ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ

১৪ জনের কপাল খুললেও খোলেনি জান্নাতুল-বৈশাখির

জান্নাতুল ফেরদৌস ও সামিয়া আক্তার বৈশাখি
জান্নাতুল ফেরদৌস ও সামিয়া আক্তার বৈশাখি  © টিডিসি ফটো

ইডেন মহিলা কলেজে শাখা ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ১৬ নেতাকর্মীকে বহিষ্কারের প্রায় দুই মাস পর ১৪ জনের বহিষ্কারাদেশ তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস ও সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখির বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়নি।

ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। একইসঙ্গে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ১৬ জনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এরপর শুরুতে গত ৯ নভেম্বর শাখা ছাত্রলীগের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার ও পরে ২৩ নভেম্বর ১৪ নেত্রীর বহিষ্কারাদেশও প্রত্যাহার করে নেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

১৪ জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ জানিয়েছে, নিজ আবেদনের প্রেক্ষিতে ইডেন মহিলা কলেজ শাখার সহ সভাপতি সোনালি আক্তার, সুস্মিতা বাড়ৈ, জেবুন্নাহার শিলা, কল্পনা বেগম, আফরোজা রশ্মি, মারজানা উর্মি, সানজিদা পারভীন চৌধুরী, এস এম মিলি, সাদিয়া জাহান সাথী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা খানম বিন্তি এবং কর্মী রাফিয়া নীলা, নোশিন শার্মিলী, জান্নাতুল লিমা, সূচনা আক্তারের উপর আরোপিত বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হলো।

আরও পড়ুন: ইডেন ছাত্রলীগ সভাপতির পর ঢাকা মেডিকেলে সম্পাদক রাজিয়া

সাংগঠনিক ‘শৃঙ্খলা ভঙ্গের’ দায়ে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের ওই ১৬ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ওই সময় জানানো হয়েছিল। শুরুর দিকে এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিলেও এখন বেশ অনুতপ্ত বহিষ্কারদেশ প্রত্যাহার না হওয়া দুই নেত্রী জান্নাতুল ও বৈশাখি।

বহিষ্কারদেশ প্রত্যাহার না সহ সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস ও সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখি বাকি ১৪ জনের মত নিজেদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের প্রহর গুনছেন বলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন। তাদের আশা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির দায়িত্ব শেষ হওয়ার আগেই তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হবে।

এ বিষয়ে বহিষ্কৃত সহ সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শাখা ছাত্রলীগের ১৬ জন নেতাকর্মীর উপর থেকে বহিষ্কারাদেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তুলে নেওয়ার সময় তোলা হলো ১৪ জনের উপর থেকে। আমি এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখির উপর বহিষ্কারাদেশ বহাল রয়েছে। সবার বহিষ্কারাদেশ  প্রত্যাহার হলেও আমাদের কেন হলো না এটা জয় ভাই আর লেখক দাদাই বলতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ যেটি ভালো মনে করেছে সেটিই করেছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। এছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এ কমিটির মেয়াদও প্রায় শেষ। তাদের যাওয়ার আগে তারা যদি মনে করেন, আমাদের উপর থেকেও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিৎ তাহলে তারা সেটি করে যাবেন। তারা কি সিদ্ধান্ত দেন; আমরা সেটির অপেক্ষায় রয়েছি। আমাদের বহিষ্কারাদেশ বহাল থাকায় ছাত্রলীগের কোনো কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছি না।

অপর বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখি বলেন, আমরা ভুল করেছি। বাকিদের তুলনায় আমাদের ভুলটা বেশি হওয়ায় হয়তো আমাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমরা একটা দলের সঙ্গে রয়েছি। আমরা ভুল করায় দল আমাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে। আমরা সংগঠনের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তারা আমাদের বিষয়টি দেখছেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।

ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সাংগঠনিক দায়িত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি তিলোত্তমা শিকদার। এ দুই নেত্রীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে ১৪ জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকে নিজ থেকে আবেদন করেছেন। নিজেদের ভুল শিকার করে আবেদনের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া বাকি দুজনের আবেদন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ পায়নি। সেজন্য হয়তো তাদের বিষয়ে পূর্বের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। প্রয়োজন সাপেক্ষে তাদের বিষয়েও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সিদ্ধান্ত দিতে পারেন।

ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও এ বিষয়ে তাদের কোনো মতামত পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন: সংবাদ সম্মেলনেই ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের দুপক্ষে সংঘর্ষ

উল্লেখ্য, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। যা এক পর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়। বিবাদমান দুই গ্রুপ পরষ্পরের বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ জানায় সংবাদমাধ্যমে।

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। একইসঙ্গে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ১৬ জনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃতদের (১৬ জন) মধ্যে ছিলেন- সহ সভাপতি সোনালি আক্তার, সুস্মিতা বাড়ৈ, জেবুন্নাহার শিলা, কল্পনা বেগম, জান্নাতুল ফেরদৌস, আফরোজা রশ্মি, মারজানা উর্মি, সানজিদা পারভীন চৌধুরী, এস এম মিলি, সাদিয়া জাহান সাথী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা খানম বিন্তি ও সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখি এবং কর্মী রাফিয়া নীলা, নোশিন শার্মিলী, জান্নাতুল লিমা, সূচনা আক্তার।

গত ৯ নভেম্বর ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার ও পরে ২৩ নভেম্বর বহিষ্কৃত ১৬ নেত্রীর মধ্যে ১৪ জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।


সর্বশেষ সংবাদ