্মী শেখ ফরিদ বলেন, ‘৫ আগস্ট ফজরের নামাজের পর চাচা যাত্রাবাড়ীতে ঐতিহাসিক 'মার্চ টু ঢাকা' কর্মসূচিতে যোগ দিতে যান। কিন্তু এশার নামাজের পরও তিনি বাসায় ফেরেননি।’

‘আমার চাচা বাসায় না ফেরায় আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। আমি আমার এক বন্ধু ও চাচাকে সঙ্গে নিয়ে খুঁজতে বের হই। রাস্তায় এবং বিভিন্ন হাসপাতালে অনেক লাশ দেখতে পাই, কিন্তু তাকে খুঁজে পাইনি,’ ভারী কণ্ঠে বলেন ফরিদ।

তিনি বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত এক বন্ধুর পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে খোঁজ নিতে যাই। পরদিন (৬ আগস্ট) সকালে সেখানে গিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজির পর দেখি, আমার চাচার নিথর দেহ একটি বেঞ্চে পড়ে আছে।’

মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী গত ৫ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জাহাঙ্গীরকে ‘স্পট ডেড’ হিসেবে হাসপাতালে আনা হয়। গত ৬ আগস্ট তার লাশ সিরাজগঞ্জ সদরের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

ফরিদ জানান, জাহাঙ্গীর তার সহকর্মী ও পরিবারের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন। তিনি বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের জন্য পরিচিত ছিলেন এবং প্রায়ই সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের প্রতি অন্যায্য আচরণের কথা বলতেন।

ফরিদ আবেগতাড়িত কণ্ঠে গত ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় আন্দোলন থেকে ফেরার পথে জাহাঙ্গীর আলমকে দেখার কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আমরা যখন একে অপরকে অতিক্রম করছিলাম তখন চাচা আমাকে দেখে হেসেছিলেন।

সূত্র: বাসস


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence