কেন্দ্র ও ঢাবি ছাত্রলীগের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে, ‘সাংগঠনিক’ বিশৃঙ্খলার শঙ্কা

কেন্দ্রীয় ও ঢাবি ছাত্রলীগের র্শীষ ৪ নেতা
কেন্দ্রীয় ও ঢাবি ছাত্রলীগের র্শীষ ৪ নেতা  © ফাইল ছবি

কমিটি গঠনের বছর না পেরোতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও সুপার ইউনিট খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার শীর্ষ নেতাদের দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। কেন্দ্রীয় পূণাঙ্গ কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ ২ নেতার অনুসারীদের কম পদায়ন; অধিভুক্ত সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অধীনে আনা নিয়ে টানপোড়েন; কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ হস্তক্ষেপমুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এবং সর্বশেষ ১ সেপ্টেম্বরের ছাত্রসমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখাকে একপেশে রাখার পর তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়টি প্রকট আকার ধারণ করে।

এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের এক ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তাদের দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এ নিয়ে ‘সাংগঠনিক’ বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে ইঙ্গিত করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শয়ন। পরে তার সেই স্ট্যাটাসটি শেয়ার দেন ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈকত, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজীবুল ইসলাম বাপ্পী ও সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ড। এছাড়াও শেয়ার দেন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছেন রিয়াজ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদও। 

জানা যায়, গত বছরের ২০ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শেখ ওয়ালী আসিফের ইনান নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন একইসঙ্গে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তানভীর হাসান সৈকতের নাম ঘোষণা করা হয়। তারা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এদিকে, চলতি বছরের ১৩ জুলাই ৩০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলেও এখনও ঢাবি কমিটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হয়নি।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা সাদ্দাম ও ইনানের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে ঢাবি ছাত্রলীগকে গুরুত্ব না দেওয়ায় মূলত এই টানাপোড়েন শুরু হয়। এছাড়াও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ছাত্রসমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখাকে গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির বিরুদ্ধে। ফলে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নিজেরদেরকে স্বতন্ত্রভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ও ঢাবি ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আজকের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এবং ঢাবি ছাত্রলীগের দ্বন্দ্ব এক দিনে তৈরি হয়নি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের ভালো পদ দেওয়া হয়নি। ছাত্রসমাবেশের প্রোগ্রামে ঢাবি ছাত্রলীগকে একপেশে করে রাখা হয়েছে। এছাড়াও ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বিভিন্ন সংঘর্ষের ঘটনায় বহিষ্কার এর ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে দলটির মধ্যে ‘সাংগঠনিক’ বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন তারা।  

শয়নের রহস্যময় ফেসবুক পোস্ট ও বাকি শীর্ষ নেতাদের শেয়ার
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে ইঙ্গিত করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শয়ন। পরে তার সেই স্ট্যাটাসটি শেয়ার দেন ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈকত, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজীবুল ইসলাম বাপ্পী ও সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ড। এছাড়াও শেয়ার দেন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছেন রিয়াজ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদও। 

সেই স্ট্যাটাসে শয়ন বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির কাজ কেন্দ্রীয় বিষায়াদি সম্পাদন করা, সারাদেশের ইউনিটগুলোর মাঝে সমন্বয় সাধন করা, কর্মসূচি প্রণয়ন করা ও  শৃঙ্খলা-গঠনতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করা। এর বাইরে ৩০০ জন কেন্দ্রীয় নেতা দ্বারা ব্যক্তিগতভাবে ৫ জন কর্মী সংগঠন করা বর্তমান কাঠামোতে সম্ভব না। ছাত্রলীগের প্রাণ হলো তৃণমূল তথা বিভিন্ন ইউনিট; যারা মাত্র কয়েকদিন আগেই সম্মিলিতভাবে লাখো কর্মীর সমাগম করে দেখিয়েছে। 

“এরাই সংগঠনের প্রাণ। এরা দামি ফ্ল্যাটে থাকেনা, দামি গাড়িতে ঘুরেনা। এরা নিজের পরিবারকে ঠকিয়ে, পেটে ক্ষুধা রেখে, টিউশনির টাকা জমিয়ে, ছেড়া স্যান্ডেল- ঘার্মাক্ত জামা পড়ে রাজপথে জীবন উৎসর্গ করার ব্রত নিয়ে সংগঠনকে টিকিয়ে রাখে।”

তিনি আরও লেখেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু তনয়া, আমাদের আশ্রয়স্থল দেশরত্ন শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সম্পাদকসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন। আমি নিশ্চিত বঙ্গবন্ধু তনয়ার হাতে সময় থাকলে সারা বাংলাদেশের সকল জেলা-উপজেলা কমিটি নিজ হাতে গঠন করতেন। ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ পদ থেকে তৃণমূলের সর্বশেষ কর্মীর এই বিষয়টি অনুধাবন করা উচিত। 

