রগকাটা-গোপন রাজনীতি নিয়ে ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের যে জবাব দিল শিবির

  © টিডিসি ফটো

‘মেধাবীদের মুখোমুখি শিবির’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র অডিটোরিয়ামে ব্যতিক্রম এ আয়োজনটি করেছে সংগঠনটি। অনুষ্ঠানে ছাত্রশিবিরের বিষয়ে বিভিন্ন ধারণা নিয়ে শিক্ষার্থীদের করা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন নেতারা।

এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেনসংগঠনটির সাবেক কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি শিশির মনির, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ও হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী ড. মির্জা গালিব, বর্তমান কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম, ঢাবি শাখার বর্তমান সভাপতি সাদিক কায়েম ও ঢাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন।

অনুষ্ঠানে সমালোচক হিসেবে আলোচনার জন্য আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি, সাধারণ সম্পাদক মোতাহের হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি অর্পিতা গোলদার ও সাধারণ সম্পাদক আদনান মুস্তারি। অনুষ্ঠানে মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন ঢাবি ছাত্রশিবিরের বর্তমান সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ।

অনুষ্ঠানটি ৪টি পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। ১ম পর্বে ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারা সংগঠনটির পরিচিতি, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও প্রত্যাশা নিয়ে বক্তব্য দেন। এতে উদ্বোধনী বক্তব্যে সাদিক কায়েম বলেন, শিবিরের যে ৫ দফা কর্মসূচি তা সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীবান্ধব। ছাত্রশিবিরের সিলেবাস পুরোপুরি শিক্ষার্থীবান্ধব। ছাত্রশিবিরের সাথে যারা সম্পৃক্ত যারা তাদেরকে নিয়মিত রিপোর্ট রাখতে হয়। একজন শিক্ষার্থীকে দেশপ্রেমিক ও আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবই করে ছাত্রশিবির।

ড. মির্জা গালিব বলেন, জাতীয় রাজনীতিতে এমন কিছু ক্রিটিক্যাল মোমেন্ট আসে যখন তরুণ নেতৃত্বের প্রয়োজন হয়। যারা সৎ, আদর্শভিত্তিক রাজনীতি করে, যারা মনে করে যে হিমালয় পর্বত আমরা উল্টিয়ে ফেলে দিতে পারে। ক্যাম্পাসে শিবির পরিশীলিত রাজনীতি করে। অন্যান্যদেরও পরিশীলিত রাজনীতি করা উচিত। যদি পরিশীলিত রাজনীতি বন্ধ না হয় তাহলে আমি মনে করা ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত।

জাহিদুল ইসলাম বলে, একজন ছাত্রকে একাডেমিক ক্যারিয়ারের পাশাপাশি ধর্মীয়, সামাজিক, বৈজ্ঞানিকসহ সকল পর্যায়ে যা কিছু প্রয়োজন তা ছাত্রশিবির বাস্তবায়ন করে। ছাত্ররা সবাই ফার্স্ট হয় না। একেকজন একেক পজিশন অর্জন করেন। আমরা আসলে তাদেরকে এমন জিনিস পুশ করা যার উদ্দেশ্য হচ্ছে যে সে যে তার সক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ফলাফল লাভ করতে পারে।

শিশির মনির বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি ছাত্রশিবির লেজুড়বৃত্তি করবে না। তারা দলবাজি করবে না। আমরা ছাত্রশিবিরের কাছ থেকে মনে করি তারা লেজুড়বৃত্তি করবে না। তারা নরমাল লাইফ লিড করবে। তারা অস্বাভাবিক লাইফ লিড করবে না। ছাত্রশিবিরের ছেলেরা এমন আচরণ করবে যে তারা শিক্ষককে প্রশ্নের সম্মুখীন করে চ্যালেঞ্জ জানাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখন কোনো আন্তর্জাতিক মানের জার্নাল বের হয় না। আমরা চাই ছাত্রশিবির আন্তর্জাতিক মানের জার্নাল পাবলিশে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দেবে। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হারানো সেই গৌরব ফিরিয়ে আনতে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দেবে।

২য় পর্বে শিবিরের সমালোচনার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রশ্ন করেন। ৩য় পর্বে শিবিরের আমন্ত্রিত আলোচকবৃন্দ ঢাবি সাংবাদিক সমিতি ও ঢাবি ডিবেটিং সোসাইটির নেতৃবৃন্দের উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তর দেন। ৪র্থ পর্বে উপস্থিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে প্রশ্নগ্রহণ করা হয় এবং তৎক্ষণাৎ আলোচকরা তার উত্তর দেন।

২য় পর্বে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি ঢাবির দুই সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছাত্রসংঘের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা, ছাত্রশিবিরের রগকাটা রাজনীতি, গোপন রাজনীতি, রাজনৈতিক অতৎপরতাসহ বেশকিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেন। 

প্রশ্নোত্তর পর্বে ড. মির্জা গালিব বলেন, ইতিহাস হচ্ছে পলিটিক্যাল ভার্সন। আমেরিকানদের ইতিহাস কৃষ্ণাঙ্গদের কাছে অন্যরকম। হোয়াইটদের কাছে একরকম। একটি নির্দিষ্ট ইতিহাস ভারতীয়দের কাছে একরকম, পাকিস্তানীদের কাছে একরকম।  তাহলে কোন ইতিহাসটা সত্য? ঠিক তেমনি বাংলাদেশে কি কখনো ৭১-কে নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল? 

তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের ৭১ নিয়ে ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা আছে। যদি ৭১ নিয়ে একাডেমিক ডিসকাশন করার সুযোগ দেন তাহলে আমরা একাত্তরের বিষয়ে জবাব দেব। 

ছাত্রশিবিরের গোপন রাজনীতির বিষয়ে জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা এই যে ওপেনে প্রোগ্রাম করছি এটা কি গোপন কার্যক্রম? আগে মিডিয়াগুলো নানা সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের কাজগুলো প্রচার করতে পারত না।

২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রশিবিরের কতজন শহীদ হয়েছে, সে তালিকা তারা কেন প্রকাশ করে না- এ ব্যাপারে জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা কিছু প্রকাশ করলাম, অন্য দলগুলো কিছু প্রকাশ করল। সব মিলিয়ে দেখা গেল যে শহীদের সংখ্যা ৫০০ হলো। কিন্তু শহীদ তো ২০০০-এর মতো। তাহলে বাকি শহীদগুলোকে কারা নেবে? আমরা মনে করি সকল শহীদই আমাদের। আমরা সকলকে নিজেদের মনে করি। আমরা তাদের খোঁজ-খবর রাখছি।

রগকাটার বিষয়ে সাদিক কায়েম বলেন, ছাত্রশিবিরের ওপর মিডিয়া ক্রাইম হয়েছে। শিবিরের কে কে জড়িত তাদের নাম নেই নিউজগুলোতে। অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে শিবিরের নামে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনারা নিউজগুলো খুঁজে খুঁজে দেখবেন। পরবর্তীতে এ ব্যাপারে আর কোনো প্রমাণও পাওয়া যায়নি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence