ডাকসু নির্বাচন জুলাইয়ের পরে করার সুপারিশ প্রভোস্টদের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন জুলাইয়ের পরে করার পক্ষে মতামত দিয়েছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন হলের প্রভোস্টরা। একই সঙ্গে নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংজ্ঞা দ্রুততম সময়ে নির্ধারণের পক্ষে মত দিয়েছেন তারা।

ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে পরামর্শদান, নির্বাচনের আচরণবিধি প্রণয়ন/সংশোধন এবং ডাকসু ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র সংশোধন/পরিমার্জন করার বিষয়ে গঠিত পৃথক ৩টি কমিটির সঙ্গে আজ বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এ সুপারিশ ও মতামত প্রকাশ করেন হল প্রভোস্টরা। নতুন ছাত্রসংগঠনের আত্মপ্রকাশ এবং বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এমন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে। 

ডাকসু নির্বাচনে অনার্স, মাস্টার্স ও এমফিলের নিয়মিত শিক্ষার্থীরা প্রার্থী হতে ও ভোট দিতে পারবেন। পিএইচডি ও প্রফেশনাল কোর্সের শিক্ষার্থীরা প্রার্থী ও ভোট দিতে পারবেন না—এমন শর্ত নির্ধারণেও পরামর্শ আসে প্রভোস্টদের পক্ষ থেকে। 

ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোও ডাকসু সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে একমত। সংস্কারের পর নির্বাচনের দাবি তোলা ছাত্রসংগঠনগুলো বলছে, সব ছাত্রসংগঠনই চায় ডাকসু নির্বাচন হোক। তবে নির্বাচনের আগে গঠনতন্ত্র সংশোধনসহ ক্যাম্পাসে রাজনীতির সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। 

আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচন করতে চাই, এতে কোনো সন্দেহ নেই: ঢাবি ভিসি

সভায় উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক সুপন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে কারা ভোট দিতে পারবে, সে জন্য একটা মানসম্মত ব্যাখ্যা দরকার। প্রভোস্টদের পক্ষ থেকে এ নিয়ে বিভিন্নজন বিভিন্ন প্রস্তাব রাখেন।

তিনি বলেন, এ‘কজন শিক্ষার্থী চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়ার পর ছাত্র হিসেবে পরিগণিত হবে, নাকি ফলাফল প্রকাশ হওয়ার আগপর্যন্ত সে আমাদের ছাত্র হিসেবে ভোটাধিকার পাবে। একই সঙ্গে থিসিস জমা দেওয়ার পরপরই ছাত্র হিসেবে পরিগণিত হবে কি না, এ বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে। আমরা মূলত ছাত্রত্বের একটা স্ট্যান্ডার্ড সংজ্ঞার প্রস্তাব রাখি। একই সঙ্গে হলে কারা ভোট দিতে পারবে এবং কারা পারবে না, এ বিষয়গুলো। হলে থাকা ছাত্রদের হল কার্ড থাকতে হবে কি না, এগুলোই আজকের আলোচনায় স্থান পায়৷’

অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক সুপন বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। আরও বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলবে। এরপরই তারা একটা সিদ্ধান্তে আসবে। ডাকসু নির্বাচন একটা প্রক্রিয়া। কর্তৃপক্ষ যেহেতু এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছে, সেহেতু অবশ্যই তাদের এ বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে যেন খুব দ্রুতই ডাকসু দেওয়া যায়।’

আরও পড়ুন: রুয়েট ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হতে পারে আজ

বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন সফলভাবে আয়োজনের বিষয়ে পরামর্শদান, নির্বাচনের আচরণবিধি প্রণয়ন/সংশোধন এবং ডাকসু ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র সংশোধন/পরিমার্জন করার বিষয়ে গঠিত পৃথক তিনটি কমিটি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব কমিটি প্রতিনিয়ত ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন, সাধারণ ছাত্রছাত্রী, সাংবাদিকসহ সব অংশীজনের মতামত গ্রহণ করছে। কমিটিগুলো ইতোমধ্যেই কয়েক দফা বৈঠক করে অংশীজনদের লিখিত মতামত গ্রহণ করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন সফলভাবে আয়োজনের বিষয়ে পরামর্শদানের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশাকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সব ছাত্রসংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় ও আলোচনা সম্পন্ন করেছে। কমিটি শিগগিরই গুগল ফরমের মাধ্যমে ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করবে। চলতি সপ্তাহেই হল প্রাধ্যক্ষদেরর সঙ্গে এ বিষয়ে মতবিনিময় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময়ের বিষয়টিও শিগগিরই সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড : বেরোবির সিদ্ধান্তের ৪ মাস পরও অধরা অপরাধীরা

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধি প্রণয়ন/সংশোধনের জন্য প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সব ছাত্রসংগঠন, ডাকসুর সাবেক নেতৃবৃন্দ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা, সাধারণ শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির ২০১৯ ও ২০২৫ সালের সদস্যবৃন্দ, হল প্রভোস্ট, হাউজ টিউটরবৃন্দ এবং আগের ডাকসু নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তাদেরর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় সভা করে। সভায় অংশগ্রহণকারী অংশীজনদের সুচিন্তিত মতামত পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরির কাজ বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

এ ছাড়া ডাকসু ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র সংশোধন/পরিমার্জন করার বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকরামুল হককে আহ্বায়ক করে পৃথক একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এবং সব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রস্তাব আহ্বান করা হয়। এপ্রেক্ষিতে অনেক সুচিন্তিত প্রস্তাব পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করে গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রাথমিক খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রস্তুতকৃত খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত গ্রহণ করা হবে। প্রস্তাবনাসমূহ চূড়ান্ত হওয়ার পর গঠনতন্ত্র সংশোধনের বিষয়ে সুপারিশ পেশ করা হবে।

আরও পড়ুন: অবশেষে জানুয়ারি মাসের বেতন পেতে যাচ্ছেন সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী

ডাকসু নির্বাচন বিষয়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটির চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ার পর নির্বাচনের বিস্তারিত সময়সূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচন করতে চাই, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ এটা জুলাই স্পিরিটের প্রতি আমাদের কমিটমেন্ট। আমরা করতে চাই এ জন্য না যে কোনো রাজনৈতিক দল এসে আমাদের কী বলবে। নির্বাচন দেওয়ার কারণ, এটা আমাদের গণঅভ্যুত্থানের মূল স্পিরিটকে সম্মান জানানোর পথ।’

নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে ঢাবি উপাচার্য আরও বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন নিয়ে তিনটা কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশানসন এই কমিটিতে কোনোভাবে নাক গলাচ্ছে না। এই কমিটির পরামর্শক্রমেই নির্বাচন ঘোষণা করা হবে। কারও চাপে পড়ে আমরা এটা করব না। আমি ভয় পাই। তবে আমাকে ভয় দেখিয়ে কাজ করানো যাবে না।’

প্রসঙ্গত, ১৯৯০ সালের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সবশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালে। সেই নির্বাচনে তখনকার ছাত্রলীগ সভাপতিকে হারিয়ে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন গণ অধিকার পরিষদের বর্তমান নেতা নুরুল হক নুর।


সর্বশেষ সংবাদ