“আমরা অনেকেই প্রায়শ নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থের জন্য সংগঠনকে নিলামে তুলে ফেলি। আমাদের মনে রাখতে হবে, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের জীবনের কর্ম আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে । আমাদের মনে রাখতে হবে, ইতিহাস কখনো কাউকে ক্ষমা করেনা। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। জয় দেশরত্ন শেখ হাসিনা।”

ছাত্রসমাবেশে ঢাবি ছাত্রলীগ নেতাদের বক্তব্য দিতে না দেয়া
অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ১ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের ছাত্রসমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ বিভিন্ন সিদ্ধান্তে না রেখে একাই সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। আগস্টের প্রোগ্রাম হওয়া স্বত্বেও এতে ঢাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ ২ নেতাকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেইনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। যা অতীতের রেওয়াজ ভঙ্গ বলে মনে করেন ঢাবি ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে ঢাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার মধ্যেও।  

কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে শয়ন-সৈকতের অনুসারীদের পদবঞ্চিতের অভিযোগ 
চলতি বছর ১৩ জুলাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটিতে শয়ন-সৈকত কয়েকজনকে সুপারিশ করলেও ঢাবি সভাপতি শয়নের ২/৩ জনকে শুধু উপ-সম্পাদক পদ দেওয়া হয়। ঢাবি সাধারণ সম্পাদক সৈকতের শুধু একজনকে পূর্ণাঙ্গ সম্পাদক দেওয়া হয় অন্যদের সহ-সম্পাদক। যা অতীতের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় কমিটির রেওয়াজ ভঙ্গ বলে মনে হয়। কারণ এই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঢাবি শীর্ষ নেতৃত্বের অনুসারীদের পদায়ন করার রেওয়াজ রয়েছে। সেই কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়ে ঢাবি ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা যায়।  

“এটা নিয়ে আমার তেমন কিছু বলার নেই। একটি সমাবেশকে সফল করতে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম, ত্যাগ করতে হয় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের এটা আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী আমাদের সবাইকে বড় মন নিয়ে রাজনীতি করতে বলেছেন তাই আমাদের সেন্ট্রাল থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রতি সংকীর্ণমনা হলে চলবে না-শয়ন, সভাপতি, ঢাবি ছাত্রলীগ

সাত কলেজকে ঢাবি শাখার অধীনে নিয়ে আসার তৎপরতা ভালো চোখে নেয়নি কেন্দ্রীয় কমিটি 
গত ১৭ জুলাই ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত। এরপরই আলোচনা উঠে সংগঠনের সাত কলেজ শাখার নিয়ন্ত্রণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হাতে যাওয়ার খবর। যা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ভালোভাবে নেয়নি। তার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে তবে এক দিন পরই কলেজ ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের থেকে বায়োডাটা আহ্বান করে সে আলোচনায় থামিয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত বিষয়টির মীমাংসা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সম্প্রতি মারধরের শিকার হয়ে ও  বহিষ্কারের শিকার হয় সৈকত ও শয়নের অনুসারীরা
গত ২৪ জুলাই রোকেয়া হলের একটি কক্ষ থেকে আয়েশা সিদ্দিকা রুপা হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী এক নেতাকে মারধর করে বের করে দেয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হল ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকা বিনতে হোসেন ও তার অনুসারীরা। মারধরে নেতৃত্ব দেওয়া আতিকা বিনতে হোসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের ‘মাইম্যান’ হিসেবে পরিচিত। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এই কমিটিতে ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আতিকা বিনতে হোসেনকে প্রধান  রাখা হয়েছে। এতে সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। 

“দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এমন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করাটা অত্যন্ত বিব্রতকর ও দুঃখজনক। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি এবং ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি সবাইকে অনুরোধ করবো সবাই যেনো আরও দায়িত্বশীল আচরণ করেন এবং সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখেতে ভূমিকা পালন করেন-ইনান, সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ

তাছাড়া গত ৬ ফেব্রুয়ারি ফজলুল হক মুসলিম হলের কক্ষ দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারীদের সঙ্গে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সে ঘটনায় বহিষ্কৃত বেশির ভাগ তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী বলে জানা যায়। যা নিয়ে ঢাবি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। 

