ছাত্রলীগের পদে থেকে বিয়ে, দাওয়াতে গেলেন সাদ্দাম-ইনানও
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৪৩ AM , আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০১:৪৩ PM
বিয়ে করেছেন ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হোসেন শান্ত। কনে সামিয়া ইফফাত ঢাকা সিটি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সাবেক ছাত্রী। গত শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের মাধ্যমে যুগলবন্দি হন এই দম্পতি।
বর হাসিবুল হোসেন শান্ত ছাত্রলীগের (সাদ্দাম-ইনান কমিটির) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। আর কনের বাবা পটুয়াখালী জেলার মহীপুর থানা বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। রেওয়াজ অনুযায়ী, ছাত্রলীগের পদে থাকা অবস্থায় বিবাহ করলে পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে তারা বিয়ে করেন। কিন্তু সেই রেওয়াজ ভঙ্গ করেছেন ছাত্রলীগের এই নেতা। এখন পর্যন্ত তিনি নিজে পদত্যাগ করেননি এবং সংগঠন ও তাকে অব্যাহতি দিয়ে শূন্যপদ ঘোষণা করেনি।
তবে ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা অবস্থায় বিয়ে করায় সমালোচনা তৈরি হয়েছে। সেই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান। কোনো ধরনের সাংগঠনিক নিয়ম ফলো না করে একজন পদধারী নেতার বিয়েতে সরাসরি উপস্থিত থাকায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে। ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে সামনে নির্বাচনে কঠিন মুহূর্তে বিয়ে করে সংগঠনের প্রতি কমিটমেন্ট রক্ষা করেনি বলে তাদের অভিযোগ। এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে বর্তমান ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেও।
তবে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে এ বিষয়ে সরাসরি কিছু লিখা না থাকায় অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫ (গ) ধারায় বলা হয়েছে, বিবাহিত, ব্যবসায়ী ও চাকরিতে নিয়োজিত কোনো ছাত্র ও ছাত্রী ছাত্রলীগের পদে থাকতে পারবেনা।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শহীদ মনিরুজ্জামান বাদল ১৯৯২ সালের ৯ জানুয়ারি শামসুন নাহার হলের সামনে ঘাতকের নির্মম বুলেটে নিহত হন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মনিরুজ্জামান বাদল স্ত্রী-সন্তান রেখে মারা যাওয়ায়, তার স্ত্রী-সন্তান দায়িত্ব নেওয়ার কোন লোক ছিল না। মনিরুজ্জামান বাদলের রেখে যাওয়া স্ত্রী-সন্তান দায়িত্ব নেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগ একটা উঠতি বয়সী যুবকদের সংগঠন, তাই যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই দুর্ঘটনা ঘটলে স্ত্রী-সন্তানদের অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী জারি করেন স্ত্রী-সন্তান থাকলে ছাত্রলীগ করতে পারবেনা। এ নিয়ে গঠনতন্ত্রে কিছু লিখা না থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর এই আদেশ ছাত্রলীগে অলিখিত নিয়ম হয়ে আছে।
আরো পড়ুন: রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন, তবুও প্রেম-প্রণয় তাদের
নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকেরা ছাত্রলীগের পদে থাকা অবস্থায় বিবাহ করেনি। দায়িত্ব থেকে অবসর পাওয়ার পর তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তবে স্থানীয় কিংবা জেলা অথবা কেন্দ্রীয় পর্যায়ের বাইরে বিবাহিত হওয়ার পরেও অনেকেই সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকসহ ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে বহাল রয়েছেন।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, এর আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা সনজিৎ চন্দ্র দাস, লেখক ভট্টাচার্য, আল নাহিয়ান খান জয়সহ অনেকেই তাদের বিবাহের পূর্বে পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। হাসিবুল হোসেন শান্তও এটি করতে পারতেন। তার এ দৃষ্টান্ত ছাত্রলীগের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ছাত্রলীগের প্রভাবশালী পদে থেকে এরকম ধুমধাম বিয়ে সম্প্রতি কয়েক কমিটি কেউ করেনি। নরমালি এরকম পদে আসীন হওয়ার পর জেলা-উপজেলার নেতারা করে থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের আরেক কেন্দ্রীয় নেতা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ছাত্রলীগের এই নেতাকে সংগঠন দুহাত ভরে দিয়েছে। ডাকসুর জিয়া হল সংসদের জিএস ছিলেন। এছাড়াও হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগে সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী হওয়ায় তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক পদও লাভ করেন। কিন্তু এখন দল এক কঠিন মুহূর্তে। এ সময় ছাত্রলীগের এরকম ভাইটাল পদে থেকে বিয়ে করায় কর্মীদের মাঝে ভুল মেসেজ গিয়েছে। সংগঠনের প্রতি কমিটমেন্ট তৈরি না করে যখন যা খুশি করা যায় এমন মেসেজ গিয়েছে।
ছাত্রলীগ নেতা হাসিবুল হোসেন শান্ত দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে দপ্তরের সঙ্গে কথা বলুন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিবাহিত হলে পদ দেওয়া যাবে না সেটা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু পদ পাওয়ার পর বিয়ে করলে সেক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা নেই।
“তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মাসের শেষে বর্ধিত সভায় এ বিষয়টি প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি মনে করলে তখন সেটা উত্থাপিত হবে। এতে চাইলে তাকে অব্যাহতি দিতে পারে; আবার নাও দিতে পারে।”