বিকেন্দ্রীকরণ চায় ঢাবি ছাত্রলীগ 
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ হস্তক্ষেপমুক্ত ঢাবি ক্যাম্পাস চায় ঢাবি ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের রেওয়াজ অনুযায়ী হল কমিটির সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে হলের অনেকগুলো পদ ছেড়ে দিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ এর সময় ও অনেক পদ ছেড়ে দিতে হয়। এর বিকেন্দ্রীকরণ চায় ঢাবি ছাত্রলীগ। সাংগঠনিক পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা চায়। ঢাবির কমিটিগুলো তারা চায়। 

যা বলছেন নেতারা
কেন্দ্রের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বন্দ্বের বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এটা নিয়ে আমার তেমন কিছু বলার নেই। একটি সমাবেশকে সফল করতে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম, ত্যাগ করতে হয় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের এটা আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী আমাদের সবাইকে বড় মন নিয়ে রাজনীতি করতে বলেছেন তাই আমাদের সেন্ট্রাল থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রতি সংকীর্ণমনা হলে চলবে না।

ফেসবুকে পোস্ট শেয়ারের বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, আমি শয়ন ভাইয়ের একজন রানিং মেট হিসেবে পোস্ট শেয়ার দিয়েছি। ভাইয়ের কথাগুলো আমার ভালো লেগেছে তাই শেয়ার করা। তিনি কি উদ্দেশ্য নিয়ে পোস্ট করেছেন সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন।

তিনি কি উদ্দেশ্যে পোস্টটি শেয়ার করেছেন জানতে চাইলে সৈকত বলেন, সংগঠনকে পরিচালনা করতে বা যেকোনো কার্যক্রম সফল করতে সবচেয়ে কষ্ট করতে হয় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। আমাদের তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে তাদের দিকে মনোযোগী হতে হবে। দেশের অনেক উপজেলা ইউনিয়নে আমাদের কমিটি নেই এটা খেয়াল রাখতে হবে। সাত কলেজ হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। আমাদের রাজনীতির সাথে সাত কলেজের রাজনীতির সবদিক থেকে মিল রয়েছে সুতরাং তাদের ঢাবির সাথে রাজনীতিতে থাকার কথা। তারা ঢাবির সাথে থেকে রাজনীতি করতে ঢাবির কালচারটা তাদের মধ্যে তৈরি হবে। আমরা চাই ঢাবি যেমন শৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে তারাও (সাত কলেজ) একটা শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরে আসুক। তবে তিনিও সভাপতি শয়নের মতো কেন্দ্রের সঙ্গে তাদের বিরোধের বিষয়টি নিয়ে এড়িয়ে যান।

সার্বিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন যে পোস্ট ফেসবুকে দিয়েছেন বা অন্যরা শেয়ার করেছেন সেটা কারো বিরুদ্ধে বা সাংঘর্ষিক কিনা আমার জানা নেই। তবে আমি বিশ্বাস করি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নাম্বার ইউনিট ঢাবির সভাপতি হিসেবে শয়ন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন।

সাত কলেজের দ্বন্দ্বের ব্যাপারে তিনি বলেন, সাত কলেজ বরাবরই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ইউনিট হিসেবে ছিলো এখনো আছে। সবসময়ই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তাদের কমিটি দিয়ে থাকে এবারও সেটার ব্যাতিক্রম হবে না এবং সেটার কোন সম্ভাবনাও নেই। 

ছাত্রসমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ব্যাতিত কাউকে বক্তব্য দিতে দেওয়া হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১০ লাখ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে আমরা যেই ছাত্র সমাবেশ করেছি সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সময় স্বল্পতার জন্য আমরা কাউকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দিতে পারিনি। এটা সকলের বুঝা উচিত এবং এটা নিয়ে কোনো মনোমালিন্যেরও সুযোগ নেই। 

জেলা সমপর্যায়ের ইউনিটগুলোতে কমিটি দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ঢাবি সম্পাদক সৈকত, এ বিষয়ে তিনি বলেন, করোনা সময়ে দেশের বিভিন্ন ইউনিটে তেমন কাজ হয়নি। তাছাড়া ছাত্রলীগের সম্মেলনও হয়েছে বেশ দেরিতে সেজন্য আমাদের কমিটি দিতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবুও আমরা ইতিমধ্যে ৮টি কমিটির কাজ সম্পাদন করেছি। বাকিগুলোর কাজও চলমান রয়েছে। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি এবং খুব শীঘ্রই এটার সমাধান করা হবে।

এসময় তিনি সকল নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এমন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করাটা অত্যন্ত বিব্রতকর ও দুঃখজনক। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি এবং ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি সবাইকে অনুরোধ করবো সবাই যেনো আরও দায়িত্বশীল আচরণ করেন এবং সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখেতে ভূমিকা পালন করেন।


সর্বশেষ সংবাদ